গতকাল (২৪ মে) তেল আবিবে আয়োজিত বিক্ষোভ–সমাবেশে বক্তব্য দেন, আইনাভ জাংগাউকার। তিনি গাজায় জিম্মি মতান জাংগাউকারের মা।
সমাবেশে নেতানিয়াহুকে সরাসরি উদ্দেশ করে আইনাভ বলেন, ‘বলুন তো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কীভাবে রাতে ঘুমাতে যেতে ও সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারছেন?
আপনি ৫৮ জন জিম্মিকে অবহেলায় ফেলে রেখেছেন—এমনটা জেনেও কীভাবে আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখেন?’
সাম্প্রতিককালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গাজায় জিম্মি থাকা ইসরায়েলিদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষোভ আরও জোরালো হয়ে উঠেছে।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের স্থল অভিযান ও প্রাণঘাতী বোমা হামলায় তাদের প্রিয়জনদের মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি চরম ঝুঁকিতে পড়ায় নেতানিয়াহুর সমালোচনা করছেন তারা।গতকাল শনিবার তেল আবিব, শার হানেগেভ জংশন, কিরইয়াত গাত ও জেরুজালেমের রাস্তায় নেমে আসেন বিক্ষোভকারীরা।
‘হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম’-এর সদস্যরা অভিযোগ করেন, ইসরায়েল সরকার তাদের প্রিয়জনদের নিরাপদে দেশে ফেরানোর চেয়ে যুদ্ধকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
এদিন এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘আমাদের দাবি, নীতিনির্ধারকেরা যেন অবিলম্বে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসেন এবং একটি চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত সেই আলোচনা চালিয়ে যান, যেন আমাদের সব প্রিয়জনকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনা যায়।’
বিক্ষোভকারীদের হাতে থাকা ব্যানারে লেখা ছিল, ‘লড়াই জিম্মিদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
উল্লেখ্য, গত কয়েক দিনে ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবারের মধ্যে ক্ষোভ আরও বেড়েছে।
বিশেষ করে নেতানিয়াহু দেশটির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের নতুন প্রধান হিসেবে মেজর জেনারেল ডেভিড জিনিকে মনোনীত করায় তারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
ইসরায়েলের চ্যানেল টুয়েলভের প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেভিড জিনি জিম্মিমুক্তি–সংক্রান্ত যেকোনো চুক্তির বিরোধিতা করেছেন। ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেছেন, ‘আমি জিম্মিমুক্তি চুক্তির বিপক্ষে। এটি (গাজা যুদ্ধ) একটি চিরন্তন যুদ্ধ।’
গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে ফোরাম বলেছে, ‘অপহৃত ব্যক্তিদের পরিবার মেজর জেনারেল জিনির বক্তব্যে ক্ষুব্ধ। যদি এ তথ্য (তার বক্তব্য) সত্য হয়, তবে এটি অত্যন্ত উদ্বেগের ও নিন্দনীয়।
কারণ, এমন একজন ব্যক্তি কথাগুলো বলেছেন, যিনি অপহৃত পুরুষ ও নারীদের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন।’
সংগঠনটি আরও বলেছে, অপহৃত ব্যক্তিদের উদ্ধারের চেয়ে নেতানিয়াহুর যুদ্ধকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন—এমন এক ব্যক্তিকে শিন বেতের প্রধান নিয়োগ দেওয়ার মানে পুরো ইসরায়েল জাতির সঙ্গে অন্যায় ও একধরনের অপরাধ সংঘটন করা।
জর্ডানের আম্মান থেকে আল–জাজিরার প্রতিবেদক হামদা সালহুত বলেন, ‘নেতানিয়াহুর নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি গাজায় আরও সামরিক চাপ ও যুদ্ধের মাত্রা বাড়াতে চান। আর এ কারণেই তাঁকে বেছে নেওয়া হয়েছে।’
এই প্রতিবেদক আরও বলেন, গাজায় অবরোধ তুলে নেওয়া, যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ করা ও সামরিক অভিযানের সম্প্রসারণ থামানোর জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরে নেতানিয়াহুর ওপর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে।
ইতিমধ্যে ইসরায়েল সেনাবাহিনী বলেছে, যেসব ব্রিগেডকে ডাকা হয়েছিল, তারা এখন গাজার ভেতর অভিযান চালাচ্ছে।
জিম্মিদের পরিবারগুলোর বক্তব্য, এই জোরালো হামলা অব্যাহত থাকলে বেঁচে থাকা জিম্মিরাও প্রাণ হারাবেন।
তবে নেতানিয়াহু এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ডানপন্থী সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নেতানিয়াহু সরকারের বড় অংশই যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে এবং তারা এই যুদ্ধের অবসান চায় না।
ইসরায়েলের সর্বোচ্চ আদালত বিদায়ী শিন বেতপ্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করার চেষ্টা ‘অবৈধ’ বলে রায় দেওয়ার ঠিক এক দিন পর নেতানিয়াহু মেজর জেনারেল জিনিকে সংস্থাটির প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দেন।
আদালত বলেছেন, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলার সঙ্গে স্বার্থের সংঘাত আছে। তাই বরখাস্তের সিদ্ধান্ত আইনসিদ্ধ নয়।
আদালতের এ রায়ের পরও নেতানিয়াহু জিনিকে নিয়োগের পথেই হেঁটেছেন।
এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল সতর্ক করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আইনগত পরামর্শ উপেক্ষা ও পুরো নিয়োগপ্রক্রিয়াকে কলুষিত করেছেন।