পবিত্র আশুরা উপলক্ষে ‘হায় হোসেন’, ‘হায় হোসেন’ ধ্বনিতে মুখরিত রাজধানী ঢাকার তাজিয়া মিছিল। শিয়া সম্প্রদায়ের হাজারো মানুষ এই শোক মিছিলে অংশ নেন। তারা সবাই কালো পোশাকে পরে, হাতে প্রতীকী ছুরি, নিশান, আলাম, বেস্তা ও কারবালার স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে যোগ দেন মিছিলে।
মুখে মুখে ধ্বনিত হয় ‘হায় হোসেন’, ‘হায় হোসেন’, ‘ইয়া হোসেন’, ‘ইয়া আব্বাস’। কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনার স্মরণে মিছিলে অংশ নেওয়া অনেককে শোকে মাতম করতেও দেখা গেছে।
আজ রোববার (৬ জুলাই) সকাল ১০টার পর পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক হোসেনি দালান ইমামবাড়া থেকে শোক ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মিছিলটি যাত্রা শুরু করে।
তাজিয়া মিছিলটি আজিমপুর, নীলক্ষেত, নিউ মার্কেট, সায়েন্সল্যাব হয়ে ধানমন্ডিতে গিয়ে শেষ হয়। পুরো পথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা রয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, সোয়াত ও ডিবি সদস্যরা কড়া নজরদারি করছেন। এছাড়া দুর্ঘটনা এড়াতে ফায়ার সার্ভিস ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদেরও দেখা যায়।
মিছিলে অংশ নেওয়া মোহাম্মদ আজিম বলেন, ‘এই দিনটি কেবল ইতিহাস নয়, আত্মত্যাগ ও ন্যায়বিচারের প্রতীক। ইমাম হোসেনের জীবন থেকে আমরা ত্যাগ ও সত্যের পথে থাকার শিক্ষা পাই।’
আরেক অংশগ্রহণকারী মুর্শিদা পারভীন বলেন, ‘শোকের দিন হলেও আমাদের এই জমায়েত ইমামদের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ। আমরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই ইতিহাস বহন করে চলেছি। তাদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে আমাদের এই মিছিল।’
হোসাইনী দালানের ইমামবাড়া ছাড়াও বড় কাটরা, বিবিকা রওজা, মোহাম্মদপুরের বিহারী ক্যাম্প, শিয়া মসজিদ, মিরপুর পল্লবী বিহারী ক্যাম্পসহ ঢাকার আরো কয়েকটি জায়গায় আশুরার আনুষ্ঠানিকতা পালন করছেন শিয়া মুসলমানরা।
১০ মহররম মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক। হিজরি ৬১তম বর্ষের (৬৮০ খ্রিস্টাব্দ) এই দিনে হজরত মুহাম্মদের (স.) দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে শহীদ হন। মুসলমানরা, বিশেষ করে শিয়া মুসলমানরা ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করেন
২০১৫ সালে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির মধ্যে ইমামবাড়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনার পর থেকে আশুরায় নিরাপত্তার কড়াকড়ি বাড়ানো হয়। কোভিড মহামারীর কারণে বাংলাদেশে দুই বছর বন্ধ ছিল তাজিয়া মিছিল; এরপর ২০২২ সাল থেকে মিছিল পুনরায় শুরুর অনুমতি দেয় সরকার।