মার্কিন ভিসানীতির গুজবে দেশের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। এদিন লেনদেন শুরুর পর থেকেই অধিকাংশ শেয়ারের দর কমতে থাকে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় বিএসইসির চেয়ারম্যানের নাম রয়েছেÑ এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। তাই লেনদেনের সময় যতই গড়াতে থাকে শেয়ার বিক্রির চাপও বাড়তে থাকে। ফলে দিনশেষে বড় ধরনের দরপতন হয়।
জানা গেছে, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুয়াইয়াত-উল-ইসলাম নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। যদিও বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএসইসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো কার্যক্রম নেই। তাই ভিসা বাতিল বা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পুরোটাই গুজব।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার প্রথম দেড় ঘণ্টা সূচক ওঠানামার মধ্য দিয়ে লেনদেন হয়। শেষ তিন ঘণ্টা লেনদেন হয়েছে শেয়ার বিক্রির চাপের মধ্য দিয়ে। বীমা, বস্ত্র এবং প্রকৌশল খাতসহ সবকয়টি খাতের শেয়ারের দর কমতেই থাকে।
ব্রোকারেজ হাউজ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার খবরে শেয়ারবাজারে এমন বড় পতন হয়েছে। যে কারণে এদিন শেয়ার ক্রয়ের চেয়ে বিক্রি করতেই বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে বিনিয়োগকারীরা। এতে করে বাড়তি চাপ তৈরি হয় শেয়ারবাজারে। যার ফলে সূচকের বড় পতন হয়েছে।
এদিকে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে এই চাপ সাময়িক। দুই-এক দিনের মধ্যে তা ঠিক হয়ে যাবে। আর বিএসইসির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই বলেও মনে করছেন তারা। স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর তথ্য অনুযায়ী, রোববার শেয়ারবাজারের সব সূচক কমেছে। পাশাপাশি টাকার পরিমাণে লেনদেনও কম ছিল। আর যে পরিমাণ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে তার চেয়ে ১২ গুণের বেশি দর কমেছে।
এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৮.৮১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৮০.৯৩ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫.৯৩ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৯.২৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৫৮.৬৭ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ১৩৬.৮৫ পয়েন্টে।
ডিএসইতে ৩১০টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২টির বা ৩.৮৭ শতাংশের দর বেড়েছে। শেয়ার দর কমেছে ১৪৮টির বা ৪৭.৭৪ শতাংশের এবং ১৫০টির বা ৪৮.৩৯ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
ডিএসইতে এদিন ৫০০ কোটি ৭৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ২৩৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা কম। আগের কার্যদিবস অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ৭৩৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই এদিন ৬৮.৭০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৫৯৫.৪৯ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসসিএক্স ৪১.৫০ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ১৮.৩৩ পয়েন্ট, সিএসই-৫০ সূচক ২.৬৪ পয়েন্ট এবং সিএসআই ২.৩৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১ হাজার ১১৭.০৩ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৩৬০.২৪ পয়েন্টে, এক হাজার ৩০৫.৫৯ পয়েন্টে এবং এক হাজার ১৬৮.৭৪ পয়েন্টে।
এদিন সিএসইতে ১৪৩টি প্রতিষ্ঠানে লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৩টির, কমেছে ৮০টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৫০টি প্রতিষ্ঠানের। এদিন সিএসইতে ৮ কোটি ১৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।
গত দুই সপ্তাহ ধরে ইতিবাচক ধারায় চলছিল শেয়ারবাজার। বিশেষ করে গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারের মূলধন তিন হাজার কোটি টাকার বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। লেনদেনও বেড়েছে এক হাজার ১৪০ কোটি টাকা। একইসঙ্গে সব মূল্যসূচকের ঊর্ধ্বমূখী প্রবণতায় গত সপ্তাহ পার করেছে। বিনিয়োগকারীরা যখন আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন, তখনই একটি কুচক্রী মহল দেশের শেয়ারবাজারের বড় পতন ঘটাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিএসইসি চেয়ারম্যানকে নিয়ে গুজব ছড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। ফেসবুকভিত্তিক শেয়ারবাজার বিষয়ক বিভিন্ন গ্রæপে এ গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
সূত্রমতে, বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে জানান, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশিদের জন্য ভিসানীতি প্রয়োগ শুরু করেছে।
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করার কথা উল্লেখ করা হয়। দেশের শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। ফলে বিএসইসি বা এর কোনো কর্মকর্তার ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ বা নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করলেও কিছু ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন জনের নাম উল্লেখ করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে একটি চক্র।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন বলেন, ভিসানীতির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় ছিল। এটি হঠাৎ করে আসেনি। তাই বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যারা আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করেছেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কারণ হয়তো দুয়েক দিনের মধ্যেই আতঙ্ক কেটে যাবে। কিন্তু যারা শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন তারা পুঁজি হারিয়েছেন।
যাযাদি/ এস