মার্কিন ভূখন্ডে জন্মগ্রহণ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেশটির নাগরিকত্বপ্রাপ্তির যে আইন বা বিধি এতদিন প্রচলিত ছিল, তা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং আমেরিকার পরবর্তী ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের প্রচারাভিযান সংক্রান্ত দাপ্তরিক সাইটে জানানো হয়েছে এ তথ্য। তথ্যসূত্র : টাইমস অব ইনডিয়া

ট্রাম্প বলেছেন, নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সেইসব ভূমিষ্ঠ শিশুদেরই স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে, যাদের পিতা কিংবা মাতা; অর্থাৎ অন্তত একজন অভিভাবকের মার্কিন নাগরিকত্ব বা দেশটিতে বসবাসের বৈধ অনুমোদন রয়েছে। দাপ্তরিক সাইটে বলা হয়েছে, মার্কিন ভূখন্ডে জন্ম নেওয়া কোনো শিশুর স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব প্রাপ্তির জন্য ওই শিশুর পিতা কিংবা মাতা- যে কোনো একজনের নাগরিক হওয়া বা আমেরিকায় বৈধভাবে বসবাসের অনুমোদন থাকা জরুরি। অবিলম্বে দেশের কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে এ নির্দেশনা পাঠানো হবে। উলেস্নখ্য, আগামী ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জেডি ভ্যান্স। ওইদিন থেকেই এই নির্দেশনা কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে সাইটে।

এদিকে, আমেরিকার অভিবাসন সংক্রান্ত আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ট্রাম্পের এই নির্দেশনা মার্কিন সংবিধান বিরোধী এবং যদি ক্ষমতা গ্রহণের পর সত্যিই এই নির্দেশনা কার্যকর হয়, তাহলে সংবিধান লঙ্ঘনের মতো গুরুতর ঘটনা ঘটবে।

মার্কিন অভিবাসন আইনজীবী গ্রেগ সিসকাইন্ড সাংবাদিকদের বলেন, এই নির্দেশনা মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর সরাসরি লঙ্ঘন। যদি সত্যিই এটি কার্যকরের পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে।

২০২২ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টার পরিচালিত শুমারি অনুযায়ী, আমেরিকার মোট জনসংখ্যা ৩৩ কোটি ৪৯ লাখ। এই জনসমষ্টির একটি বিশাল অংশ বৈধ-অবৈধ অভিবাসী। অন্যান্য দেশের অভিবাসনপ্রত্যাশীর মতো তাদেরও একমাত্র লক্ষ্য আমেরিকার নাগরিকত্ব ও গ্রিনকার্ড অর্জন।

মার্কিন নাগরিকত্ব-গ্রিনকার্ড অর্জনের একটি সহজ এবং জনপ্রিয় পথ মার্কিন ভূখন্ডে সন্তান জন্মদান। কারণ দেশটির আইন অনুযায়ী, কোনো শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্র তাকে আমেরিকার নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হয় এবং ওই শিশুর বয়স ১৮ পার হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে বড় করা এবং দেখাশোনা করার জন্য তার পিতা-মাতাকে বৈধভাবে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়। আর একবার বৈধ বসবাসের অনুমতি পেলে নাগরিকত্ব ও গ্রিনকার্ড প্রাপ্তির পথও অনেক সহজ হয়। ফলে ট্রাম্পের এ নির্দেশনা আমেরিকায় বসবাসকারী বৈধ কাগজপত্র ও নথিবিহীন অভিবাসীদের জন্য একটি বড় ধাক্কা।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের শুমারির তথ্য বলছে, আমেরিকায় বর্তমানে বাস করছেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৮১৬ জন অভিবাসী। এ অভিবাসীদের একটি উলেস্নখযোগ্য অংশেরই বৈধ নথি নেই।