রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ২ আষাঢ় ১৪৩১

প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে ‘রেমাল’

আলতাব হোসেন
  ২৩ মে ২০২৪, ০৯:০৩
-ফাইল ছবি

দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি আজ দুপুরের মধ্যে আরও ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এরপর ঘনীভূত হয়ে ধাপে ধাপে এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। আগামী ২৬ মে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা অঞ্চলের দিকে ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ রয়েছে। গতিপথ পরিবর্তন হলে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়টি সরাসরি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূল দিয়ে স্থলভাগে উঠে আঘাত হানতে পারে। এতে বর্তমানে বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত তাপপ্রবাহ কমে আসতে পারে।

সবকিছু ঠিক থাকলে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ ২৬ মে সকাল ৬টার পর থেকে রাত ১২টার মধ্যে বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলা থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার মধ্যবর্তী উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় বৃত্তের অগ্রবর্তী অংশ উপকূলীয় এলাকায় প্রবেশ করতে পারে সকাল ৬টার পর থেকে।

ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করার সম্ভাব্য সময় ২৬ মে দুপুর ১২টার পর থেকে বিকাল ৬টার মধ্যে। জোয়ারের সময় উপকূলে আঘাত হানলে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় এলাকাগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় জেলাগুলোর উপকূলে আঘাতের সময় ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে পারে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার, যা দমকা হাওয়াসহ ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আছড়ে পড়তে পারে ভয়ংকর শক্তিশালী এ ঘূর্ণিঝড়। চার বছর আগে ২০২০ সালের ২০ মে দেশের উপকূলে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় আম্পান। সে সময় বেশ ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছিল উপকূলীয় এলাকায়।

সুন্দরবনের কারণে রক্ষা পাওয়া গেছে সে যাত্রায়। এবার সেই আম্পানের আঘাতের মাসেই ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’। রেমাল আম্পানের মতো বিধ্বংসী হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওবিদরা। তারা বলছেন, এটি কতটুকু শক্তি অর্জন করবে এবং শেষ পর্যন্ত সুপার সাইক্লোনে রূপ নেবে কিনা, তা জানতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।

লঘুচাপের প্রভাবে দেশের বেশির ভাগ এলাকা ছাড়াও রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, পাবনা, বগুড়া, ময়মনসিংহ জেলার ওপর দিয়ে বুধবার রাত ১টা মধ্যে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় ও বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নিম্নচাপ তৈরির পর থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ২৩ বা ২৪ মে’র মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এরপর এটি সোজা উত্তর দিকে শক্তিবৃদ্ধি করে ২৪ মে রাতে বা ২৫ মে সকালের দিকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তখন এর নাম হবে ‘রেমাল’। এ নামটি ওমানের দেওয়া। এটি একটি আরবি শব্দ। এই নামের অর্থ বালু। বঙ্গোপসাগরের পশ্চিম উপকূলে আঘাত করলে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৫০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার, পূর্ব উপকূলে আঘাত করলে ঘণ্টায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ১৭০ থেকে ২০০ কিলোমিটার।

আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বুধবার বিকালে যায়যায়দিনকে জানান, তাপমাত্রা বৃদ্ধি বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের গঠন ও তীব্রতাকে সহায়ক করে তুলছে। বাংলাদেশ, মিয়ানমার বা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা অঞ্চলের দিকে ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ রয়েছে। এটি প্রতিনিয়ত গতিপথ পরিবর্তন করছে। রাতে একটা গতিপথ থাকছে, আবার সকালে আরেকটা। তাই লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। তবে নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে তখন গতিপথ স্থির হবে। সেই সময় স্পষ্টভাবে বলা যাবে, এটা কোন কোন এলাকায় বা স্থানে আঘাত হানতে পারে।

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময় ধরা হয় নভেম্বর ও এপ্রিল মাসকে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আবহাওয়া তার ব্যাকরণ ভুলে গেছে। এখন ঘূর্ণিঝড়প্রবণ হয়ে উঠেছে মে মাস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, গত ৬০ বছরে বাংলাদেশে আঘাত হানা ৩৬টি ঘূর্ণিঝড়ের ১৫টি হয়েছে মে মাসে। এর মধ্যে গত এক যুগেই সাতটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে মে মাসে।

ঘূর্ণিঝড় হলো ক্রান্তীয় অঞ্চলের সমুদ্রে সৃষ্ট বৃষ্টি, বজ্র ও প্রচণ্ড ঘূর্ণি বাতাস সংবলিত আবহাওয়ার একটি নিম্নচাপ প্রক্রিয়া, যা নিরক্ষীয় অঞ্চলে উৎপন্ন তাপকে মেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত করে। এই ধরনের ঝড়ে বাতাস প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে ছুটে চলে বলে এর নামকরণ হয়েছে ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়ের ঘূর্ণন উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে। ঘূর্ণিঝড় পৃথিবীতে তাপের ভারসাম্য রক্ষা করে।

ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় শুধু যে মানুষের প্রাণ নেয়, তা নয়; ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা কেড়ে নেয় উপকূলবাসীর শেষ সম্বলটুকুও। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে থাকা ব-দ্বীপটিতে প্রায় প্রতি বছরই ঘূর্ণিঝড় আঘাত করে। ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াল থাবায় লন্ডভন্ড হয় উপকূল।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক কমিটি প্রতিটি ঝড়ের একটি নাম দিয়ে থাকে। ভারত মহাসাগরের ঝড়গুলোর নামকরণ করে এ সংস্থার আটটি দেশ। দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড ও ওমান। এ দেশগুলোর প্যানেলকে বলা হয় এসক্যাপ দেশগুলোর কাছ থেকে প্রাপ্ত নামের তালিকা থেকে সংস্থাটি নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করে। এবার ‘রেমাল’ নামটি প্রস্তাব করেছে ওমান। আরবিতে এর অর্থ বালি।

সর্বশেষ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় মিগযাউম, যা পরে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করে। সে ঝড়ের তেমন কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়েনি। ২০২০ সালের মে মাসেই ২০ তারিখে দেশের উপকূলে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় আম্পান। বেশ বিধ্বংসী ছিল ঘূর্ণিঝড়টি। তবে সুন্দরবনের কারণে সে যাত্রায় রক্ষা পেয়েছিল দেশের উপকূল। এর আগে ২০০৯ সালে এই মে মাসেই ২৫ তারিখে সুন্দরবনে আঘাত হেনেছিল প্রলয়ঙ্করী আইলা।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে