সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

‘পদত্যাগ’ প্রশ্নে যা বললেন ড. ইউনূস

যাযাদি ডেস্ক
  ২৯ মে ২০২৫, ১৬:৫৭
আপডেট  : ২৯ মে ২০২৫, ১৭:০২
‘পদত্যাগ’ প্রশ্নে যা বললেন ড. ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করছেন-এমন গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল কিছু দিন আগে। এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বর্তমানে নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও এই কথা জানিয়েছিলেন।

ড. ইউনূসের পদত্যাগের বিষয়ে তার কাছে জানতে চেয়েছিল জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়া। জবাবে ড. ইউনূস বলেছেন, যেহেতু তিনি এই বিষয়ে বাংলাদেশে কোনো কথা বলেননি, তাই বিদেশে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে তার জন্য তা ‘বিপদ তৈরি করতে পারে’।

1

নিক্কেইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহে খবর ছড়িয়ে পড়েছিল যে, ড. ইউনূস এক ছাত্রনেতাকে বলেছিলেন-যদি দলগুলো সংস্কার ও নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে একমত না হয়, তবে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন। তিনি এমন মনোভাব প্রকাশ করেছেন কি না—জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি বাংলাদেশেও এই প্রশ্নের উত্তর দিইনি। যেহেতু আমি বাংলাদেশে এটি বলিনি, যদি আমি জাপানে বলি, তাহলে আমার জন্য অনেক সমস্যা তৈরি হবে।’

জাপান সফররত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশটির সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরও জানান, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ভেতরেও ১১-১২ বিলিয়ন ডলারের অর্থ ইতিমধ্যে চিহ্নিত এবং সংযুক্ত (এবং) জব্দ করা হয়েছে।

ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার একবার এই বিলিয়ন ডলারের অর্থ হাতে পেলে দুটি সার্বভৌম সম্পদ তহবিল প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা করেছে। এই তহবিলগুলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য ব্যয় করা হবে এবং দরিদ্রদের জীবন ‘রূপান্তর’ ও তরুণদের উদ্যোক্তা হতে সাহায্য করতে ব্যবহৃত হবে।

ওই সাক্ষাৎকারে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অধিক পরিমাণ সুতা, তেল ও গ্যাস কেনার প্রস্তাবের কথা জানান। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ওপর শতকরা ৩৭ ভাগ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে। সেখান থেকে সুতা, তেল ও গ্যাস কেনার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন ড. ইউনূস। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার প্রস্তাবও ব্যবহার করবেন বলে জানান।

বৃহস্পতিবার ফিউচার অব এশিয়া কনফারেন্সের এক ফাঁকে তার সাক্ষাৎকার নেয় পত্রিকাটি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রতিটি অংশীদার দেশের সঙ্গে তার দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। এ কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্রের অধিক পণ্য কেনার প্রস্তাত গৃহীত হয় তাহলে অন্য দেশগুলো থেকে একই রকম পণ্য আমদানির পথ পরিবর্তন করতে পারে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, উদাহরণ হিসেবে আমরা মধ্য এশিয়া থেকে, ভারতের কাছ থেকে এবং অন্য আরও দেশের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে সুতা কিনি। আমরা দেখছি, আমরা কেন এটা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কিনি না। তাদের কাছ থেকে কিনলে তো বাণিজ্য ঘাটতি কমে যাবে।

মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলাদেশ জ্বালানি হিসেবে চাহিদার বেশিরভাগ তেল আমদানি করে। কিন্তু ড. ইউনূস বলেছেন, এই পণ্যটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকেও কেনা যেতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাণিজ্য ও শুল্ক কমানো নিয়ে আলোচনার সময়সূচি নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। তবে জোর দিয়ে বলেছেন, আমরা (পরিস্থিতিকে) হুমকি হিসেবে দেখছি না। আমরা এটাকে একটা সুযোগ হিসেবে দেখছি। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের বিষয়টি বুধবার আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কোর্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড। তারা রায়ে বলেছে, বাণিজ্যকে রেগুলেট করতে কংগ্রেসকে কর্তৃত্ব দিয়েছে সংবিধান। আইণপ্রণয়নকারী শাখাকে অতিক্রম করতে পারেন না প্রেসিডেন্ট।

নিজের দেশের ইস্যুতে ড. ইউনূস নিক্কি’কে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সাবেক শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে। ১১ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ এরই মধ্যে বাংলাদেশে শনাক্ত করে তা জব্দ করা হয়েছে। একবার যখন বর্তমানের অন্তর্বর্তী সরকার এসব অর্থ ব্যবহারের সুযোগ পাবে তখন পরিকল্পনা আছে একটি সার্বভৌম সম্পদের তহবিল গঠনের। এই তহবিল শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে ব্যবহার করা হবে। দরিদ্রদের জীবন পরিবর্তনে ব্যবহার করা হবে এবং তরুণদের উদ্যোক্তা বানাতে সহায়তা করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে