ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে শুক্রবার থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত ফিলিস্তিনের গাজায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫৫ ফিলিস্তিনি। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকায় নিহত হন ৮৪ জন। নিহতদের মধ্যে ৫০ জনই শিশু এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক; এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ১৮৬ জন। একইভাবে ইসরায়েলি বাহিনীর রাতভর বিমান হামলায় লেবাননের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর বালবেক এবং তার সংলগ্ন গ্রামগুলোতে নিহত হয়েছেন ৫২ জন এবং আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৭২ জন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা 'এনএনএ' এ তথ্য জানিয়েছে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, আনাদলু
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবারের হতাহতের পরিসংখ্যানের জেরে গত এক বছরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৪৩ হাজার ২৫৯ জনে এবং আহত হয়েছেন মোট এক লাখ এক হাজার ৮২৭ জন।
জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক বিশ্ব এবং তিন মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার, মিসর ও আমেরিকা দীর্ঘদিন ধরে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সেসব চেষ্টা সফল হচ্ছে না। কারণ অভিযান বন্ধ করার জন্য ইসরায়েলকে নিয়মিত আহ্বানও জানানো হলেও তেল আবিব তাতে কর্ণপাত করছে না।
ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর আগে গাজা উপত্যকার জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২২ লাখ। অভিযানের গত এক বছরে গাজার বাসিন্দাদের প্রায় সবাই বাস্তুচু্যত হয়েছেন। এছাড়া ইসরায়েলি বাহিনীর বাধার কারণে সেখানে খাদ্য, সুপেয় পানি ও ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের গুরুতর সংকট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের মতে, গুরুতর মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছেন গাজার ফিলিস্তিনিরা।
লেবাননে এক রাতে নিহত ৫২
এদিকে, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী লেবাননের কমপক্ষে ২৫টি শহর ও গ্রামে রাতভর হামলা চালিয়েছে। এতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫২ জন। এছাড়া একই সময় লেবাননের রাজধানীয় বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরতলি এলাকা দাহিয়েহতে বোমা বর্ষণ করেছে বিমান বাহিনী। তাদের নিক্ষিপ্ত বোমায় দাহিয়েহর কয়েক ডজন ভবন ধ্বংসও হয়েছে। অভিযান শুরুর আগে দাহিয়েহর বাসিন্দাদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল ইসরায়েলি সেনারা।
লেবানন এবং ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের দুই প্রতিবেশী দেশ। ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের অপর পাশেই লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল। দেশটিতে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের মূল উদ্দেশ্য সশস্ত্র ইসলামি রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহকে ধ্বংস করা। ইরানের সহায়তায় ১৯৮৫ সালে গঠিত এই গোষ্ঠীটি তার জন্মলগ্ন থেকে ইসরায়েলকে ধ্বংসের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। হিজবুলস্নাহর সদর দপ্তর এবং গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনাগুলোর প্রায় সবই দক্ষিণ লেবাননে অবস্থিত।
গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের ভূখন্ডে অতর্কিত হামলা চালানোর পর সেখানে অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। আইডিএফ অভিযান শুরুর পর হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে উত্তর ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে প্রায় প্রতিদিন রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া শুরু করে হিজবুলস্নাহ। পাল্টা রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে হামলার জবাব দিতে থাকে ইসরায়েলও। প্রায় এক বছর এই অবস্থা চলার পর গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।
ইসরায়েলজুড়ে রাতভর হিজবুলস্নাহর
হামলা, আহত ৩০
অন্যদিকে, হিজবুলস্নাহর যোদ্ধারাও শুক্রবার রাতভর ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক রকেট হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় কজন ইসরায়েলি প্রাণ হারিয়েছে তা জানায়নি, তবে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির সেনাবাহিনী আইডিএফ।
সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলীয় শহর তিরায়, সেখানে হিজবুলস্নাহর একটি রকেট হামলায় একটি আবাসিক ভবন বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ১৯ জন আহত হয়েছে।