নেদারল্যান্ডসের কার্যকরী প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে ন্যাটোর পরবর্তী সেক্রেটারি জেনারেল হচ্ছেন। বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল জেন্স স্টলটেনবার্গের পদে থাকার মেয়াদ আগামী অক্টোবরে শেষ হবে। তারপর রুটে এই দায়িত্বভার নেবেন। ন্যাটো শরিকদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
২০২৩ সালের জুলাইতে ১৩ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকার পর রুটে ঘোষণা করেন, তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নিচ্ছেন। নেদারল্যান্ডসের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু কেন তিনি এই ঘোষণা করেছিলেন?
জোটের মধ্যে অভিযোগ ওঠে, রুটে অভিবাসীদের প্রতি নরম মনোভাব দেখাচ্ছেন। এর ফলে চারদলীয় জোট ভেঙে যায়। এরপর নির্বাচনে দক্ষিণপন্থিরা সবচেয়ে বেশি আসন পায়। রুটে তার রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে বড় হারের মুখে পড়েন। তারপর থেকে তিনি কার্যকরী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করছেন। কারণ দক্ষিণপন্থি দল এখনো সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা করে যাচ্ছে।
অবসরের পরিকল্পনা বাতিল
২০২৩ সালে ৫৭ বছর বয়সি রুটে তার অবসর ঘোষণার কথা ভুলে ন্যাটোর শীর্ষ পদে বসার ইঙ্গিত দিতে থাকেন। রুটে ন্যাটো দেশগুলোর প্রধানদের সঙ্গে দেখা করতে শুরু করেন। তিনি এতদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী থাকার সূত্রে তাদের আগে থেকেই চেনেন ও জানেন। রুটে হলেন ইউক্রেনের একনিষ্ঠ সমর্থক। আমেরিকার সমর্থন পেতেও তার অসুবিধা হয়নি। পরে ন্যাটোর অন্য সদস্য দেশও তাকে সমর্থন জানায়।
তবে হাঙ্গেরির দক্ষিণপন্থি জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের সমর্থন পেতে তার কিছুটা দেরি হয়। অরবানের সঙ্গে রুটের সম্পর্ক আগে খুব একটা মধুর ছিল না। রুটেকে প্রতিশ্রম্নতি দিতে হয়, তিনি যতদিন ন্যাটোর নেতৃত্ব দেবেন, ততদিন হাঙ্গেরি ন্যাটোর সীমার বাইরে ইউক্রেনকে সাহায্য করবে না। অরবানের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক খুব ভালো এবং তিনি ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করার প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছেন।
অতীতে ইইউ-তে রুটের উদারনৈতিক মনোভাবের সঙ্গে অরবানের মতের সংঘাত হয়েছে। ২০২১ সালে হাঙ্গেরি যখন এবজিবিটিকিউপস্নাস-এর বিরোধী আইন করেন তখন রুটে বলেছিলেন, যদি ইইউর নীতির সঙ্গে এ রকম বিরোধ হয় তো অরবান ইইউ ছেড়ে চলে যেতে পারেন।
তবে রুটে এমনিতে এমন একজন মানুষ, যার রসিকতাবোধ আছে। যিনি সাধারণ বাড়িতে থাকেন। সাইকেলে করে অফিসে যান। মাঝেমধ্যে তিনি হেগ সেন্ট্রাল স্টেশনে পিয়ানো বাজান।
তবে ন্যাটো প্রধান হিসেবে তাকে আরেকটু 'সিরিয়াস' হতে হবে ও কূটনৈতিক পথে চলতে হবে। ন্যাটোর ৩২টি সদস্য দেশের বিরোধী স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য করে চলতে হবে, যাতে সবাই একসুরে কথা বলতে পারে। স্টলটেনবার্গ একটু নির্বিকার প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তার সাফল্যের পেছনে এই মনোভাব কাজ করেছে বলে মনে করা হয়।
দক্ষ ক্রাইসিস ম্যানেজার
ডাচ সাংবাদিক ও রুটের জীবনী লেখক শিলা সিটালসিন বলেছেন, 'রুটে একসময় বলেছিলেন, প্রকৃত নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নির্ভর করে সেই মানুষটির অন্যের কথা ও ভিন্নমত শোনার ক্ষমতা কতটা আছে তার ওপর। এই ক্ষমতা থাকায় রুটে ন্যাটো প্রধান হিসেবে ভালোভাবে কাজ করতে পারবেন। সবচেয়ে বড় কথা, রুটে হলেন একজন সফল ক্রাইসিস ম্যানেজার।'
দীর্ঘদিন ধরে তিনি দেশকে স্থিরতা দিয়েছেন, কোভিড-১৯-এর সময় অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠেছেন। কোনো অভিযোগ তার গায়ে লাগেনি। নেদারল্যান্ডসে তাকে বলা হয় 'টেফলন রুটে'।
ন্যাটোর প্রধান হিসেবে তাকে এই সম্ভাবনার কথাও মাথায় রাখতে হবে যে, ট্রাম্প নির্বাচনে জিতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। আগে ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন রুটের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো ছিল। ট্রাম্প তাকে 'বন্ধু' বলে ডাকতেন। তবে রুটে ট্রাম্পের আর্থিক নীতির তীব্র বিরোধী ছিলেন। আরেকটা জায়গায় ট্রাম্পের সঙ্গে তার মতে মেলে না। ট্রাম্প বিরোধী হলেও রুটে মনে করেন, ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করা উচিত। তথ্যসূত্র : ডিডবিস্নউ নিউজ