সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ২৩ বছরের শাসন ব্যবস্থার পতন ঘটেছে। বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখে রোববার রাজধানী দামেস্ক ছেড়ে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাশার। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স
দেশটির শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গত কয়েকদিন ধরে একের পর এক শহর থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে। সর্বশেষ রাজধানী দামেস্কের দিকে বিদ্রোহীদের অগ্রসর হওয়ার পথে প্রতিরোধ গড়তে ব্যর্থ হয়। সামরিক বাহিনীর বড় ধরনের প্রতিরোধ ছাড়াই রোববার রাজধানী দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিদ্রোহীরা সিরিয়ায় বাশার সরকারের পতনের ঘোষণা দেয়।
লেবাননের অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইলিয়াস হান্না এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, কেউ আশা করেনি সিরিয়ার সেনাবাহিনী এত ভঙ্গুর হবে। তিনি বলেন, এটি এই সেনাবাহিনীর যুদ্ধ করার ইচ্ছার অভাব দেখায়- আলেপ্পো থেকে রাজধানী পর্যন্ত।
হান্না সিরিয়ার আরব সেনাবাহিনীর চতুর্থ ডিভিশনের অনুপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। এই বাহিনী প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ভাই মাহেরের নেতৃত্বে কয়েক হাজার সেনায় সুসজ্জিত। হান্না বলেন, 'প্রশ্ন হলো- এই বাহিনী কোথায় গেল? তাদের সরঞ্জামই বা কোথায় গেল?'
যুক্তরাজ্যভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচএস) জানিয়েছে, রাজধানী দামেস্কে সিরীয় সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর শতাধিক সদস্যকে তাদের সামরিক ইউনিফর্ম খুলে ফেলতে দেখা গেছে, কারণ তাদের বলা হয়েছে, সরকার পতনের কারণে তারা চাকরি থেকে অব্যাহতি পেয়েছে।
দামেস্ক এখন কোনো রক্তপাত ছাড়াই মুক্ত। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি ইঙ্গিত দিতে পারে, রক্তপাত ছাড়াই, দেশটি গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত না হয়েই এগিয়ে যাওয়ার পথ রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, এই অঞ্চল এবং তার বাইরের সরকারগুলোর জন্য এটি অনেক স্বস্তি নিয়ে আসবে।
প্রসঙ্গত, বাশার আল-আসাদ ২০০০ সালে সিরিয়ার শাসন ক্ষমতায় আসেন। এর আগে তার বাবা হাফেজ আল-আসাদ ২৯ বছর দেশটি শাসন করেছিলেন।
২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। ওই সময় বিক্ষোভকারীদের দমনে কঠোর পন্থা অবলম্বন করেন তিনি। এরপর বিক্ষোভকারীরা সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে। এতে করে দেশটিতে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ।
পরে বাশার আল-আসাদকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে রাশিয়া, ইরান ও লেবাননের হিজবুলস্নাহ। এতে বিদ্রোহীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে লেবাননের শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহ দুর্বল হয়ে যাওয়া, ইরান তার চিরশত্রম্ন ইসরায়েলের দিকে মনোনিবেশ ও ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার ব্যস্ত থাকার সুযোগে বিদ্রোহীরা আবারও তৎপর হয়ে ওঠে। গত ২৭ নভেম্বর সিরিয়ার বিদ্রোহীরা আলেপ্পো দখল অভিযান শুরু করে। অপ্রতিরোধ্য গতিতে তারা মাত্র ১২ দিনে রাজধানী দামেস্কে পৌঁছে যায়।