বিশ্বের প্রায় ৭০০ কোটি বা ৮৫ শতাংশ মানুষের সম্পূর্ণ নাগরিক অধিকার একেবারেই নেই বলে সম্প্রতি এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
গতকাল সোমবার জার্মান ত্রাণ সংস্থা ব্রোট ফ্যুয়ার ডি ভেল্ট (বিশ্বের জন্য রুটি) প্রকাশিত ‘সিভিল সোসাইটি অ্যাটলাস’ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আলজাজিরার তথ্য নিয়ে সংবাদটি প্রকাশ করেছে প্রথম আলো।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের মাত্র ৪০টি দেশ সব ধরনের নাগরিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই হার মোট বৈশ্বিক জনসংখ্যার মাত্র ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে সতর্ক করা হয়েছে যে ‘বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র ও মানবাধিকার এমনভাবে আক্রান্ত হচ্ছে, যা আমরা গত কয়েক দশকে দেখিনি।’
জার্মান ত্রাণ সংস্থা ব্রোট ফ্যুয়ার ডি ভেল্ট (বিশ্বের জন্য রুটি) প্রকাশিত ‘সিভিল সোসাইটি অ্যাটলাস’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ট্রিয়া, এস্তোনিয়া, স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশ এবং নিউজিল্যান্ড ও জ্যামাইকার মতো ‘ওপেন’ বা ‘মুক্ত’ দেশগুলোতে বসবাসকারী মাত্র ২৮ কোটি ৪০ লাখ মানুষ অবাধ নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতার সুরক্ষা ভোগ করেন।
বেসরকারি সংস্থাটি মুক্ত দেশ বলতে বুঝিয়েছে, যেসব দেশে মানুষ ‘আইনি বা বাস্তব কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই সংঘ গঠন করতে পারে, জনসমক্ষে প্রতিবাদ জানাতে পারে, তথ্য পেতে ও তা প্রচার করতে পারে।’
অন্যদিকে ৪২টি দেশকে (বৈশ্বিক জনসংখ্যার ১১ দশমিক ১ শতাংশ) দ্বিতীয় শ্রেণিতে রাখা হয়েছে। এসব দেশে নাগরিক অধিকারকে ‘বাধাগ্রস্ত’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে জার্মানি, স্লোভাকিয়া, আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাষ্ট্র।
এসব দেশে সভা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার মোটামুটি শ্রদ্ধার সঙ্গে মানা হয়। তবে সেখানে এসব অধিকারের লঙ্ঘনের প্রমাণও রয়েছে।
এর বিপরীতে বিশ্বের প্রায় ৭০০ কোটি বা ৮৫ শতাংশ মানুষ এমন সব দেশে বাস করেন, যেখানে নাগরিক অধিকার সীমাবদ্ধ, অবদমিত কিংবা একেবারেই নেই বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘এসব দেশের সরকার নাগরিক স্বাধীনতাকে কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ করে এবং সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বরকে হয়রানি, গ্রেপ্তার বা হত্যা করে। ১৯৭টি দেশের মধ্যে ১১৫টির ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য।’ এই শ্রেণিতে গ্রিস, যুক্তরাজ্য, হাঙ্গেরি, ইউক্রেনসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ রয়েছে।
অন্যদিকে ৫১টি দেশে নাগরিক অধিকার অবদমিত বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে আছে আলজেরিয়া, মেক্সিকো ও তুরস্ক। এসব দেশের সরকার সমালোচকদের নজরদারি করে, কারাবন্দী করে হত্যা করে এবং নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে।
এ ছাড়া রাশিয়াসহ ২৮টি দেশকে এমন শ্রেণিতে রাখা হয়েছে, যেখানে নাগরিক অধিকার একেবারেই নেই। দেশগুলোর পরিবেশকে ‘ভীতিকর পরিবেশ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব দেশের সরকার বা শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করা হলে কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়।
ব্রোট ফ্যুয়ার ডি ভেল্ট তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনের জন্য বিশ্বজুড়ে নাগরিক সমাজের সংগঠন সিভিকাস নেটওয়ার্ক থেকে সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করেছে, যা ১৯৭টি দেশ ও অঞ্চলের ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
গত বছর মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে নয়টি দেশের অগ্রগতি হয়েছে। এগুলো হলো জ্যামাইকা, জাপান, স্লোভেনিয়া, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, বতসোয়ানা, ফিজি, লাইবেরিয়া, পোল্যান্ড ও বাংলাদেশ।
তবে আগের বছরের তুলনায় নয়টি দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কমেছে। এগুলো হলো জর্জিয়া, বুরকিনা ফাসো, কেনিয়া, পেরু, ইথিওপিয়া, ইসোয়াতিনি, নেদারল্যান্ডস, মঙ্গোলিয়া ও ফিলিস্তিন।
ব্রোট ফ্যুয়ার ডি ভেল্টের সভাপতি ডাগমার প্রুইন সতর্ক করে বলেছেন, আইনের শাসন, ক্ষমতার বিভাজন এবং রাষ্ট্রের মনমতো আচরণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা হুমকির মুখে পড়েছে কিংবা একেবারেই নেই—এমন দেশের সংখ্যা অব্যাহতভাবে বাড়ছে।