ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ছিটমহল গাজার উত্তরাঞ্চলীয় শহর রাফাহ ও এর আশপাশের বিভিন্ন জেলায় ইসরাইলের ভয়াবহ হামলায় কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন। শনিবার উপত্যকার ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী হামাস নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম অফিস ইসরাইলি হামলায় হতাহতের এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে। এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িঘরে হতাহতদের সন্ধানে তলস্নাশি চালাচ্ছেন কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি
গাজার কর্মকর্তা ইসমাইল আল-থাওয়াবতা বলেন, গাজার আটটি ঐতিহাসিক শরণার্থী শিবিরের একটি আল-শাতি। এই শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ২৫ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আল-তুফাহ এলাকার বাড়িঘরে হামলায় আরও ১৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) যুদ্ধবিমান গাজা শহরে হামাসের দুটি সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেয়নি ইসরাইলি বাহিনী।
তবে নিজেদের সামরিক অবকাঠামোতে হামলা করার ইসরাইলি দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি হামাস। এক বিবৃতিতে গোষ্ঠীটি বলেছে, উপত্যকায় বেসামরিক জনগণকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে হামলার জন্য দখলদার ইসরাইলি বাহিনী ও তাদের নাৎসি নেতাদের মূল্য দিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে গোষ্ঠীটি।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী ও গাজার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, খুব কাছাকাছি অবস্থানে ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে হামাস যোদ্ধাদের তুমুল লড়াই হয়েছে। বাসিন্দারা জানান, ইসরাইলিরা সম্ভবত তাদের রাফাহ দখল সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করছে, ট্যাংকগুলো শহরের পশ্চিম ও উত্তর পাশের অংশগুলোর আরও গভীরে প্রবেশ করছে। এরই মধ্যে তারা শহরটির পূর্ব, দক্ষিণ ও কেন্দ্রস্থল দখল করে নিয়েছে।
মে মাসের প্রথম দিক থেকে মিসরের সীমান্ত সংলগ্ন রাফাহতে হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। কয়েক মাস আগেও গাজার উত্তর ও মধ্যাঞ্চল থেকে পালিয়ে আসা ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি শহরটিতে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন, এখন সেখানেও ইসরাইলি বাহিনীর হামলার মুখে ফের উত্তর দিকে পালাচ্ছেন তারা। শুক্রবারও ইসরাইলি বাহিনী যুদ্ধবিমান, ট্যাংক ও উপকূলে থাকা যুদ্ধজাহাজ থেকে রাফাহতে গোলাবর্ষণ করেছে। এতে আরও বহু মানুষ শহরটি ছেড়ে পালিয়েছেন।
স্থানীয় এক বাসিন্দা একটি চ্যাট অ্যাপে বলেন, দুটি ট্যাংক একটি পাহাড়ের ওপর উঠে মাওয়াসির দিকে মুখ করে গোলা ছুড়তে শুরু করে, সেগুলো ওই এলাকায় আশ্রয় নেওয়া দরিদ্র উদ্বাস্তু লোকজনের তাঁবুতে আঘাত হানে।
গাজায় রেডক্রস অফিসের কাছে
গোলায় ২২ জন নিহত
এদিকে, ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ দ্য রেডক্রস বা আইসিআরসি বলেছে, গোলার আঘাতে ফিলিস্তিনের গাজায় তাদের কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সেখানে আশ্রয়প্রার্থী অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ভারী গোলা রেডক্রস অফিস এবং আবাসিক ভবনের কয়েক মিটারের মধ্যে এসে পড়েছে। সংস্থাটি বলেছে, হামলায় রেডক্রসের কার্যালয়টি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে শত শত বাস্তুচু্যত মানুষ তাঁবুতে দিন কাটাচ্ছেন। তবে কারা ওই হামলা চালিয়েছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলেনি রেডক্রস। সেখানে ভারী ক্যালিবার প্রজেক্টাইল দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামলার ঘটনায় সংস্থাটির কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ-এর একজন মুখপাত্র বলেছেন, ওই এলাকায় আইডিএফ হামলা করেছে প্রাথমিক তদন্তে এমন কিছু তারা পায়নি। যদিও তারা বলেছে, ঘটনাটি তারা পর্যালোচনা করে দেখছে।
আইসিআরসি বলেছে, 'হামলায় আইসিআরসি কার্যালয়ের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই কার্যালয় ঘিরে আমাদের ফিলিস্তিনি সহকর্মীরা ছাড়াও শত শত বাস্তুচু্যত মানুষ তাঁবুতে বাস করেন।'
এ ঘটনার পর নিকটবর্তী রেডক্রস ফিল্ড হাসপাতালে হতাহতের ভিড় তৈরি হয়। হাসপাতালটি ২২ জনের মৃতদেহ পেয়েছে এবং ৪৫ জন আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'আমরা মানবিক কার্যক্রম ও বেসামরিক মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলার মতো এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা করি।'
তবে গাজায় হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওই হামলার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে বলেছে, এতে ২৫ জন নিহত ও আরও ৫০ জন আহত হয়েছেন।
গত বছর ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ভূখন্ডে হামাসের হামলায় প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। জবাবে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে ধ্বংস করতে অভিযান শুরু করে ইসরাইল। এরপর ৩৭ হাজার ৩৯০ জনের বেশি মানুষ গাজায় নিহত হয়েছে বলে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। তবে তারা বেসামরিক নাগরিক ও তাদের যোদ্ধাদের আলাদা হিসাব দেয়নি। তবে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত যারা নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ১৪ হাজার ৬৮০ জনই শিশু, নারী ও বয়স্ক মানুষ।