মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

জুয়া ও লটারি সম্পর্কে ইসলামের নীতি কি?

যাযাদি রিপোর্ট
  ৩১ মার্চ ২০২৪, ১০:৩৫
প্রতিকী ছবি

শান্তির ধর্ম ইসলাম বৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে। তার ফজিলত ও বরকতের কথা শুনিয়েছে; ইহকালের কল্যাণ ও পরকালের সুসংবাদ দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নামাজ শেষ হওয়ার পর পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং মহান আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করো।’ (সুরা জুমা : ১০)। এখানে অনুগ্রহের অর্থ জীবিকা ও সম্পদ। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি উৎসাহ দানের উদ্দেশ্যে মূলত আয়াতটি নাজিল হয়েছে।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মহানবী (সা.) ব্যবসায়ীদের অনুপ্রাণিত করতে গিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা ব্যবসায় করো, ব্যবসায়ে ১০ ভাগের ৯ ভাগ রিজিকের ব্যবস্থা আছে।’ ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও পারস্পরিক কায়কারবারের বৈধতা ও সুষ্ঠুতা সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ওপর নির্ভর করে।

ব্যবসা-বাণিজ্যে বৈধতা পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর প্রতিষ্ঠিত। আর এ জন্য ব্যবসায়িক ব্যাপারে উভয় পক্ষের সহযোগিতা অবশ্যই থাকতে হবে। পবিত্র কোরআনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘পুণ্য ও আল্লাহভীরুতার পথে একে অপরকে সাহায্য করো। পাপ ও অন্যায় পথে কখনো কারো সহযোগিতা করবে না।’ (সুরা মায়িদা : ২)। যেকোনো কারবারে উভয় পক্ষের স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি অবশ্যই থাকতে হবে। জবরদস্তিত সম্মতির কোনো মূল্য নেই। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ বাতিল পন্থায় খেয়ো না। কিন্তু তা ব্যবসার মাধ্যমে পারস্পরিক সম্মতিতে হলে (কোনো আপত্তি নেই)।’ (সুরা নিসা : ২৯)।

তবে কারবারে কোনো প্রকার প্রতারণা, আত্মসাৎ, ক্ষতি ও পাপাচার থাকতে পারবে না। অর্থাৎ ইসলামী শরিয়ত যেসব বস্তুর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে, সেসবের ব্যবহার করা যাবে না। মহানবী (সা.) বলেছেন, নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করা উচিত নয়।

এর মাধ্যমে মূলত জুয়া ও লটারির কথা বলা হয়েছে। কারণ এক পক্ষের লাভ এবং অন্য পক্ষের নিশ্চিত লোকসানের ওপরই এসবের ভিত্তি রচিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে, আপনি বলে দিন এগুলোতে বিরাট পাপাচার রয়েছে।’ (সুরা বাকারা : ২১৯)।

সম্পদ বৃদ্ধি ও মুনাফা অর্জনের যেসব ব্যাপারে উভয় পক্ষের মধ্যে কোনো এক পক্ষের স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি পাওয়া যায়নি, বিপাকে পড়ে এবং জবরদস্তি সম্মতিকেই স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি বলে ধরে নেওয়া হয়েছে, যেমন সুদের কারবার কিংবা কোনো শ্রমিককে ঠকানো। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ বেচাকেনা (বৈধ ব্যবসায়) হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন।’ (সুরা বাকারা : ২৭৫)

ইসলামের দৃষ্টিতে পাপ এমন কারবার করা অথবা এমন সব বস্তু কেনাবেচা করা, যা মূলত অপবিত্র। যেমন- মদ, মৃতদেহ, প্রতিমা, শূকর প্রভৃতি। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের ওপর মৃতদেহ, রক্ত ও শূকরের মাংস হারাম করা হয়েছে।’ (সুরা মায়িদা : ৩)। হজরত জাবির (রা.) বলেন, আমি মহানবী (সা.)কে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ মদ, মৃতদেহ, শূকর ও মূর্তি বেচাকেনা হারাম করেছেন।’ (নায়লুল আওতার, পঞ্চম খণ্ড)।

উভয় পক্ষের মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পরও যেসব লেনদেনে কলহবিবাদের আশঙ্কা থাকে। যেমন- পণ্য অথবা মূল্য কিংবা উভয়টাই অস্পষ্ট রাখা। কী দামে কেনা হলো কিংবা কী বস্তু কেনা হলো, তা স্পষ্ট করে বলা হলো না। অথবা একটা লেনদেনকে দুটোয় পরিণত করা হলো। যেমনÑ যেসব পণ্য দেখা প্রয়োজন, কিন্তু না দেখেই ক্রয় করা হলো। মহানবী (সা.) বেচাকেনার সময় অনুপস্থিত বস্তু বেচাকেনা করতে নিষেধ করেছেন (তিরমিজি)।

যেসব লেনদেনে ধোঁকা ও প্রতারণা নিহিত রয়েছে। যেমন- এক ধরনের পণ্য দেখিয়ে অন্য ধরনের পণ্য দেওয়া কিংবা বস্তার ভেতরে কমদামি পণ্য রেখে ওপরে দামি পণ্য সাজিয়ে রেখে ক্রেতাকে ধোঁকা দেওয়া। মহানবী (সা.) প্রতারণামূলক লেনদেন নিষেধ করে বলেছেন, ‘যে প্রতারণা করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’

এদিকে মহান আল্লাহ বৈধ ব্যবসা-বাণিজ্যকে হালাল করলেও সুদকে হারাম করেছেন। সুদ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘যারা সুদ খায় তারা সেই ব্যক্তির মতো দাঁড়াবে যাকে শয়তান স্পর্শ করেই পাগল করে দেয়। এটা এ জন্য যে তারা বলে বেচাকেনা তো সুদের মতোই।’ (সুরা বাকারা : ২৭৫)। মহানবী (সা.) সুদখোর, সুদ প্রদানকারী, সুদি কারবারের সাক্ষী এবং সুদ চুক্তি লেখককে অভিশাপ দিয়েছেন। (বুখারি, মুসলিম)।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহপাক ব্যবসাকে বা কেনাবেচাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন’ (সুরা বাক্বারা: আয়াত ২৭৫)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না কিন্তু পরস্পর রাজি হয়ে ব্যবসা করা বৈধ’ (সুরা নিসা: আয়াত-২৯)।

যারা আল্লাহর বিধান অনুসারে ব্যবসা করে তারা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত মর্যাদাবান। যারা আল্লাহর অন্যান্য বিধান পালনকরত সৎভাবে ব্যবসা করে তাদের ভূয়সী প্রশংসা করে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘সেই সকল লোক যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে এবং সালাত কায়েম ও জাকাত প্রদান হতে বিরত রাখে না, তারা ভয় করে সেই দিনকে যেই দিন তাদের অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।’ (সুরা নূর: আয়াত-৩৭)।

উক্ত আয়াতে সৎ ব্যবসায়ীর পরিচয় দেওয়া হয়েছে- বলা হয়েছে সৎ ব্যবসায়ী আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হয় না, আল্লাহর বিধান পালনে সে সর্বদা তৎপর থাকে। একজন সৎ ব্যবসায়ী মানুষকে ওজনে কম দিতে পারে না। পণ্যে ভেজাল মিশ্রিত করে তা বিক্রি করতে পারে না। আল্লাহর বিধান পালনকারী একজন ব্যবসায়ী ব্যবসার ক্ষেত্রে কখনো কোনো প্রকার প্রতারণার আশ্রয় নিতে পারে না। অসৎ ব্যবসায়ীরা মানুষকে ওজনে কম দেয়, পণ্যে নানা ধরনের ভেজাল মিশ্রিত করে বাজারকে অস্থির করে তোলে।

এতে করে ক্রেতাদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। এরা বাহ্যিক লাভবান হয় বটে; কিন্তু এদের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। এদের করুণ পরিণাম সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘মন্দ পরিণাম তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়। যারা লোকের নিকট হতে মেপে লওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে এবং যখন তাদের জন্য মাপে বা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়। তারা কি চিন্তা কওে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে মহা দিবসে’ (সুরা মুতাফফিফিন: আয়াত ১-৫)।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে