বুধবার, ২৮ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পানিচুক্তি স্থগিত ইস্যুত : ভারতকে কঠোর হুঁশিয়ারি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ২৬ মে ২০২৫, ১৩:১৬
আপডেট  : ২৬ মে ২০২৫, ১৩:৪৭
পানিচুক্তি স্থগিত ইস্যুত : ভারতকে কঠোর হুঁশিয়ারি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী- ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তান জাতির ঐক্য, শক্তি ও শান্তির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে ভারতকে আবারও ‘কঠোর হুঁশিয়ারি’ দিয়েছেন দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী।

ভারত যদি ভবিষ্যতে কোনো ধরনের ‘দুঃসাহসিকতা’ থেকে বিরত না থাকে তাহলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

1

দ্য, ডন, সামা টিভি : পাকিস্তান জাতির ঐক্য, শক্তি ও শান্তির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে ভারতকে আবারও ‘কঠোর হুঁশিয়ারি’ দিয়েছেন দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী।

ভারত যদি ভবিষ্যতে কোনো ধরনের ‘দুঃসাহসিকতা’ থেকে বিরত না থাকে তাহলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।

পাকিস্তান আইএসপিআর-এর ডিজি বলেন, ‘ভারত ভেবেছিল, তারা আঘাত করবে আর পাকিস্তান চুপ থাকবে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তান এক লৌহদৃঢ় প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়েছিল এবং ভারতের কৌশলের একের পর এক ত্রুটি উন্মোচন করেছিল’।

ভেতরের বিভাজনের ধারণা নাকচ করে দিয়ে আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, ‘তারা মনে করেছিল পাকিস্তানের জনগণ ও সেনাবাহিনী বিভক্ত কিন্তু এটা ভুল ধরণা, পাকিস্তান কখনোই বিভক্ত নয়। এই জাতি ও সেনাবাহিনী সবসময়ই একত্রিত ছিল’।

ভারতের আগ্রাসনের জবাবে পাকিস্তানের পরিকল্পিত প্রতিক্রিয়ার বিবরণ দিতে গিয়ে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ভারতের ২৬টি স্থানে জবাব দেওয়া হবে’।

একটি বিশেষ ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মুজাফফরাবাদে যখন সাত বছর বয়সি ইর্তিজা ভারতীয় ব্রিগেড সদর দপ্তরের নির্দেশে গোলাবর্ষণে শহিদ হয়, তখন আমরা ওই ব্রিগেড সদর দপ্তর ধ্বংস করে দেই’।

ভারতের বিমান হামলার প্রসঙ্গ টেনে আহমেদ শরীফ বলেন, ‘৬ ও ৭ তারিখে ভারতের বিভিন্ন বিমান ঘাঁটি থেকে জেট উড়ে এসে পাকিস্তানি শিশুদের লক্ষ্যবস্তু করেÍ আমরা সেই বিমান ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করে জবাব দিয়েছি’।

ভারত হামলা চালিয়ে আজাদ কাশ্মীরের বহু সংখ্যক মসজিদ-মাদ্রাসা ও ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস করে দেয়। তবে পাকিস্তান কোনো বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়নি।

এ বিষয়ে তিনি জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান কখনোই বেসামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে আঘাত করেনি। তার ভাষায়, ‘আমাদের বাহিনী কি কোনো মন্দির, জনবসতি বা বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা করেছে? না। আমরা শান্তিপ্রিয়, শান্তিকেই অগ্রাধিকার দেই’।

এরপরই তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যদি ভারত আবার সেই একই ভুল করে, তাহলে আমাদের জবাব আরও কঠোর হবে’।

আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পাক আইএসপিআর ডিজি দাবি করেন, ‘পাকিস্তানে প্রতিটি সন্ত্রাসী হামলার পেছনে ভারতের চেহারা স্পষ্ট’।

তিনি বলেন, ‘যারা মসজিদে বোমা ফেলে, নিরীহ মানুষ হত্যা করেÍ তাদের ইসলাম বা খাইবার পাখতুনখোয়ার গৌরবময় ঐতিহ্যের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। এরা ভারতের অনুসারী, সন্ত্রাসী’।

চরমপন্থি মতাদর্শের সমালোচনা করে আহমেদ শরীফ বলেন, ‘যখন খারিজি (সন্ত্রাসী) নেতারা বলেনÍ শরীয়াহ নাকি অমুসলিমদের সাহায্য নিতে অনুমতি দেয়Í আসলে তারা এটা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। ইসলাম কখনো সত্য ও মিথ্যার সহাবস্থানে বিশ্বাস করে না। ইসলাম ও এই খারিজিরা একসঙ্গে চলতে পারে না’।

তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা ভারতের কাছে সাহায্য চাও Íএটা সেই দেশ, যারা কাশ্মীরি নারীদের মর্যাদা লঙ্ঘন করে। তোমাদের লজ্জা হওয়া উচিত’।

পাকিস্তান আইএসপিআর প্রধান এ সময় আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপরও গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘আফগানিস্তান আমাদের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ মুসলিম প্রতিবেশী। পশতুন ভাই আমাদেরই ভাই। সমস্যা সেই অভিজাতদের নিয়ে, যারা ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে’।

আফগান জনগণের উদ্দেশে তিনি আহ্বান জানান, ‘আমাদের আফগান ভাইদের বলিÍ সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিও না। ভারতের নীতির হাতিয়ার হয়ো না’।

সবশেষে খাইবার পাখতুনখোয়ার জনগণের উদ্দেশ্যে সেনা মুখপাত্র বলেন, ‘খাইবার পাখতুনখোয়ার সাহসী জনগণ ও গোত্রবাসীদের বলছি সময় এসেছে আবার বলার, কাশ্মীর হবে পাকিস্তানের’।

ভারত সিন্ধু নদের পানি চুক্তি স্থগিত করায় উভয় দেশের সম্পর্কে এখনও উত্তাপ বজায় রয়েছে এবং উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে উত্তপ্ত মন্তব্য করছে। এমন অবস্থায় পানি চুক্তি স্থগিতে জাতিসংঘে ভারতকে তুলোধুনো করেছে পাকিস্তান।

দেশটি বলেছে, ভারতের পানিবিষয়ক পদক্ষেপে বিপদে পড়েছে কোটি কোটি মানুষ। এমনকি এটিকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের হিসেবেও উল্লেখ করে ইসলামাবাদ। গতকাল রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি ২৪ কোটি মানুষের অস্তিত্বের জন্য হুমকি তৈরি করেছে বলে জাতিসংঘকে সতর্ক করেছে পাকিস্তান।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘে ‘সশস্ত্র সংঘাতে পানিসম্পদ সুরক্ষা’ বিষয়ে আয়োজিত এক বৈঠকে পাকিস্তান এই উদ্বেগ জানায়। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানায়, যেন এমন পদক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় বা আঞ্চলিক অস্থিরতার দিকে না ঠেলে দেয়, সে বিষয়ে আগাম ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

জাতিসংঘে পাকিস্তানের ডেপুটি স্থায়ী প্রতিনিধি উসমান জাদুন বলেন, “এটি আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার আইন, চুক্তির আইন এবং রীতিনীতিভিত্তিক আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন।”

তিনি বলেন, “আমরা ভারতের এই বেআইনি ঘোষণা Í সিন্ধু চুক্তিকে কার্যত স্থগিত করার Í তীব্র নিন্দা করছি। আমরা ভারতের কাছে জোর দাবি জানাই, তারা যেন আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে চলে এবং পাকিস্তানের জন্য জীবনরেখাসম এই নদীগুলোর পানির প্রবাহ থামানো, ঘুরিয়ে দেওয়া বা বাধা দেওয়ার মতো কোনও পদক্ষেপ না নেয়। পাকিস্তান এ ধরনের কোনও পদক্ষেপ কখনোই মেনে নেবে না।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বের কিছু মন্তব্য উদ্বেগজনক। উদাহরণস্বরূপ, ‘পাকিস্তানিদের না খাইয়ে মারার’ মতো মন্তব্য ‘বিকৃত ও বিপজ্জনক মানসিকতা’র পরিচায়ক।

এছাড়া জাতিসংঘের এই প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে পাকিস্তান বিশ্বজুড়ে একটি ঐকমত্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে কোনো দেশ পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে।

উসমান জাদুন নিরাপত্তা পরিষদকে এই ইস্যুতে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উচিত এমন পরিস্থিতিগুলোর ওপর নজর রাখা, যেখানে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের মাধ্যমে শান্তি ও নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে বা মানবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।”

মূলত পাকিস্তানের এদিনের বক্তব্যে তিনটি বিষয় বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়। সেগুলো হচ্ছেÍ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুসারে, পানি সম্পদ বা এর পরিকাঠামোতে আক্রমণ নিষিদ্ধ এবং পানি সরবরাহ বন্ধ করা আন্তর্জাতিক রীতিনীতির পরিপন্থি। সব পক্ষকে এমন সব পদক্ষেপ এড়িয়ে চলতে হবে, যা মানবিক বিপর্যয় ঘটাতে পারে। পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করাটা গ্রহণযোগ্য নয় এবং এর ফলে অঞ্চলজুড়ে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়।

উসমান জাদুন বলেন, “এটা দুঃখজনক যেÍ একটি দেশ পানিকে এখন কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে