বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

রাসূল (সা:) এর পারিবারিক জীবন

যাযািদি ডেস্ক
  ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:২৭
রাসূল (সা:) এর পারিবারিক জীবন

পারিবারিক জীবনে প্রবেশ করার মাধ্যমে মানুষের পূর্ণতা ঘটে। পারিবারিক জীবনের সূত্র ধরেই মানব জীবনের যাত্রা শুরু হয়।এ পরিবারের প্রথম বিন্যাস দিল স্বামী - স্ত্রী, সন্তান, মা, বাবা, ভাই-বোন নিয়ে পরিবার গঠিত।

প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) তাঁর গোটা জীবন উম্মতের জন্য আদর্শ। বাল্যকাল থেকেই তিনি সহিষ্ণুতা, ধৈর্য ও আত্মত্যাগের পূর্ণ আদর্শ ছিলেন।

২৫ বছর বয়সে রাসূল (সা:) খাদিজাতুল কোবরা (রা.) সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। খাদিজা (রা.) নিজের অর্থকে দ্বীন প্রচারের কাজে ব্যয় করে দেখিয়েছিলেন ত্যাগের উজ্জল মহিমা।

রাসূল (সা:) তার স্ত্রীদের কিরূপ ভালোবাসতেন তার প্রমাণ- তিনি সাহাবীদের লক্ষ্য করে একবার ইরশাদ করলেন, “তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে স্বীয় পত্নীর কাছে উত্তম। আর আমি আমার পত্নীদের কাছে তোমাদের সবার চেয়ে উত্তম।”

হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত - রাসূল (সা:) বলেছেন, চারটি সম্পদ যাকে দেয়া হয়েছে ইহজীবন ও পরজীবনের সমস্ত প্রকার মঙ্গলই সে লাভ করেছে।

‘আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হৃদয়, আল্লাহর নাম উচ্চারণে মুখের জিহবা, স্বাস্থ্যবান অটুট শরীর যাহা বিপদের মুখে ধৈর্যশীল ও স্থির থাকে, সতী-স্ত্রী যার দ্বারা স্বামীর কোন প্রকার আশঙ্কার কারণ না থাকে অথবা তাহার ধন সম্পত্তির কোন ক্ষতি না হয়।’

মুহাম্মদ (সা:) স্ত্রীদের গৃহস্থালি কাজে সহযোগীতা করতেন। বাহির থেকে এসে যদি দেখতেন রান্না তখনও বাকী, তবে রান্নার কাজে সহযোগীতা করতেন। আয়েশা (রা:) কে জিজ্ঞাস করা হয়- রাসূল (সা:) বাসগৃহে কি কাজ করতেন? আয়েশা বলেন- তিনি সাধারণত ঘরোয়া কাজে ব্যস্ত থাকতেন।

আর নামাজের সময় হলে উঠে নামাযে চলে যেতেন। তিনি প্রতিদিন আসরের নামাজান্তে সব পত্নীর গৃহে গমন করতেন, তাদের কাছে বসতেন এবং তাদের হাল- অবস্থা জানতেন।

আয়েশা (রা:) আরো বলেন, রাসূল (সা:) আমাদের সাথে এমনভাবে কথা বলতেন এবং হাসতেন তখন মনেই হতো না তিনি একজন পয়গম্বর, তবে যখন কোন ধর্মীয় বিষয় হতো, দায়িত্বের বিষয় হতো অথবা নামাজের সময় হতো তখন মনে হতো যেন তিনি আগের লোকটি নেই।

রাসূল (সা:) নিজের হাতে উটকে তৃণজাতীয় উদ্ভিদ খাওয়াতেন। আটা পিষতে পিষতে ভৃত্যরা ক্লান্ত হয়ে গেলে তিনি নিজে বাকী কাজ করে ফেলতেন। বাজার থেকে নিজের ঘরের জিনিসপত্র কিনতে লজ্জিত হতেন না।

আনাস (রা:) বলেন- “আমি কোন কাজ করলে বলেন নি এটা কেন করেছো? আবার কোন কাজ না করলে বলেননি এটা কেন করোনি? আর তিনি ছিলেন চরিত্রের দিক সবচেয়ে উত্তম।”কখনো তিনি আমার সাথে উফফ শব্দটি বলেননি। এ ১০ বছরে আমি কখনো প্রথমে তাকে সালাম দিতে পারিনি। সব সময়ই তিনি প্রথম হতেন। একদা সাহাবীদের নিয়ে রাসূল (সা:) মজলিশে বসে ছিলেন। হঠাৎ একজন মহিলা আসলেন, রাসূল (সা:) উঠে দাঁড়ালেন এবং নিজের গায়ের চাদর খুলে মাটিতে পেতে দিয়ে মহিলাকে বসতে বললেন। মহিলা যাওয়ার পর সাহাবীরা বললেন, এই মহিলা কে? ওনার গুরুত্বের কারণ আমরা বুঝতে পারছিনা। রাসূল (সা:) জবাব দিলেন, বাবাকে জন্মের পূর্বেই হারিয়েছি, মায়ের ভালোবাসাও নসিবে জুটেনি। উনি সেই হালিমাতুস সাদিয়া যার বুকের দুধ খেয়ে আমি বেড়ে উঠেছি। সুবহানআল্লাহ!

মায়ের প্রতি ভালোবাসার এ এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত ঘোষনা দিয়ে বাড়িয়ে দিয়েছেন মায়ের মর্যাদা।

মেয়েদের কাছে রাসূল (সা:) ছিলেন আদর্শ বাবা। সন্তানদেরকে সুশিক্ষিত করার ব্যাপারে রাসূল (সা:) গভীর মনযোগী ছিলেন। তিনি ঘোষণা করেন প্রত্যেক মুসলমানের উপর জ্ঞানার্জন ফরজ।

রাসূল (সা:) বড়দের শ্রদ্ধা এবং ছোটদের স্নেহ করতেন। সব শিশুদের সাথে রাসূল (সা:) এর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো।সব শিশুরা রাসূলকে ভালোবাসতো। রাসূলকে খেলার সাথীও বানাতো।

রাসূল (সা:) বলেন-“যে বড়দের সম্মান এবং ছোটদের স্নেহ করে না সে আমার উম্মত নয়”।

পরিবারের জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে রাসূল (সা:) হালাল রুজির ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন- “হালাল রুজি সন্ধান করা ফরজের পর একটি ফরজ”।ইবাদাত কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো হালাল রুজি। যেসব সাহাবায়ে কেরামগণ নিজেদের রুজি নিয়ে সন্দিহান দিলেন রাসূল (সা:) তাদের কে নিজেদের জন্য দোয়া করতে পরামর্শ দেন।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে