রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ইসরাইলি আগ্রাসন

গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩১ হাজার ছাড়াল

গাজা পুনর্গঠনে লাগবে ৯ হাজার কোটি মার্কিন ডলার রমজানে জেরুজালেমে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা
যাযাদি ডেস্ক
  ১১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে মধ্য লন্ডনে শনিবার মিছিল করেছেন হাজার হাজার মানুষ। এদিন বিক্ষোভ মিছিলটি হাইড পার্ক কর্নার থেকে নাইন এলমসের মার্কিন দূতাবাস পর্যন্ত চলে। বিক্ষোভকারীরা এ সময় বিভিন্ন দাবি সংবলিত পস্ন্যাকার্ড বহন করেন। গত ৭ অক্টোবর ইসরাইল গাজায় আক্রমণের পর, লন্ডনে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন (পিএসসি) আয়োজিত দশম বিক্ষোভ-মিছিল ছিল এটি -গার্ডিয়ান

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৩১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। রোববার এ তথ্য জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গাজায় ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞের ১৫৬তম দিন ছিল রোববার। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, আনাদলু

গাজাবাসীর হতাহতের চিত্র তুলে ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৩১ হাজার ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭২ হাজার ৬৫৪ জন। অপরদিকে, হামাসের হামলায় এক হাজার ১৩৯ জন ইসরাইলি নিহত হয়েছেন।

গাজা পুনর্গঠনে লাগবে ৯ হাজার

কোটি মার্কিন ডলার

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হামলা হচ্ছে হাসপাতালেও। এতে করে গাজার অধিকাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। আশ্রয়হীন হাজারও মানুষ থাকছেন অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে। এ অবস্থায় গাজা পুনর্গঠনে ৯০ বিলিয়ন বা ৯ হাজার কোটি মার্কিন ডলার খরচ হবে বলে জানিয়েছেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। এ ছাড়া গাজায় যা ঘটেছে, তা মিসর এবং সমগ্র অঞ্চলের জন্য চ্যালেঞ্জ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি শনিবার বলেন, তার দেশের সীমান্ত সংলগ্ন গাজা উপত্যকার পুনর্গঠনের জন্য ৯ হাজার কোটি ডলারের প্রয়োজন হবে। 'কায়রো নিউজ চ্যানেল' অনুসারে, কায়রো কনভেনশন সেন্টারে দেওয়া এক বক্তৃতায় সিসি বলেন, 'ইসরাইলি বোমা হামলার ফলে বিধ্বস্ত হওয়া গাজা উপত্যকা পুনর্র্নিমাণের জন্য কত অর্থ প্রয়োজন' এর হিসাব (মিসরীয় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে) দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন তিনি। তার দাবি, গাজা উপত্যকার পুনর্গঠনের জন্য ৯০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। তিনি উলেস্নখ করেছেন, 'গাজায় যা ঘটেছে, তা মিসর এবং সমগ্র অঞ্চলের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। রাফাহ ক্রসিং সপ্তাহে সাতদিন ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে এবং আমরা গাজা উপত্যকায় সাহায্য আনতে আগ্রহী।' তিনি আরও উলেস্নখ করেছেন, স্থলপথে সহায়তা সরবরাহে সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার কারণে মিসর গাজা উপত্যকায় বিমান থেকে ত্রাণ ফেলছে।

রমজানে জেরুজালেমে সহিংসতা

ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা

এদিকে, এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি না হওয়ায় পবিত্র রমজান মাসে জেরুজালেমে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। রমজানে আল-আকসা মসজিদে যাতায়াত ও পরিদর্শনের সুযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে হামাস। তবে ইসরাইল দাবি করছে, হামাস রমজান মাসে এই অঞ্চলটি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। যা কয়েকদিনের মধ্যেই শুরু হতে পারে। উলেস্নখ্য, আল-আকসা হলো ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। এই জায়গাটিকে ইহুদিরাও তাদের পবিত্রতম স্থান বলে মনে করে, যা তাদের কাছে 'টেম্পল মাউন্ট' নামে পরিচিত। এই জায়গাটিকে ইহুদিরা তাদের পবিত্রতম স্থান মনে করলেও, এখানে তাদের ধর্মীয় প্রার্থনা করার অনুমতি নেই। তারা শুধু এই জায়গাটিতে প্রবেশ করতে পারে।

এবারের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আল-আকসা মসজিদ ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি করেছে ইসরাইলি পুলিশ। ১৯৬৭ সালে যুদ্ধের মাধ্যমে ইসরাইল এই অংশসহ পূর্ব জেরুজালেম দখল করে। তাই এই স্থানটি ফিলিস্তিনিদের কাছে সংগ্রামের একটি প্রতীক হয়ে উঠেছে। সেখানে প্রায়ই ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার বেশিরভাগই হয় রমজান মাসেই।

২০২১ সালের মে মাসে আল-আকসায় সহিংসতায় জেরুজালেমে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। ওই ঘটনার জেরে হামাস তখন জেরুজালেমে রকেট নিক্ষেপ করে। তখন গাজায় ছোটখাটো একটা যুদ্ধও হয়। এ নিয়ে তখন আরব বিশ্ব ও ইসরাইলিদের মধ্যে ব্যাপক অস্থিরতাও দেখা দেয়। এ বছর রোজার মাস কীভাবে কাটবে, তা নির্ভর করছে ইসরাইলের ওপর। কারণ, তারা কী ধরনের উদ্যোগ বা কৌশল নেবে, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়।

চরম ডানপন্থি ইসরাইলি জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গেভির আল-আকসা মসজিদে প্রবেশে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এটি করা হবে হামাসের বিজয় উদযাপন বন্ধ ও ইসরাইলি বন্দিদের মুক্তির জন্য। তবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেছেন, রমজানের প্রথম সপ্তাহে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মসজিদে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। তবে তারা প্রতি সপ্তাহে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পুর্নমূল্যায়ন করবে। তবে এই আল-আকসায় কত সংখ্যক মুসলমানদের প্রবেশের অনুমতি মিলবে, তা এখনো স্পষ্ট করেনি ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ।

গাজা যুদ্ধের সময় পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনিদের জেরুজালেমে প্রবেশে অনেকাংশেই বাধা দেওয়া হয়েছে। তবে পবিত্র এই রমজান মাসে জুমার নামাজ পড়তে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে আল-আকসায় যেতে হবে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর চেকপোস্টের মধ্য দিয়ে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে