রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় এবার ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে গুরুতর কোনো আহতের ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করা হয়েছে। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে দফায় দফায় বড় ধরনের বিমান ও ড্রোন হামলার মধ্যে মস্কোয় এই হামলার ঘটনা ঘটল। রাশিয়া অভিযোগ করেছে, ইউক্রেন মঙ্গলবার ভোরে মস্কোয় ড্রোন হামলা চালিয়েছে। গত বছর ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া যুদ্ধ শুরু করার পর এই প্রথম মস্কোয় একাধিক ড্রোন দিয়ে এ রকম পাল্টা হামলা চালানো হলো। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, অন্তত আটটি ড্রোন দিয়ে কিয়েভ একটি 'সন্ত্রাসী হামলা' চালিয়েছে। এতে কিছু ভবনের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন বলেছেন, হামলায় কেউ গুরুতর আহত হয়নি। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের একজন কর্মকর্তা মিখাইলো পোদোলিয়াক বলেছেন, এই হামলায় কিয়েভ সরাসরি জড়িত ছিল না। তবে এ রকম ঘটনা যে ঘটেছে, এতে ইউক্রেন খুশি এবং এমন হামলা আরও বাড়বে বলে তারা ধারণা করছেন।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, আটটি ড্রোনকেই মাঝপথে থামাতে পাল্টা হামলা চালানো হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, 'এর মধ্যে তিনটি ড্রোনকে ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাঝপথে আটকানো হয়, এর ফলে এগুলো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য থেকে বিচু্যত হয়। অপর পাঁচটি ড্রোন পান্টসির-এস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়।'
এর আগে রুশ গণমাধ্যমের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, হামলায় ৩০টির মতো ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ বলছে, গুলি করে ধ্বংস করার পর এগুলো বিভিন্ন ভবনের ওপর গিয়ে পড়েছিল। মস্কোর মেয়র সোবিয়ানিন বলেছেন, রাজধানীর কিছু মানুষকে তাদের বাড়িঘর থেকে সরিয়ে নিতে হয়েছিল। পরে অবশ্য তারা বাড়িতে ফিরে যেতে পেরেছে। দুইজন মানুষকে চিকিৎসা দিতে হয়েছে।
স্থানীয় সময় ভোর ৬-২৪ মিনিটে উত্তর-পশ্চিম মস্কোয় একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। বিস্ফোরণের শব্দে তার জানালার কাচ কাঁপছিল। এরপর ৬টা ৫৮ মিনিটে আরেকটি বিস্ফোরণ শোনা যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ধরনের কথাবার্তা চলছে, এতে বোঝা যায়- মস্কোর আরও বহু মানুষ এ ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছে।
মস্কোয় এই ড্রোন হামলা হলো আগের রাতে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ড্রোন হামলার পর। ওই হামলায় অন্তত একজন মারা গেছে। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে অন্তত ২০টি ড্রোন হামলা ঠেকানো হয়েছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত ড্রোনের টুকরা পড়ার পর কিছু ভবনে আগুনে ধরে গিয়েছিল। ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান জেনারেল কিরলো বুদানভ মস্কোর এই ড্রোন হামলার দ্রম্নত জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিস ইন্সটিটিউটের ডক্টর জ্যাক ওয়াল্টিং বলেন, ইউক্রেন এর আগেও রাশিয়ার ভেতর এয়ারফিল্ডে হামলা করেছে। তবে রাজধানীতে এমন হামলা এই প্রথম। তবে এর আগে গত মে মাসের শুরুতে ক্রেমলিনে একটি কথিত ড্রোন হামলার খবর পাওয়া গিয়েছিল। তখন অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ক্রেমলিনের ওপর ধোঁয়ার কুন্ডলি দেখা গিয়েছিল। দ্বিতীয় একটি ভিডিওতে ক্রেমলিন কমপেস্নক্সের সিনেট ভবনের ওপর ছোট একটি বিস্ফোরণ ঘটতে দেখা যায়। তবে এসব ভিডিও যাচাই করা যায়নি। রুশ কর্তৃপক্ষ তখন দাবি করেছিল, কিয়েভের নির্দেশে ক্রেমলিনে এই হামলা হয়। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই হামলায় তার দেশের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মস্কোর বহু মানুষের জন্য ইউক্রেনের যুদ্ধ বহু দূরের একটি ঘটনা, যেটি তারা মাঝে-মধ্যে টেলিভিশনের পর্দায় দেখেন। কিন্তু প্রতিবেশী দেশে প্রেসিডেন্ট পুতিনের 'বিশেষ সামরিক অভিযানের' পাল্টা ধাক্কা এবার রাশিয়াতে লাগতে শুরু করেছে।
টানা তৃতীয় দিনের মতো কিয়েভে রুশ বিমান হামলা
এদিকে, আবারও ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে এই হামলা চালায় রুশ বাহিনী। এ নিয়ে টানা তৃতীয় দিনের মতো কিয়েভে হামলা চালাল মস্কো। রাশিয়ার আসন্ন হামলার আগেই শহরজুড়ে সাইরেন বাজানো হয়। হামলার পর কিয়েভের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অধিকাংশ রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে বলে কিয়েভ দাবি করেছে।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রুশ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কিয়েভের বেশ কয়েকটি এলাকায় আঘাত হেনেছে। বিশেষ করে রাজধানীর ঐতিহাসিক এলাকা পোদিল ও পেচেরিস্কি এলাকায় বেশ কয়েকটি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া এই হামলায় ২৭ বছর বয়সি এক নারী আহত হয়েছেন।
মে মাসজুড়েই মস্কো কিয়েভে বেশ কয়েক দফায় হামলা চালিয়েছে। এসব হামলার অধিকাংশতেই ব্যবহার করা হয়েছে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র। মঙ্গলবারের হামলা মে মাসের ১৭তম হামলা।