আগামীকাল ৬ মে (শনিবার) মহান মুক্তিযুদ্ধের ৭নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার লেঃ কর্নেল (অবঃ) কাজী নুরুজ্জামান, বীর উত্তর-এর ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী। এইদিনে ৮৬ বছর বয়সে তার মহাপ্রয়াণ হয়।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর কয়েক বছর আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিলেও ২৫ মার্চের গণহত্যা তাকে রণক্ষেত্রে স্বভূমিকায় নিয়ে আসে। যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ শেষ হবার পরও চলতে থাকে।
আশির দশকের শুরুতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি জামাতে ইসলামির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবী জানান। একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে উচ্চকিত হন। তার এই আন্দোলনের কারণে তৎকালীন স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদ তাকে কারাগারে অন্তরীণ করেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং সংগঠক ছিলেন কাজী নুরুজ্জামান। গণ আদালত প্রতিষ্ঠার জন্য যে ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি।
এই সাহসী নায়কের জন্ম মার্চ ২৪, ১৯২৫-এ যশোর জেলায়। বাবা কাজী সদরুল ওলা এবং মা রাতুবান্নেসা। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার’স কলেজে রসায়ন-এ পড়াশোনা শেষ করে নুরুজ্জামান ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে যোগ দেন ১৯৪৩-এ। ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সদস্য হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্মা ও সুমাত্রা উপকূলে যুদ্ধ করেন। ১৯৪৬ সালে জওহরলাল নেহরুর আহবানে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিতে যোগ দেন এবং দেরাদুনস্থ ভারতীয় সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষিত হন।
দেশ বিভাজনের পর পরিবারের সাথে পাকিস্তান চলে যাবার কারণে নুরুজ্জামান পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। জেনারেল আইয়ুব খান এর মার্শাল ল’ শুরুর সময়ে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন এবং নারায়নগঞ্জ ডক ইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনার জন্য তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের সময় নুরুজ্জামান সাময়িকভাবে সেনাবাহিনীতে ফিরে আসেন।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় আবার অস্ত্র হাতে তুলে নেন নূরুজ্জামান। রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নঁওগা, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জয়পুরহাট, দিনাজপুর এবং ঠাকুরগাঁও জেলা নিয়ে গঠিত সেক্টর-৭ এর সেক্টর কমান্ডার হিসেবে তিনি যুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকার জন্য কাজী নুরুজ্জামান ‘বীর উত্তম’-খেতাবে ভূষিত হন।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পাশাপাশি নুরুজ্জামান প্রগতিশীল লেখক ও চিন্তাবিদ হিসেবেও সক্রিয় ছিলেন। তিনি সাপ্তাহিক ‘নয়া পদধ্বনি’ এর সম্পাদক এবং ‘একাত্তরের ঘাতক ও দালালের কে কোথায়’ এর প্রধান সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। তার রচিত গ্রন্থগুলো হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনীতি, বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতি, স্বদেশ চিন্তা এবং A Sector Commander Remembers Bangladesh Liberation War.