রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ইসরাইলি আগ্রাসন

হামলা-ক্ষুধায় রমজান শুরু গাজায়

রমজানের আগের রাতেও বোমা হামলায় নিহত ১০ পবিত্র এই মাসে যুদ্ধবিরতি হলো না অবরুদ্ধ ভূখন্ডটিতে গাজার সর্বত্রই ক্ষুধা বিরাজ করছে বিবৃতি ইউএনআরডাবিস্নউএর
যাযাদি ডেস্ক
  ১২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
রমজানের প্রথমদিনেও গাজায় ইসরাইলি হামলা

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ আরও তীব্র রূপ নিয়েছে। এদিকে, রমজানকে কেন্দ্র করে যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চালানো হলেও এখন পর্যন্ত এর কোনো আভাস পাওয়া যায়নি। ফলে গাজার সর্বত্র ক্ষুধা, ইসরাইলি অবরোধ-বোমা হামলায় ফিলিস্তিনে শুরু হয়েছে রমজান। অন্যদিকে, রোজার প্রাক্কালে ইসরাইলি বাহিনী দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশে বাধা দিয়েছে। রোববার চাঁদ দেখা যাওয়ার পর সন্ধ্যায় পবিত্র রমজান মাসের শুরু উপলক্ষে নামাজের জন্য অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে প্রবেশ করার চেষ্টা করলেও ইসরাইলি বাহিনী শত শত মুসলিস্নকে বাধা দিয়েছে। তথ্যসূত্র : এএফপি, আল-জাজিরা

ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা (ইউএনআরডাবিস্নউএ) রোববার জানিয়েছে, অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডে ইসরাইলের মারাত্মক আক্রমণের মধ্যে গাজা উপত্যকাজুড়ে ক্ষুধা ছড়িয়ে পড়েছে। ইউএনআরডাবিস্নউএ এক বিবৃতিতে বলেছে, 'গাজার সর্বত্রই ক্ষুধা বিরাজ করছে'।

'ওপেন আর্মস' নামের স্পেনভিত্তিক একটি দাতব্য সংস্থা ভূমধ্যসাগর পথে সম্প্রতি ২০০ টন খাদ্য ও ওষুধবাহী একটি জাহাজ গাজা উপত্যকার উদ্দেশে পাঠিয়েছে। রোববার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, ত্রাণবাহী জাহাজটি বর্তমানে ভূমধ্যসাগরীয় দেশ সাইপ্রাসের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরশহর লারাঙ্কায় রয়েছে, সোমবারের মধ্যে সেটি গাজার উপকূলের কাছাকাছি যাওয়ার কথা। গাজার উপকূলে পৌঁছানোর পর আমেরিকা-ভিত্তিক দাতব্য সংস্থা 'ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন'র কর্মীদের তত্ত্বাবধানে এসব ত্রাণপণ্য খালাস করা হবে বলেও বিবৃতিতে উলেস্নখ করেছে ওপেন আর্মস।

খাদ্যের অভাবে মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়া গাজা উপত্যকায় সম্প্রতি আমেরিকা, জর্ডান, কানাডা ও অন্যান্য দেশ বিমান থেকে ত্রাণের বস্তা ফেলা শুরু করেছিল। কিন্তু জাতিসংঘের ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা বিভাগ জানিয়েছে, উপত্যকায় বসবাসকারী প্রায় ২৪ লাখ ফিলিস্তিনি জনগণের সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য বিমানের চেয়ে সড়কপথ বেশি উপযোগী।

রোববার চাঁদ দেখা যাওয়ার পর সোমবার থেকে রোজা শুরু হয়েছে ফিলিস্তিনসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যে। কিন্তু প্রথম রমজানের আগের রাতেও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বোমাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছিল ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ইসরাইলি বাহিনী গাজা শহরের তাল আল-হাওয়ার পাশে একটি বাড়িতে বোমা হামলা চালিয়েছে এবং এতে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তা সংস্থা 'ওয়াফা'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে উলেস্নখ করে ওয়াফা জানিয়েছে। আহতদের নিকটবর্তী আল-শিফা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এমনকি রমজানের প্রথমদিনেও গাজায় হামলা হয়েছে।

গত অক্টোবরে গাজায় ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত পেরিয়েছে পাঁচ মাস। এই আগ্রাসনে গাজায় নিহত হয়েছেন ৩১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। এই পাঁচ মাসে গাজায় ব্যাপক বোমাবর্ষণের পাশাপাশি ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা পণ্যের সরবরাহেও বাধা দিচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে খাদ্য ও চিকিৎসা পণ্যের অভাবে মৃতু্যর মিছিল শুরু হয়েছে গাজায়।

গাজার ভৌগলিক আয়তন ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার। এই উপত্যকার উত্তর ও পশ্চিমে ইসরাইল সীমান্ত, দক্ষিণে মিসর সীমান্ত এবং পূর্বদিকে ভূমধ্যসাগর অবস্থিত। ২০০৫ সালে হামাস ক্ষমতা দখলের পর থেকে উপত্যকার উত্তর ও পশ্চিম সীমান্ত সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ইসরাইলের হাতে। এতদিন পর্যন্ত উপত্যকায় খাদ্য-ত্রাণ ও মানবিক সহায়তার সরবরাহ দক্ষিণে মিসরীয় সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করত; কিন্তু এখন সেই সীমান্তপথটিও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরাইলি বাহিনী।

রমজানে আর যুদ্ধবিরতি হলো না

আমেরিকা, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা এখনো জিম্মি হিসেবে আটককৃতদের ছাড়ের বিনিময় ইসরাইলে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি এবং ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির জন্য গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা চালিয়ে আসছিল। কিন্তু রমজান শুরুর আগে এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ জন্য উভয়পক্ষ একে অন্যকে দায়ী করছে। যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ইসরাইল বেঁচে থাকা সব জিম্মির তালিকা চেয়েছে। আর হামাস দাবি করেছে, গাজা থেকে সব ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার। এই দাবির প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা বলেছে, হামাস যুদ্ধবিরতির সুযোগ নিয়ে ইসরাইলের ভূখন্ডে পুনরায় হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা দিয়েছিলেন, আসন্ন রমজানে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি হতে যাচ্ছে গাজায়। এই বিরতির সময় উপত্যকায় ত্রাণ সরবরাহে কোনো বাধা দেবে না ইসরাইলি বাহিনী এবং এর পরিবর্তে নিজেদের হাতে থাকা জিম্মিদের মধ্যে থেকে ১০০ জনকে মুক্তি দেবে হামাস। কিন্তু বহু আকাঙ্ক্ষিত সেই যুদ্ধবিরতি চুক্তি আর হয়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে