ইসরাইল-লেবানন সীমান্তে সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহর সঙ্গে ইসরাইলি সেনাদের সংঘর্ষের মাত্রা বেড়েছে। একটি সম্ভাব্য যুদ্ধ নিয়ে উভয় পক্ষই একে-অপরকে হুমকি দিচ্ছে। হিজবুলস্নাহর হাইফা শহরের নজরদারি ফুটেজ প্রকাশের পর গোষ্ঠীটির সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইল কাটজ। গত মঙ্গলবার তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, শিগগিরই একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের সিদ্ধান্ত আসছে। এমনকি উত্তেজনা এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টাও এতে কোনো প্রভাব ফেলবে না। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে। লেবাননের দক্ষিণে আন্তঃসীমান্ত গোলাগুলি বৃদ্ধির পর উত্তেজনা কমানোর প্রচেষ্টায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত আমোস হোচস্টেইনকে লেবাননে পাঠানো হয়েছিল। ড্রোন ফুটেজ প্রকাশের মাধ্যমে ইসরাইলের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হাইফা আক্রমণ করার ইঙ্গিত দিয়েছিল হিজবুলস্নাহ।
আট মাস ধরে গাজা যুদ্ধে সংহতি প্রকাশ করে ইসরাইলের সঙ্গে গুলিবিনিময় করছে ইরান-সমর্থিত হিজবুলস্নাহ। গত সপ্তাহে ইসরাইলি হামলায় গোষ্ঠীটির এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সিনিয়র এক কমান্ডার নিহত হন। এরপর ইসরাইলি সামরিক স্থাপনাগুলোতে সবচেয়ে বড় রকেট ও ড্রোন হামলা চালায় তারা, যা নভেম্বরে থেকে শুরু হওয়া এই সংঘাতে সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে করা একটি পোস্টে কাটজ বলেছেন, 'এই খেলায় হিজবুলস্নাহ ও লেবাননের বিরুদ্ধে নিয়ম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার খুব কাছাকাছি চলে এসেছি আমরা।'
হাইফার বন্দরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করার বিষয়ে হিজবুলস্নাহর প্রধান সাইয়ে্যদ হাসান নাসরালস্নার দেওয়া হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে এই কথা বলেন কাটজ। বন্দরগুলো চীনা ও ভারতীয় সংস্থাগুলো পরিচালনা করে। এ সময় ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, 'একটি সর্বাত্মক যুদ্ধে হিজবুলস্নাহকে ধ্বংস এবং লেবাননকে নাস্তানাবুদ করা হবে।'
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী পরে বলেছিল, 'লেবাননে আক্রমণের জন্য অভিযানের পরিকল্পনায় অনুমোদন ও বৈধতা দেওয়া এবং যুদ্ধের ময়দানে সেনাদের ধারাবাহিকভাবে প্রস্তুতি বাড়ানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল।'
কাটজ আরও বলেছেন, এর জন্য ইসরাইলকে অবশ্য একটি ভারী মূল্য চুকাতে হতে পারে। তবে আমাদের দেশ ঐক্যবদ্ধ এবং এটি অবশ্যই উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা পুনরুদ্ধার করবে।
এদিকে হিজবুলস্নাহ বলেছে, গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি না হলে হামলা বন্ধ করবে না তারা। যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধ দেখতে চায় না বলে জানিয়েছেন পেন্টাগনের এক মুখপাত্র।
পরিস্থিতি 'গুরুতর' হওয়ায় ইসরাইলে সংক্ষিপ্ত সফরের পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ দূত হোচস্টেইনকে লেবাননে পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার হোচস্টেইন বলেছিলেন, 'কয়েক সপ্তাহ ধরে আমরা উত্তেজনা বাড়তে দেখেছি এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেন একটি বৃহত্তর যুদ্ধের আরও বৃদ্ধি এড়াতে চান।'
মঙ্গলবার লেবাননের সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে দেখা করেছিলেন হোচস্টেইন। এ সময় পার্লামেন্টের স্পিকার নাবিহ বেরির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি। সশস্ত্র গোষ্ঠী আমাল আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন নাবিহ বেরি। গোষ্ঠীটি হিজবুলস্নাহর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ইসরাইলের ওপর রকেট ছুড়েছে।
লেবানন সীমান্তের এই সংঘাত একটি আলোচনার মাধ্যমে বন্ধ করতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স।