শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

বিএনপির এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলন সেপ্টেম্বরকে ঘিরে

হাসান মোল্লা
  ২৯ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৩৩
বিএনপির এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলন সেপ্টেম্বরকে ঘিরে

আসন্ন সেপ্টেম্বরকে আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপ হিসেবে ধরে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে বিএনপি। তফসিল ঘোষণার আগেই সরকারের পতন নিশ্চিত করতে লাগাতার কর্মসূচিতে যাবে দলটি। ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচির পর থেকে শুরু হবে চূড়ান্ত আন্দোলন। নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, নভেম্বরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। সে হিসেবে তফসিলের দুই মাস বাকি। বিএনপি চলমান আন্দোলন সফলে সরকারের কোনো উস্কানিতে পা না দিয়ে এই সময়টাকে কীভাবে কাজে লাগাতে পারে-দলটির অভ্যন্তরে এখন সেই আলোচনাই চলছে।

বিএনপির পরিকল্পনা হচ্ছে, আন্দোলনে এক দফা দাবি আদায় করেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তারা। আর সরকার যদি এই দাবি উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়, বিএনপি তা প্রতিহত করবে এবং সেই নির্বাচনে অংশ নেবে না।

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে এক দফা দাবিতে গত ১২ জুলাই থেকে আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি। কিন্তু দলের এই দাবির প্রতি এখনো কর্ণপাত করেনি সরকার। উভয় পক্ষ নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকায় নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে সহসাই কোনো সমঝোতা হবে- এমন কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। সরকারের এই অবস্থানসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আন্দোলনের নতুন রোডম্যাপ সাজাচ্ছে বিএনপি। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে পুনরায় আন্দোলনে গতি আনতে চান নীতিনির্ধারকরা। কর্মসূচিতে বৈচিত্র্য আনার জন্য দলে নানামুখী পর্যালোচনা চলছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে এক দফার যুগপৎ আন্দোলন গতি লাভ করবে। সেক্ষেত্রে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে গিয়ে আন্দোলন গতি লাভ করবে। ওই সময় ঢাকায় ফের মহাসমাবেশ, গণসমাবেশ বা বড় ধরনের কর্মসূচির চিন্তা রয়েছে হাইকমান্ডের। এর মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের ‘শেষ ধাপ’ শুরু হবে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যা চলমান থাকবে। তখন কর্মসূচি হবে আবার ঢাকাকেন্দ্রিক। আদালতের সামনে অবস্থান ছাড়াও নির্বাচন কমিশন, গণভবন, সচিবালয়ের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঘেরাওয়ের সঙ্গে টানা অবস্থান কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তাও করা হচ্ছে।

আলাপকালে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলেন, খুব কম সময়ের মধ্যেই আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করবে। বর্তমান বাস্তবতায় সরকারের পক্ষে কোনোভাবেই একতরফা নির্বাচন করা সম্ভব নয়। ফলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সরকারকে কোনো না কোনো বিকল্প পথ বেছে নিতেই হবে।

বিএনপি মনে করছে, নির্বাচন বা আন্দোলনের মাঠে এবার বিএনপিই সরকারের একমাত্র প্রতিপক্ষ নয়। আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হোক- এটা যেমন দেশের সাধারণ মানুষ চায়, তেমনি গণতান্ত্রিক বিশ্বেরও চাওয়া এটি। এই ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে তারা। খুব শিগগিরই এই চাপ আরও জোরালো হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশে আগামীতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে অবস্থান নিয়েছে সেটাতে আস্থার জায়গা খুঁজে পাচ্ছে বিএনপি। দলটি মনে করছে, এর ফলে তাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আরও জোরালো হয়েছে। এ ইস্যুতে ভিসা নীতি ঘোষণাসহ মার্কিন তৎপরতা আশা জোগাচ্ছে তাদের।

এদিকে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দল ও জোটের নেতাদেরও যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিতে বিএনপি থেকে বলা হয়েছে। দলের নীতিনির্ধারণী ও যুগপতে যুক্ত গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা আভাস দিয়েছেন, যুগপতের পরের ধাপের কর্মসূচিতে নিম্ন আদালতের সামনে অবস্থান, উচ্চ আদালতের সামনে অবস্থানসহ এ ধরনের কর্মসূচি থাকতে পারে।

একাধিক নেতার ভাষ্য, বিএনপিতে হরতাল ও অবরোধ নিয়ে আলোচনা চলছে। দলের ভেতর থেকে নীতিনির্ধারকদের ওপর কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার চাপ অব্যাহত রয়েছে। সেক্ষেত্রে চূড়ান্ত ধাপে হরতাল, অবরোধ ও ঘেরাও কর্মসূচির চিন্তা থাকতে পারে বিএনপিতে। আন্দোলনের মাত্রার উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েই সরকারবিরোধী কর্মসূচি চলবে। এক্ষেত্রে দেশের নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে মার্কিন অবস্থানকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

আন্দোলনের পরবর্তী অবস্থা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর আবদুল মঈন খান বলেন, বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান এক দফার আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাবে।

শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই দাবি আদায় করা হবে। সেক্ষেত্রে জনদাবি পূরণে যখন যে কর্মসূচি দেওয়া প্রয়োজন সেটি দেওয়া হবে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে