সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২
প্রশাসনের ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ

সংস্কারের নামে অবৈধভাবে চলছে পুকর খনন

চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি
  ১১ মে ২০২৫, ১৫:১৪
সংস্কারের নামে অবৈধভাবে চলছে পুকর খনন
অবৈধভাবে পুকুর খনন। ছবি: যায়যায়দিন

রাজশাহীর অন্য উপজেলায় যখন অবৈধভাবে পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে চলছে জিরো চলারেন্স নীতি তখন চারঘাট উপজেলায় তার ব্যাতিক্রম। কৌশল পরিবর্তন করে অভিনব কায়দায় চারঘাটে স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগার উপর দিয়ে বেপরোয়াভাবে চলছে অবৈধ পুকুর খনন।

সংস্কারের নামে পুকুর খনন কাজ চলে আসলেও প্রশাসনের নেই কোন নজরদারী। এতে প্রশাসনের ভুমিকা সাধারণ মানুষের কাছে এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।

অভিযোগ উঠেছে কোন ধরণের তদন্ত ছাড়াই ইতিপুর্বে প্রশাসনের অভিযানে অবৈধভাবে খনন করা পুকুরকে পুরাতন পুকুর দেখিয়ে তা সংস্কারের অনুমতি দিচ্ছেন স্থানীয় প্রশাসন।

এসব অবৈধভাবে পুকর খনন কাজ বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন সুফল পাচ্ছেন না স্থানীয় কৃষকরা। জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে চারঘাটে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ কর দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ধর আমের বাগানসহ বিভিন্ন ধরণের ফলের বাগান উজার করে চলছে পুকুর খনন।

বাগান ছাড়াও তিন ফসলী জমিতে একের পর এক পুকুর খনন কাজ চলে আসলেও চোখে কালো চশমা পড়ে থাকছেন স্থানীয় প্রশাসন। অভিযোগ চারঘাটের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ অবৈধ পুকর খনন বন্ধে এবং কৃষি জমি রক্ষার্থে স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিত ও মৌখিকভাবে একাধিকবার অভিযোগ দিলেও বন্ধ হয়নি পুকুর খনন।

অবৈধপুকুর খনন চক্রের সদস্যরা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ কওে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আতাত করে প্রকাশ্যে চালাচ্ছেন তাদের অবৈধ কর্মকান্ড। প্রশাসনের দেখার কেউ নেই বা কোন নজরদারী নেই।

সরজমিনে গত কয়েকদিন ধরে উপজেলার ইউসুফপুর, শলুয়া, নিমপাড়া, ভায়ালক্ষিপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকাঘরে দেখা গেছে আমবাগানসহ বিভিন্ন ফলের বাগান উজার করে চলছে পুকুর খনন। আবার কোথাও কোথাও চলছে তিন ফসলী জমিতে পুকুর খনন।

এক সময় যে মাঠজুড়ে ছিল সবুজের সমারোহ। আজ সেই মাঠে জুড়ে শুধু পুকুর আর পুকর। আজ সেই সব এলাকায় বাগান উজার করে চলছে পুকুর খনন।

জানা যায়, উপজেলার ইউসুফপুর এলাকায় প্রায় ১০বিঘা তিন ফসলী জমিতে অবৈধভাবে পুকুরখনন করছেন আজাহার আলী। তার দাবি স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই চলছে পুকুর সংস্কার। শলুয়া ইউনিয়নের জাগীরপাড়ায় ইতিপুর্বে স্থানীয় প্রশাসনের অভিযানে অবৈধভাবে খনন করা ৭ বিঘা পুকুরকে পুরাতন পুকুর বলে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সংস্কারের অনুমতি নিলেও সেখানে ১৯ বিঘা জমিতে প্রকাশ্যে চলছে পুকুরখনন।

এ পুকুর খনন কাজে রয়েছে বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন,মাসুদ রানা। অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলমের দাবি নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে সংস্কারের অনুমতি নিয়েই পুকুর সংস্কার কাজ করছেন।

অথচ এলাকারবাসীর অভিযোগ পুকুর সংস্কারের নামে বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর যেন পুরো মাঠ পুকুর সংস্কারে নেমেছেন। অপরদিকে শলুয়া ইউনিয়ন পরিষদের অতি সন্নিকটে প্রায় ৮ বিঘা ফসলী জমিতে পুকুরখনন করছেন শামিউল ইসলাম নামের প্রভাবশালী এক ব্যাক্তি। এ ছাড়াও উপজেলার ফতেপুর বাগান কেটে অবৈধভাবে পুকুরখনন করছেন শফিকুল ইসলাম নামের আরেক ব্যাক্তি।

উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়নের বালাদিয়াড় এলাকায় ১১ বিঘা তিন ফসলী জমিতে জমির খনন করছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যাক্তি। কাউকে কোন ধরণের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের নাকের ডগার উপর দিয়ে বেপরোয়াভাবে খনন করছেন পুকুর। ভায়া লক্ষিপুর এলাকায় প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট পুকুর সংস্কারের নামে শতশত ট্রাক মাটি কেটে লালপুরের কয়েকটি ইট ভাটায় বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলা বিএনপির একজন সিনিয়র নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি দিনে রাতে খনন করছেন পুকুর। উপজেলার এতোগুলো স্পটে অবৈধ পুকুর খনন কাজ অব্যাহতভাবে চলে আসলেও স্থানীয় প্রশাসন রয়েছেন উদাসিন। বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) আরিফ হোসেন বলেন,পুরাতন পুকুর সংস্কারের অনুমতি দেয়া হলেও কেউ যদি সংস্কারের নামে অবৈধভাবে পুকুর খনন করেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়াও সংস্কারের নামে পুকুরের মাটি অন্যত্র বিক্রি করার কোন সুযোগ নেই। কেউ যদি মাটি বিক্রি করে থাকে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে মামলা করাহবে। কোন অবৈধ কর্মকান্ডের সঙ্গে আপোষ নেই বলে দাবি করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) আরিফ হোসেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে