ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর দামামা বাজছে আরেক বিশ্ব আসরের। চলতি বছরের জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পর্দা উঠছে টি২০ বিশ্বকাপের। আসন্ন টি২০ বিশ্বকাপের পর্দা উঠবে আগামী ৪ জুন। আসরের জন্য চূড়ান্ত হওয়া ২০টি দলকে চারটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। আগামী টি২০ বিশ্বকাপের গ্রুপিং এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি আইসিসি। তবে এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ বিশ্বকাপের গ্রুপিং প্রকাশ করে দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে অনুষ্ঠেয় বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্টের ‘ডি’ গ্রুপে পড়েছে বাংলাদেশ। এই মহাযজ্ঞের গ্রুপ পর্বে প্রতিপক্ষ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, নেদারল্যান্ডস ও নেপালকে পেয়েছে লাল-সবুজরা। বিশ্বকাপের প্রথম পর্বের গ্রুপিং লক্ষ্য করলে গ্রুপ অব ডেথে পড়েছে বাংলাদেশ।

আইসিসির পূর্ণ সদস্য দুই দল দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলংকার পাশাপাশি সহযোগী সদস্য নেদারল্যান্ডসও টি২০তে বেশ শক্তিশালী দল। এ ছাড়া একমাত্র ‘ডি’ গ্রুপেরই চারটি দল টি২০ বিশ্বকাপের গত আসরের পারফরম্যান্স ও র‌্যাংকিংয়ের ভিত্তিতে এবার সরাসরি সুযোগ পেয়েছে। সবশেষ আসরের শীর্ষ আটের মধ্যে ছিল নেদারল্যান্ডস। সুপার টুয়েলভে তারা হারিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়েকে।

শক্তির বিচারে তুলনামূলক কঠিন গ্রুপে পড়েছে টাইগাররা। আইসিসির পূর্ণ সদস্য দুই দল দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলংকার পাশাপাশি গ্রুপপর্বে সহযোগী সদস্য নেদারল্যান্ডস বাধাও কাটাতে হবে টাইগারদের। তাই সেরা আটে উঠার লড়াইয়ে বাংলাদেশকে বড় চ্যালেঞ্জই মোকাবিলা করতে হবে।

বাছাইপর্ব পেরিয়ে আসা ‘ডি’ গ্রুপের একমাত্র দল হলো নেপাল। বাকি তিনটি গ্রুপেই আছে বাছাইয়ের লড়াইয়ে উতরে যাওয়া একাধিক দল। ডি গ্রুপে শক্তিমত্তায় এগিয়ে থাকা প্রোটিয়াদের পর বাংলাদেশ-শ্রীলংকার মধ্যে সবচেয়ে বড় লড়াইটা হতে পারে। লঙ্কানদের হারাতে পারলে সুপার এইটের পথে অনেকটাই এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। তবে নেদারল্যান্ডস ম্যাচটাও গুরুত্বপূর্ণ হবে টাইগারদের জন্য।

এদিকে আবারও গ্রুপ পর্বেই মুখোমুখি হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি ভারত ও পাকিস্তান। গ্রুপ ‘এ’-তে তারা আছে আয়ারল্যান্ড, স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সঙ্গে। অন্যদিকে গ্রুপ ‘বি’তে পড়েছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নামিবিয়া, স্কটল্যান্ড ও ওমান। আর ‘সি’ গ্রুপে নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তানের সঙ্গী উগান্ডা এবং পাপুয়া নিউগিনি।

এদিকে দর্শকদের আবাসন ও যাত্রার বিষয়টি মাথায় রেখে কয়েকটি দলের সুপার এইটের ভেন্যু চূড়ান্ত করেছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজে এবং রানারআপ হলে যুক্তরাষ্ট্রে সুপার এইটের ম্যাচগুলো খেলবে লাল-সবুজরা।

এশিয়ার সাত দলের পাঁচটিরই ম্যাচ রাখা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে ক্রিকেটের প্রসার ঘটাতে এবং সেখানে অবস্থানরত বিশাল সংখ্যক এশিয়ান প্রবাসীদের কথা মাথায় রেখে এমনটা করা হয়েছে। তবে রাজনৈতিক দিক থেকে ‘সম্ভাব্য স্পর্শকাতর’ বিবেচনায় আফগানিস্তানের কোনো ম্যাচ যুক্তরাষ্ট্রে নেই।

প্রথম পর্বের প্রতিটি গ্রুপ থেকে শীর্ষ দুটি করে দল চলে যাবে সুপার এইটে। সেখানে আটটি দল খেলবে দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে। প্রথম পর্বের গ্রুপ থেকেই ওই দুই গ্রুপের সম্ভাব্য একটি ধারণা পাওয়া যায়। কারণ আগে থেকেই তাদের অবস্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। ‘এ-১’ ধরা হয়েছে ভারতকে, ‘এ-২’ ধরা হয়েছে পাকিস্তানকে। একইভাবে ইংল্যান্ড ‘বি-১’, অস্ট্রেলিয়া ‘বি-২’, নিউজিল্যান্ড ‘সি-১’, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘সি-২’, দক্ষিণ আফ্রিকা ‘ডি-১’ ও শ্রীলংকা ‘ডি-২’ হিসেবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বা রানার্সআপ হওয়াতে নির্ধারিত অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না।

আগে থেকে নির্ধারিত অবস্থান অনুযায়ী, সুপার এইটের এক নম্বর গ্রুপে খেলবে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলংকা। এই গ্রুপের ম্যাচগুলো হবে যুক্তরাষ্ট্রে। দুই নম্বর গ্রুপে খেলবে পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এই গ্রুপের ম্যাচগুলো হবে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে। এই আট দলের বাইরে কোনো দল সুপার এইটে উঠলে তারা বাদ পড়া দলটির নির্ধারিত অবস্থান গ্রহণ করবে। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, সমর্থকদের আগে থেকে পরিকল্পনা করার সুযোগ করে দিতেই এমন পদ্ধতি। ক্রিকেটের বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে অবশ্য এটি নতুন কিছু নয়।

এক নজরে ২০২৪ টি২০ বিশ্বকাপের ২০ দল

প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মূলপর্বে জায়গা করে নিয়ে ইতিহাস গড়েছে উগান্ডা। সেই সঙ্গে চ‚ড়ান্ত হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে হতে যাওয়া ২০২৪ টি২০ বিশ্বকাপের ২০ দল।

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে যেন ‘সারপ্রাইজ প্যাকেজ’ আফ্রিকার দেশ উগান্ডা। আফ্রিকান অঞ্চলের বাছাইপর্বে শক্তিশালী জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়াকে হারিয়ে তারা বিশ্বকাপের মূলপর্বে এক পা দিয়ে রেখেছিল আগেই। গত বৃহস্পতিবার নিজেদের শেষ ম্যাচে রুয়ান্ডাকে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে নিশ্চিতই হয়ে গেছে উগান্ডার বিশ্বকাপের অংশগ্রহণ।

মূলত ফুটবলের মতো ক্রিকেটকে পৃথিবীব্যাপী জনপ্রিয় করে তুলতে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা বাড়িয়েছে আইসিসি। যদিও ফুটবল বিশ্বকাপ ও গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টগুলোতে ৩২টি দল অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছে ফিফা। প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকা আইসিসি এবার তাই ২০ দল নিয়ে টুর্নামেন্ট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়েছিল ১২ দল নিয়ে।

স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২০২২ টি২০ বিশ্বকাপে পারফরম্যান্স বিবেচনায় আসন্ন আসরের মূলপর্বে জায়গা করে নিয়েছে ১২টি দল। গত বিশ্বকাপের শীর্ষ আট দল- অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা এবং র‌্যাংকিং বিবেচনায় রয়েছে আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ।

এছাড়া মহাদেশভিত্তিক কোয়ালিফায়ার খেলে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছে আয়ারল্যান্ডস, স্কটল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি, কানাডা, নেপাল, ওমান, নামিবিয়া এবং উগান্ডা।

যাযাদি/ এসএম