ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পর অবৈধ অভিবাসীদের অনেকে ভয় ও অনিশ্চয়তার কথা বলেছেন। তাদের ভয়, ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেককেই নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য মতে, আমেরিকায় এখন এক কোটির বেশি বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসী আছেন। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স

বলিভিয়ার গ্যাব্রিয়েলা নামের এক অভিবাসী চোরাচালানকারীদের গাড়িতে করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আমেরিকায় গিয়েছিলেন। তিনি এখন ক্লিনারের কাজ করেন। তিনিও আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন। বলিভিয়ার বলেন, 'এখানে আমরা যারা আছি, তাদের বেশিরভাগেরই কাগজপত্র নেই। তিনি (ট্রাম্প) কী করবেন, তাতো পরিষ্কার করে বলেছেন। আমার মনে হয়, তারা কর্মস্থল থেকেও লোকজনকে ধরে নিয়ে যাবে।'

শুধু অভিবাসীরাই নয়, অনেক মার্কিনিও ট্রাম্পের জয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। তারা অন্য কোনো দেশে চলে যেতে চাইছেন। গত মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) আমেরিকায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোট শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর থেকে কানাডা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার দেশগুলোতে পাড়ি দেওয়ার বিষয়ে গুগল সার্চে লোকজনের আগ্রহ বেশি দেখা গেছে। গুগল সার্চে দেখা গেছে প্রায় এক হাজার ২৭০ শতাংশ মানুষ কানাডা যাওয়ার তথ্য অনুসন্ধান করেছেন। গুগলের তথ্যানুসারে, আমেরিকার পূর্ব উপকূল থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত এই তিন দেশে যাওয়ার জন্য অনেকেই গুগলে অনুসন্ধান করেছেন।

তবে গুগল অনুসন্ধ্যানে প্রকৃত তথ্য পাওয়া না গেলেও নিউজিল্যান্ডের অভিবাসী ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, প্রায় ২৫ হাজার আমেরিকান ৭ নভেম্বর পর্যন্ত তাদের সাইট ভিজিট করেছে। যেখানে গত বছর একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫০০ জন।

কিছু অভিবাসন আইনজীবীও একই ধরনের কথা বলছেন। কানাডার প্রাচীনতম ইমিগ্রেশন ল ফার্ম 'গ্রিন অ্যান্ড স্পিগেলে'র ব্যবস্থাপনা অংশীদার ইভান গ্রিন বলেন, তারা প্রতি আধা ঘণ্টায় একটি করে নতুন মেইল পাচ্ছেন।

২০১৬ সালে ট্রাম্প যখন প্রথমবারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয় পেয়েছিলেন, তখনো ঠিক একই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। 'এডিসন রিসার্চ' এক্সিট পোলের তথ্যানুসারে, এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় মার্কিন ভোটারদের এক-তৃতীয়াংশ মনে করেন, গণতন্ত্র হুমকির মুখে রয়েছে। এছাড়া অনেক আমেরিকান এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন যে, তার শাসনামলে জাতি, লিঙ্গ, শিশুদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা হয় এবং প্রজনন অধিকারের মতো বিষয়গুলোতে ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে একটি বড় দ্বন্দ্ব তৈরি করতে পারে।

অভিবাসী তাড়াতে কোনো দামই খুব চড়া নয় : ট্রাম্প

এদিকে, নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প 'এনবিসি নিউজে'র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমেরিকায় বাস করা অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর কর্মসূচি বাস্তবায়নে কোনো দামই খুব বেশি চড়া নয়। বৃহস্পতিবার ট্রাম্প এই সাক্ষাৎকার দেন। তিনি এবার ক্ষমতায় বসেই গণহারে অবৈধ অভিবাসীদের আমেরিকা থেকে বের করে দেবেন বলে জানিয়েছেন।

নির্বাচনী প্রচারকালে তিনি বলে এসেছেন, তার এই কর্মসূচি হবে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড়। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তোলা শেষ করার পরিকল্পনাও জানিয়েছিলেন তিনি।