শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বিএনপির ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল শুরু

যাযাদি ডেস্ক
  ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:২৭
বিএনপির ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল শুরু

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে আজ শনিবার সকাল ছয়টা থেকে সোমবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত দেশব্যাপী বিএনপির ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, এবারের হরতালের হবে ব্যতিক্রম। কোনো ধরনের পিকেটিং করার পরিকল্পনা নেই বিএনপিসহ সমমনাদের। তাদের লক্ষ্য একটাই যাতে ভোটাররা কেন্দ্রে না যায়। বিএনপি নেতাকর্মীরা যার যার অবস্থান থেকে পরিচিত, আত্মীয়-স্বজনসহ যাদেররে সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয় তাদের ভোট কেন্দ্রে না যাওযার জন্য অনুরোধ জানাবে। এর পক্ষে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে দলের সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও সিনিয়র নেতাদের এলাকায় যাওয়ার নির্দেশনা আগেই দেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে গত নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে অংশ নেওয়া অনেক প্রার্থীকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভোট বর্জনের আহবান জানিয়ে বক্তব্য রাখতে দেখা গেছে।

এবারের হরতালের সম্ভাব্য ধরন প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘হরতাল মানে কি? আমাদের প্রতিবাদ। আমাদের নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে যতখানি সম্ভব তারা করবে। গণমাধ্যমে এসেছে, সহিংসতায় দুইজন মারা গেছে। এটা প্রতিদিন ঘটতেছে। এখন ক্ষমতাসীনদের একটা মাত্র লক্ষ্য বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর যেভাবে হোক দায় চাপানো। আমরা সেটা হতে দেব না। আমরা জনগণের কাছে আবেদন জানিয়েছি, আপনারা হরতাল পালন করুন, এই নির্বাচন বর্জন করুন। সেজন্য আমাদের নেতাকর্মীরা সেইভাবে শান্তিপূর্ণ ভাবে কর্মসূচি পালন করবে। উদ্দেশ্যে আমাদের প্রতিবাদটা জাতির কাছে জানালাম, বিশ্বের কাছে জানালাম এবং জাতিও আজকে এর প্রতিবাদ করছে।’

সূত্রমতে, হরতালে ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি পালন করে বিপদ বাড়ানোর পক্ষে নন বিএনপি নেতারা। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতির কঠোর প্রয়োগ ও নতুন নিষেধাজ্ঞা দিলে পরবর্তীরাতে কঠোর কর্মসূচি পক্ষে তারা। এজন্য নির্বাচনের আগের দিন ও নির্বাচনের দিনে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড মনিটরিং করবে তারা। এসব তথ্য গণমাধ্যমের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জানানো হবে। শুক্রবারও কমনওয়েলথের ১০ সদস্যের দলের সঙ্গে বিএনপি নেতারা বৈঠক করেছেন।

এদিকে হরতাল সফলের আহবান জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো শনিবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালন করবে। জনগণ এই সরকারের এক তরফা ডামি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বিরোধীদের হরতালে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছে। দেশবাসী ৭ জানুয়ারির ভোট প্রত্যাখ্যান করে হরতাল পালনের পাশাপাশি নির্বাচন বর্জন করবে।

এদিকে শনিবার থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচির ডাক দিয়ে তা সফলের আহবান জানিয়েছে জামায়াত, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, সমমনা জোট, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), গণঅধিকার পরিষদ, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য, লেবার পার্টিসহ সমমনা দল ও জোটগুলো। এরমধ্যে ৭ জানুয়ারি সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা ‘গণকারফিউ’ ঘোষণা করেছে গণঅধিকার পরিষদ একাংশ ও ১২ দলীয় জোট। এছাড়া ৭ জানুয়ারি ‘স্বেচ্ছায় প্রতিবাদী লকডাউন’ কর্মসূচি দিয়েছে এবি পার্টি।

এদিকে হরতাল সফল করতে শুক্রবার রাজধানীসহ সারাদেশে লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ ও বিক্ষোভ করেছে সরকার বিরোধীরা। কর্মসূচি পালনকালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ‘একতরফা ডামি’ উল্লেখ করে জনগণের উদ্দেশ্যে নেতারা বলেন, ভোটকেন্দ্রে যাবেন না, নির্বাচন বর্জন করুন। বিএনপি : ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোট বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে রাজধানীতে লাঠি মিছিল করেছে বিএনপি ও দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শুক্রবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় মিছিল বের করা হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

এদিকে সকালে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়ার নেতৃত্বে রাজধানীর মতিঝিলে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করা হয়। হাতিপুল কাঁচাবাজার ও সায়েন্স ল্যাব এলাকায় কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রিয়াদ ইকবাল। জামায়াত : নির্বাচন বর্জন ও ভোটদান থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়ে রাজধানীতে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করেছে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ। মিরপুর, ফার্মগেট, পল্টন, বংশাল, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, খিলগাঁওসহ বেশ কিছু এলাকায় বিক্ষোভ করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।

অন্যান্য দলের কর্মসূচি : আওয়ামী গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নির্বাচন ও আইনের শাসনে বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেছেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী ৭ জানুয়ারি তামাশার নির্বাচনের নামে গণতন্ত্রের দাফন-কাফন সম্পন্ন করবে। তিনি ডামি নির্বাচন বর্জনের দাবিতে শুক্রবার বিকাল ৪টায় পল্টন নোয়াখালী টাওয়ার হতে গণসংযোগ ও মিছিল শুরু করে আল রাজি কমপ্লেক্সের সামনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে একথা বলেন।

আওয়ামী লীগ সহিংসতার রাজনীতিতে বিশ্বাসী একটি দল বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। শুক্রবার দুপুরে নির্বাচন বর্জনের আহবান জানিয়ে লিফলেট বিতরণ শেষে বিজয়নগর আল রাজি কমপ্লেক্সের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে আগামী ৬ জানুয়ারি সারাদেশে হরতাল ও ৭ তারিখ ভোটগ্রহণের দিন সারাদেশে গণকারফিউ পালনের জন্য দেশবাসীকে আহবান জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নূর। পল্টনের আল-রাজি কমপ্লেক্সের সামনে এক সমাবেশ থেকে তিনি এ আহবান জানান।

বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেছেন, ৭ জানুয়ারি ১২ দলীয় জোট সকাল-সন্ধ্যা গণকারফিউ পালন করবে। প্রেস ক্লাব ও পল্টন এলাকায় গণসংযোগ এবং পদযাত্রা শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।

ভোট বর্জনের আহŸান জানিয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট অলি আহমদ বলেছেন, ভোটের দিন ঘরে বসে থাকুন, ভোট দেওয়া থেকে বিরত থানুন। দলের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

আসন্ন সংসদ নির্বাচন স্থগিত করে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। তারা বলেছেন, কোনো দেশপ্রেমিক মানুষ সরকারের এই প্রহসনের নির্বাচনে ভোট দিতে যাবে না।

গণতন্ত্র মঞ্চের কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম। গণসংযোগ পরবর্তী সভায় গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকার এক মুহূর্ত দমন-পীড়নের যন্ত্রকে কাজে না লাগিয়ে ক্ষমতায় টিকতে পারছে না। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকার নির্বাচনের এক-দুদিন আগে দেশে এ রকম একটা পরিস্থিতি করেছে যে বাস্তবে তারা জনগণের বিরুদ্ধে একটা যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেছে। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ এবং নাগরিক ঐক্যের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রব। সভা সঞ্চালনা করেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্যসচিব হাবিবুর রহমান। সভার আগে জাতীয় প্রেস ক্লাব সংলগ্ন মেহেরবা প্লাজার সামনে থেকে গণসংযোগ ও মিছিল শুরু করেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। যা পুরানা পল্টন মোড় থেকে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট ঘুরে প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।

৭ জানুয়ারি প্রহসনমূলক নির্বাচনের দিনকে দেশ ও জাতির জন্য গভীর অন্ধকারাচ্ছন্ন ‘কালো দিন’ হিসেবে অভিহিত করে সেদিন সকাল-সন্ধ্যা নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করে ‘স্বেচ্ছায় প্রতিবাদী লকডাউন’ পালন করার আহবান জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি -‘এবি পার্টি’। শুক্রবার দুপুর ১২টায় পল্টন, বিজয় নগর ও সেগুনবাগিচা এলাকার জনসাধারণ ও পথচারীদের মাঝে প্রতিবাদী গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিলি করার সময় এ আহবান জানান এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে