শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্লট কেলেঙ্কারীর সেই হাবিবুর হতে চান উপজেলা চেয়ারম্যান

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি
  ০৬ মার্চ ২০২৪, ১৩:২০
ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয়দের ভোটে চেয়ারম্যান হতে চান গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান। আর এ কারণে তিনি নিজের পোস্টারে পোষ্টারে সয়লাব করেছেন উপজেলা সর্বত্র। তবে এ নিয়ে স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে শুরু হয়েছে নানা মুখরোচক কথা। কেউ বলছেন পূর্বাঞ্চলের প্লট কেলেঙ্কারীর সাথে জড়িত এ হাবিবুর নিজেকে বাঁচাতে কৌশল অবলম্বন করছেন। আবার কেউ বলছেন নিজের কালো টাকাকে সাদা করার কুটকৌশল নিয়েছে হাবিবুর।

জানা গেছে, হাবিবুর রহমান উপজেলা নাগরী ইউনিয়নের তালিয়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। কিন্তু ওই ইউনিয়নের বড়কাউ গ্রামে নিজের আবাসন দেখিয়ে প্লট জালিয়াতি করে একাধিক প্লট হাতিয়ে নিয়েছেন এমন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নিজের নামে তো প্লট নিয়েছেনই সাথে ৬ ভাই, ২ বোন, বাবা-মা ও স্ত্রীর নামেও বরাদ্ধ নিয়েছেন প্লট। হাবিবুর রাজধানী ঢাকার উত্তরায় বসবাস করলেও সপ্তাহে ২/১ বার আসেন নিজ গ্রাম তালিয়ায়।

এ ব্যাপারে কথা হয় উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তারা জানান, উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম পূর্বাঞ্চলে অন্তর্ভূক্ত হলে রাতারাতি খুুলে যায় হাবিবুরের ভাগ্যের চাকা। প্লট বানিজ্য করে কয়েক বছরেই বনে যান শত শত কোটি টাকার মালিক। এখন সেই কালো টাকা সাদা করতে তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করার সুযোগ খুঁজছে, যাতে করে নিজেকে বাঁচানো যায়। এ নিয়ে গেল বছর দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রচার হয় হাবিবুর রহমানের প্লট কেলেঙ্কারির বিষয়। সেখানে দেখা যায় এই হাবিবুর নিজের অপকর্ম ঢাকতে প্রতিবেদককে উৎকোচ দেওয়ার চেষ্টা করেন। তৎকালীন সময় বিষয়টি স্থানীয়ভাবে টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হয়।

এক সময়ের সমৃদ্ধ জীবন থেকে প্রায় ভিখেরী বনে যাওয়া এই গল্পগুলো একটি, দুইটি পরিবারের নয়। পৈতৃক প্রায় শত বিঘা জমির মালিক উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বড়কাউ গ্রামের হামেদ আলী ও চার ভাই। ভিটা-মাটি সব গেছে। এখন দিন চলছে অন্যের জমিতে দিন মজুরের কাজ করে। নিজেদের নামে বিঘার পর বিঘা জমি থাকার পরও প্লট মিলেনি তার ও চার ভাইয়ের। তাদের বর্তমান আর ভবিষ্যত জুরে এখন শুধুই অনিশ্চয়তা আর অন্ধকার।

হামেদ আলী বলেন, আমাদের একশ বিঘা সম্পত্তি থেকে আমরা ৫ ভাই ও ৩ বোন মিলে ভাগ করে নিয়েছি। কতিপয় স্বার্থন্নেসী চক্রের মাধ্যমে এই সম্পত্তি সম্পূর্ণ নিয়ে গেছে রাজউক। আমরা কোন ক্ষতি পূরণ পাই নাই। তারা বলছে ৪/৫ লাখ টাকা দিলে আমাদের প্লট দিবে। তখন আমাদের কোন টাকা পয়সা না থাকায় বউয়ের স্বর্ণালঙ্কার এবং পালের গরু ও গাভী বিক্রি করে তারপর টাকা দিয়েছি। একই সাথে কাগজপত্র জমা দিয়েছি। কিন্তু রাজউক আমাদের কোন প্লট দেয় নাই। বরং স্থানীয় বাসিন্দা না হয়েও তালিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান ও তার পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে হয়েছে একাধিক প্লট।

তালিয়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ফিরোজ তালুকদার বলেন, একটা মানুষের দুইটা ঠিকানা হতে পারে না। কস্টি পাথর দিয়ে যাচাই-বাছাই করে দেখেন হাবিবুরদের পরিবারের বড়কাউ গ্রামে কোন বাড়ি ঘর ছিল না।

তালিয়া গ্রামে আরেক বাসিন্দা নাসির উদ্দিন নাসু বলেন, হাবিবুরের বাব-দাদার আমলে গত কয়েক পিরি থেকে পুরো পরিবার এই তালিয়া গ্রামেই বসবাস করে আসছে। তাদের বড়কাউ গ্রামে কোন বাড়ি ঘর নাই এবং কখনোই ছিল না।

এ ব্যাপারে হাবিবুর রহমান বলেন, নাগরী ইউনিয়নের তালিয়া গ্রামে আমাদের স্থায়ী বাড়ি। এখানে ৩৯ বিঘা জমির বিশাল এরিয়া জুড়ে আমাদের বাড়ি। তাহলে আপনারা রাজউকের এতোগুলো প্লট কিভাবে পেয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে হাবিবুর বলেন, প্লট পাওয়ার জন্য বড়কাউ গ্রামে আমরা বাগান বাড়ি করেছি। আর সে কারণেই ওই ঠিকানায় পেয়েছি প্লট। তবে সেই জমির কাগজপত্র আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন নাই পরে সময় নিয়ে আসলে অবশ্যই দেখাতে পারবো।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে