নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ে কারখানার জাদুঘরে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় স্টিম লোকোমোটিভ, ব্রডগেজ, মিটারগেজ ও ন্যারো-গেজ ইঞ্জিন, পুরোনো রেল প্রযুক্তির যন্ত্রাংশসহ অসংখ্য ঐতিহাসিক উপকরণ। আর এ জাদুঘরে সংগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এক অসাধারণ আকর্ষণ ব্রিটিশ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ব্যবহৃত বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সি কোচ।
১৯২৭ সালে লন্ডনে নির্মিত এই ঐতিহাসিক কাঠের কোচে ছিল সে সময়ের আধুনিকতম সব সুযোগ-সুবিধা। এর মধ্যে ছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, গরম পানির বাথটাবসহ রাজকীয় আরাম-আয়েশের সব আয়োজন। রানী এলিজাবেথের পর এই কোচটি ব্যবহার করেছেন পাকিস্তান আমলের গভর্নর এবং স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিরাও। কাঠের বিলাসবহুল রেলওয়ে প্রেসিডেন্ট সেলুন কোচে ভারতবর্ষ ভ্রমণ করেছিলেন ব্রিটিশ রানি এলিজাবেথ।
এই জাদুঘরে শতাব্দী পেরিয়ে আসা রেল ঐতিহ্যের এসব জীবন্ত নিদর্শন নিয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ভেতরে গড়ে তোলা হয়েছে এক অনন্য সংগ্রহশালা। যা’ আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় ব্রিটিশ আমলের রেলযুগে।
ক্যারেজ শপের ইনচার্জ মোমিনুল ইসলাম জানান, জাদুঘরের সংগ্রহশালার প্রতিটিতে ইতিহাস জড়িয়ে আছে। এমন দুর্লভ নিদর্শন আমাদের ঐতিহ্যের গৌরব বহন করে চলেছে। জাদুঘরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে নানা আকৃতির ও প্রকারের রেল ইঞ্জিন। কোনটি কয়লা চালিত স্টিম ইঞ্জিন, আবার কোনটি ডিজেল চালিত। সবকটিই যেন রেল প্রযুক্তির বিবর্তনের সাক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
জাদুঘরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জানান, তখনকার যুগে এই অঞ্চলটি রেলওয়ে যোগাযোগে কতটা সমৃদ্ধ ছিল তা’ নতুন প্রজন্ম সহজেই জানতে পারবে। এই জাদুঘর হবে তাদের শেখার এক অপার ক্ষেত্র। তবে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাটি একটি কেপিআই এলাকা হওয়ায় অনুমতি ব্যতীত সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য এই সংগ্রহশালা এখনও উন্মুক্ত নয়।
কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক শাহ সুফি নুর মোহাম্মদ জানান, অচিরেই কেপিআই এলাকার বাইরে একটি উন্মুক্ত রেল জাদুঘর নির্মাণ করা হবে, যেখানে স্থানীয় জনগণ থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও সহজেই ঘুরে দেখতে পারবেন দেশের রেল ইতিহাসের অমূল্য এই ধন-ভান্ডার।