বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২
নারী এশিয়ান কাপ বাছাই পর্ব

ঋতুপর্ণার নৈপুণ্যে এশিয়ান কাপের মূল পর্বে এক পা বাংলাদেশের

ক্রীড়া ডেস্ক
  ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭:৫০
আপডেট  : ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮:১০
ঋতুপর্ণার নৈপুণ্যে এশিয়ান কাপের মূল পর্বে এক পা বাংলাদেশের
মিয়ানমারের বিপক্ষে গোলের পর উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশের মেয়েরা-ফাইল ছবি

রেফারির শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে বাংলাদেশের নারী ফুটবলাদের বাধভাঙ্গা উল্লাস। আজ বুধবার (২ জুলাই) স্বাগতিক মিয়ানমারকে ২-১ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা।

আর এই জয়ে আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় নারী এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলা এখন বাংলাদেশের জন্য সময়ের অপেক্ষা মাত্র। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ পুরুষ ফুটবল দল প্রথমবারের মতো খেলেছিল এশিয়া কাপে। নারী ফুটবলে কখনো এশিয়ার শীর্ষ পর্যায়ে খেলা হয়নি।

এরআগে নারী এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে স্বাগতিক মিয়ানমারের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশের মেয়েরা। এদিন ম্যাচের ১৮ মিনিটে ঋতুপর্ণার গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে গেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

মিয়ানমারের ইয়াংগুনের থুয়ান্না স্টেডিয়ামে বুধবার স্বাগতিকদের বাছাইয়ের ম্যাচে ২-১ গোলে হারিয়েছে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ১৯তম মিনিটে দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর ৭২তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ঋতুপর্ণা। শেষ দিকে ব্যবধান কমান মিয়ানমারের উইন উইন।

বাহরাইনের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৭-০ ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। টানা দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ‘সি’ গ্রুপের টেবিলে শীর্ষে উঠল পিটার জেমস বাটলারের দল। তুর্কমেনিস্তানকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে বাছাই শুরু করা মিয়ানমারের পয়েন্ট ৩।

গ্রুপ পর্বে নিজেদের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে আগামী শনিবার তুর্কমেনিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এ ম্যাচে অনাকাঙ্খিত কিছু না ঘটলে আগামী বছর অস্ট্রেলিয়া হতে যাওয়া এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলা নিশ্চিত করবেন আফঈদা-স্বপ্নারা।

ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ৭৩ ধাপ এগিয়ে মিয়ানমার। দুই দলের সবশেষ দেখায় ৫-০ গোলের বড় হারের অতীত সঙ্গী ছিল বাংলাদেশের। তাছাড়া খেলাও প্রতিপক্ষের মাঠে, দর্শকের সামনে। সবকিছুই ছিল মারিয়া-মনিকাদের প্রতিকূলে। তবে বাহরাইন ম্যাচ জিতে দারুণ আত্মবিশ্বাসী ছিল মেয়েরা।

মূল পর্বের এক টিকেটের দাবিদার দুই দলের লড়াইয়ে শুরু থেকে মেলে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাসও। দ্বিতীয় মিনিটে বাইলাইনের একটু ওপর থেকে মনিকা চাকমার ক্রস গ্লাভসে জমান মিয়ানমার গোলকিপার। পরের মিনিটে মিয়ানমারের আক্রমণ বক্সের ভেতরে ব্লকড করেন শামসুন্নাহার সিনিয়র।

দ্বাদশ মিনিটে বাংলাদেশের ত্রাতা রুপনা চাকমা। মাঝমাঠ থেকে আচমকা আসা থ্রু পাসের নাগাল মিয়ানমারের ফরোয়ার্ডেরা পাওয়ার আগেই এক ছুটে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে ক্লিয়ার করেন তিনি।

অষ্টাদশ মিনিটে পায়ের কারিকুরিতে দুই ডিফেন্ডারের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যেতে চেয়েছিলেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। কিন্তু বক্সের ঠিক ওপরেই ফাউলের শিকার হন তিনি। ঋতুপর্ণার ফ্রি কিক রক্ষণ দেয়ালে প্রতিহত হওয়ার পর এই ফরোয়ার্ডেরই ফিরতি নিচু শট দূরের পোস্ট দিয়ে জালে জড়ায়। এগিয়ে যাওয়ার আনন্দে মেতে ওঠে বাংলাদেশের ডাগআউট।

২৪তম মিনিটে পোস্টের বাধায় দ্বিগুণ হয়নি ব্যবধান। বাম প্রান্ত থেকে ঋতুপর্ণার ক্রসে ছোট বক্সের ভেতরে শামসুন্নাহার জুনিয়র ট্যাপ করলেও বল পোস্টে লেগে প্রতিহত হয়। দারুণ সুযোগ নষ্টের হতাশায় মুখ ঢাকেন এই ফরোয়ার্ড।

৩১তম মিনিটে ফিউ ফউ উইনের দূরপাল্লার ফ্রি কিক সহজেই ফেরান রুপনা। ছয় মিনিট পর বিপদে পড়তে বসেছিল বাংলাদেশ। কিছুটা দায় ছিল রুপনারও। আক্রমণ আটকাতে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে বল ক্লিয়ার করতে পারেননি তিনি। বলের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় খিন মো মো তুনের পায়ে। তবে মিয়ানমার অধিনায়কের শট বাইরে দিয়ে গেলে বেঁচে যায় বাংলাদেশ।

প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে মিয়ানমারের একটি প্রচেষ্টা ক্রসবারে লেগে ফেরে। শেষ দিকে শান থ থ ভালো জায়গায় বল পেয়েও দূরের পোস্টের অনেক বাইরে মেরে হতাশা প্রকাশ করেন। এরপর প্রতিপক্ষের ট্যাকলে পড়ে যাওয়ার পর মাথার পেছন দিকে বার বার হাত দিতে দেখা যায় শামসুন্নাহার জুনিয়রকে।

তার চোখে মুখে ফুটে ওঠে ব্যথা পাওয়ার ছাপ। কিছুক্ষণ চিকিৎসা নেওয়ার পর উঠে দাঁড়ান তিনি। এরপরই বাজে বিরতির বাঁশি। এগিয়ে থাকার স্বস্তি নিয়ে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

বিরতির পর বাংলাদেশের রক্ষণে চাপ বাড়ায় সমতায় ফিরতে মরিয়া মিয়ানমার। শান থ থ’র দফায় দফায় হানা দিতে থাকেন। তবে শামসুন্নাহার সিনিয়র, আফঈদা খন্দকাররা দারুণ দৃঢ়তায় ভেস্তে দিতে থাকেন প্রতিপক্ষের প্রচেষ্টা।

৭২তম মিনিটে ম্যাচে চালকের আসনে বসে যায় বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের বক্সের একটু উপর বল পেয়ে একটু এগিয়ে এক ডিফেন্ডারের সামনে থেকে বাম পায়ে শট নেন ঋতুপর্ণা। বল হাওয়ায় ভেসে গোলরক্ষককের মাথার উপর দিয়ে লুটোপুটি খায় জালে।

৭৭তম মিনিটে দলের ত্রাতা রুপনা। সতীর্থের থ্রু পাস পেয়ে মাইয়াত এহিন বক্সে ঢুকে পড়েন। পরিস্থিতি বুঝে দ্রুত ছুটে গিয়ে এই ফরোয়ার্ডের পথ আগলে দাঁড়ান রুপনা। ডজে তাকে ফাঁকি দিতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ মাইয়াত। ঝাঁপিয়ে বল গ্লাভসে নেন দুটি উইমেন’স সাফ জয়ী এই গোলকিপার।

এরপর সময় যত গড়াতে থাকে, প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার সম্ভাবনাও জোরাল হতে থাকে বাংলাদেশের। রক্ষণ জমাট রাখায় আরও মনোযাগী হয় মেয়েরা। তবে ৮৮তম মিনিটে ম্যাচে ফেরা উপলক্ষ্য পায় মিয়ানমার। সতীর্থের আড়াআড়ি ক্রসে আনমার্কড থাকা উইন উইন নিখুঁত টোকায় পরাস্ত করেন রুপনাকে।

এই ধাক্কাটুকু সামলে বাকি সময় ব্যবধান ধরে রেখে কাটিয়ে দেয় মেয়েরা। শেষের বাঁশি বাজতেই দুর্দান্ত এই জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে বাংলাদেশের মেয়েরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে