শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কামারশালায় ক্রেতা নেই, ছুরি-দা’র পসরা দাঁত কেলিয়ে হাসছে

স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল
  ০৫ জুন ২০২৫, ১৪:২৬
আপডেট  : ০৫ জুন ২০২৫, ১৪:৩৩
কামারশালায় ক্রেতা নেই, ছুরি-দা’র পসরা দাঁত কেলিয়ে হাসছে
যায়যায়দিন

আর মাত্র একদিন পরই মুসলমানদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা। এ উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কোরবানির পশু কিনতে বিভিন্ন হাটে হাটে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন।

অন্যদিকে, কোরবানির পশু জবাই ও মাংস বানানোর জন্য বিভিন্ন সরঞ্জামাদি বানাতে ও কিনতে ছুটছেন কামারের দোকানগুলোতে। তবে এবার আশানুরূপ ক্রেতার দেখা মিলছে না। দোকানগুলোতে ছুরি, দা, বটি ইত্যাদি পণ্য নিয়ে বসেছেন কামাররা।

1

সরেজমিনে টাঙ্গাইল পার্ক বাজারের কামারের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, দা, বটি, চাপাতি, ছুরি, দেশি কুঠার, চাইনিজ কুড়াল সহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদির পসরা সাজিয়ে বসে আছেন কামাররা। ঈদের আর মাত্র একদিন বাকি থাকলেও আগের মতো জমে উঠেনি বিকিকিনি।

কামার শিল্পীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, দা ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, বটি ৯০০ থেকে হাজারের উপরে, পশু জবাই করার ছুরি ৮০০ থেকে দেড় হাজার টাকা, চাইনিজ কুড়াল ৮০০, দেশিও কুঠার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন তারা।

তারা জানায়, কামাররা প্রায় সবাই পৈত্রিক সুত্রে এ পেশা পেয়েছেন। তাই এ পেশাকে তারা ঐতিহ্য হিসাবে ধরে রাখছেন।

কামার সত্যরঞ্জন দাস ও উদয় সরকার জানান, তাঁরা ৪০ বছর ধরে এই পেশার সাথে জড়িত। আগের মতো আর তেমন কাজ নেই। এখন তাদের এ পেশায় নুন আনতে পানতা ফুরানোর অবস্থা। সারা বছর কাজ না থাকায় মুসলমানদের ধর্মীয় এ উৎসবের অপেক্ষায় থাকেন। তাতে কিছুটা হলেও পুষিয়ে উঠা যায়। বাপ-দাদার পেশা, এ পেশায় জীবন বাঁচান, ছাড়তেও পারেন না। তারপরেও কয়লার দাম বেশি হওয়ায় তাদের পণ্য তৈরির খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এর সাথে কাজ করা লোক ও এখন আর পাওয়া যায় না, পরিশ্রম বেশি তাই এ পেশা থেকে লোক সরে যাচ্ছে। আগে কয়লা ও লোহার দাম কম ছিল তাই খাটা খাটনি করে ভালো দাম পাওয়া যেত। এখন তেমন টা হয় না।

তারা আরও জানান, বাপ-দাদার পৈত্তিক এই পেশায় জীবন বাঁচানো খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের জন্য সরকার কোনো উদ্যোগগ্রহণ করেনি। পেটের দায়ে পৈত্রিক পেশা ছেড়ে বাধ্য হয়ে অনেকেই এখন অন্য পেশায় ঝুঁকছেন।

টাঙ্গাইল পার্ক বাজারে জেলা সদর থেকে আসা ক্রেতা আব্দুর রহমান জানান, গরু কোরবানীর জন্য দা, ছুরি ও চাপাতির অর্ডার দিয়েছেন। ঈদের সময় দাম একটু বাড়ে বৈকি। কোরবানির পশু কিনতে যে সময় লাগে সরঞ্জামাদী দেখে-শুনে-বুঝে কিনতে তার চেয়ে বেশি সময় লাগছে। গতবারের তুলনায় এবার দাম একটু কম বলেই মনে হচ্ছে। এছাড়া এবার কামারের দোকানগুলোতে ভিরও নেই।

উল্লেখ্য, জেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে- এবার জেলায় দুই লাখ ১১ হাজার ৯৭৪টি কোরবানির পশুর চাহিদার বিপরীতে দুই লাখ ৩৬ হাজার ৯৭০টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে