শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

আমি হারিনি, হেরেছে তারা : জাহাঙ্গীর 

গাজীপুর প্রতিনিধি
  ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৫৯
আমি হারিনি, হেরেছে তারা : জাহাঙ্গীর 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থনপুষ্ট দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী হেরে গেছেন। তারা হলেন গাজীপুর—১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম রাসেল ও গাজীপুর—২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন প্রার্থী। তবে গাজীপুর—৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আখতারউজ্জামান প্রায় ১৫ হাজার ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছেন।

গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি হারিনি, হেরেছে তারা৷ আমি ৮ লাখ আওয়ামী লীগের পক্ষে আর মন্ত্রীরা ২ লাখ আওয়ামী লীগের লোক। কারণ ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ ছিল ৮ লক্ষ আর এখন ২ লক্ষ। তারা আওয়ামী লীগকে দুর্বল করেছে। দুই মন্ত্রীর বোঝা উচিত ছিল আওয়ামী লীগের লোকজন ২ লাখ ভোট তাদের বিপক্ষে দিয়েছে। ২০১৮ সালের ভোটে আ ক ম মোজাম্মেল পাইছিল প্রায় ৪ লাখ ভোট। এবছর পাইছে ১ লক্ষ ভোট। তাহলে ৩ লক্ষ আওয়ামী লীগের ভোট তার থেকে সরে গেছে। জাহিদ আহসান রাসেল পাইছিল পৌনে ৫ লক্ষ ভোট। এবার ৩ লক্ষ ভোট ছুইটা গেছে। তারমানে দেখেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রীর ভোট আওয়ামী লীগ থেকে ছুটে গেছে।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, গত বছরের ২৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। খেলাপি ঋণ থাকার কারণে তার মনোনয়ন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। আপিল করেও মনোনয়ন ফিরে না পাওয়ায় তিনি মা জায়েদা খাতুনকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনী মাঠে থাকায় তাকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করে আওয়ামী লীগ। নিজের মনোনয়ন বাতিল, দলীয় পরিচয় হারানোর পরও মাকে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে দৃঢ় অবস্থান নেন জাহাঙ্গীর আলম। প্রচার প্রচারণার সময় বেশ কয়েক দফা তিনি ও তার মা হামলার শিকার হন। প্রচারে বাধা দেয়া, এজেন্টদের হুমকি ও হয়রানি করার অভিযোগ করা হয় জায়েদা খাতুনের পক্ষ থেকে। ভোট গ্রহণের দিন অনেক কেন্দ্রে জায়েদা খাতুনের এজেন্টও দেখা যায়নি। কিন্তু ভোটের ফলে বাজিমাত করেন জায়েদা। মূলত তার ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ছায়ার কাছেই হেরে যান আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান। সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর মেয়র থাকার সময় গাজীপুরে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি বিতর্কিত বক্তব্যের জেরে তাকে দলীয় পদ হারাতে হয়। সাময়িক বরখাস্ত করা হয় মেয়র পদ থেকে।

বিগত সময়ে তার বরখাস্তের পেছনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের হাত ছিল। যার কারণে তিনি এবার সংসদ নির্বাচনে নিজে প্রার্থী না হয়ে গাজীপুর—১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম রাসেল, গাজীপুর— ২ আসনের কাজী আলীম উদ্দিন ও ৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারউজ্জামানকে সমর্থন দেন। গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে তিনজন প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক প্রচার প্রচারনা চালান। কোথাও কোথাও প্রার্থীদের চেয়ে তার ভূমিকা ছিল স্বতঃর্স্ফূত। ব্যাপক সারাও ফেলেছিলেন। তার কারণে নৌকার প্রার্থী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপিও এক ধরনের চাপের মধ্যে ছিলেন। প্রচারনার সময় একে অপরের সঙ্গে তুমুল বাকযুদ্ধ, আলোচনা সমালোচনা।

নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নির্বাচনে ৫ টি আসনের ৪ টিতেই জয়লাভ করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ১ টি আসনে নৌকার প্রার্থীকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছে। ফলাফল অনুয়ায়ী গাজীপুর ১ আসনের বেসরকারি ভাবে বিজয়ী হয়েছেন আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি পেয়েছন ১০৯২১৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রেজাউল করিম রাসেল স্বতন্ত্র ৯২৭৮৮ ভোট।

গাজীপুর—২ আসনে বেসরকারি ভাবে বিজয়ী জাহিদ আহসান রাসেল। তিনি পেয়েছেন ১০৪,৪৭৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আলিম উদ্দিন পেয়েছেন ৮৪,১২৯ ভোট।

গাজীপুর ৫ আসনের বেসরকারি ভাবে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামান। তিনি পেয়েছেন ৮২৭২০ ভোট । তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি মেহের আফরোজ চুমকি। তিনি পেয়েছেন ৬৭৭৮৩ ভোট।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি চারটি আসনের প্রার্থীর পক্ষে ছিলাম। সেখানে দুইজন প্রার্থী হেরেছে কিন্তু অন্য দুইজন জিতেছে। আমি সিমিন হোসেন রিমির পক্ষেও ছিলাম। শুধু বুদ্দিন আর রাসেল হারছে। যখন তারা এমপি ছিল তখন তাদের ভোট ছিল, মন্ত্রী হওয়ার পর তাদের ভোট কমছে। তারমানে এলাকায় সুশাসন দেয়নি, নেতাদের মূল্যায়ন করেনি। ক্ষমতায় থাকার পর ভোট কমে কি ভাবে? আমি এটা প্রমানের জন্য ভোটে স্বতন্ত্রদের সাপোর্ট দিয়েছি।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে