শনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

সিরিয়ায় ইসরায়েলের ৪৮০টি হামলা, বাদ যায়নি নৌবহর

গত ৮ ডিসেম্বর বিদ্রোহীদের হাতে বাশার আল আসাদের সরকার পতনের পর থেকে সিরিয়াজুড়ে ৩১০টির বেশি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী
যাযাদি ডেস্ক
  ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সিরিয়ায় ইসরায়েলের ৪৮০টি হামলা, বাদ যায়নি নৌবহর
সিরিয়ার লাতাকিয়া বন্দরে ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া নৌযান

সিরিয়ার ভূখন্ডে গত ৪৮ ঘণ্টায় ৪৮০টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, সিরিয়ার ১৫টি নৌযান, বিমান-বিধ্বংসী ব্যাটারি, অস্ত্র উৎপাদন ক্ষেত্রসহ বিভিন্ন অবকাঠামোয় এসব হামলা চালানো হয়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক বিবৃতিতে সিরিয়ার নৌবহরে হামলার খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ার সামরিক সম্পদ 'যুদ্ধের আওতার বাইরে রাখার' প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এসব হামলা চালিয়েছে, বলছে ইসরায়েল। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিরিয়ার আল বায়দা ও লাতাকিয়া বন্দরে গত সোমবার রাতে হামলা চালানো হয়। এখানেই ১৫টি জাহাজ নোঙর করা ছিল। হামলার পরে ধারণ করা লাতাকিয়া বন্দরের একটি ভিডিও ফুটেজের সত্যতা যাচাই করেছে বিবিসি। ওই ভিডিওতে সারি সারি জাহাজ আর বন্দরের একাংশের ব্যাপক ক্ষতি হতে দেখা গেছে। এর আগে লন্ডনভিত্তিক পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানায়, গত ৮ ডিসেম্বর বিদ্রোহীদের হাতে বাশার আল আসাদের সরকার পতনের পর থেকে সিরিয়াজুড়ে ৩১০টির বেশি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর লক্ষ্য হলো- তাদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যেকোনো কৌশলগত হুমকির সক্ষমতা নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া এক বিবৃতিতে এমনটাই জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। হামলা চালিয়ে সিরিয়ার নৌবহর ধ্বংস করে দেওয়ার ঘটনাকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী 'বড় সাফল্য' বলে মন্তব্য করেছেন। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক ছাড়াও দেশটির হোমস, তারতাস, পালমিরা শহরেও ইসরায়েলি হামলার ঘটনা ঘটেছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, এসব হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে সিরিয়ার বিমানঘাঁটি, সামরিক যান, বিমান-বিধ্বংসী অস্ত্র, অস্ত্রের উৎপাদন ক্ষেত্র, অস্ত্রাগারসহ বিভিন্ন অবকাঠামোকে। তারা বলছে, সিরিয়ার সামরিক সক্ষমতাকে বিদ্রোহীদের হাতে চলে যাওয়া রুখতে এসব হামলা চালানো হয়েছে। বিদ্রোহী যোদ্ধাদের মাত্র ১২ দিনের অভিযানে গত ৮ ডিসেম্বর বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন ঘটে। বাবা হাফিজ আল-আসাদ ও ছেলে বাশার আল-আসাদ মিলে টানা ৫৩ বছর সিরিয়া শাসন করেছেন। এর মধ্য সর্বশেষ ২৪ বছর ক্ষমতায় ছিলেন বাশার আল আসাদ। সিরিয়া থেকে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে পালিয়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন বাশার আল আসাদ। তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে রাশিয়া। পরিবারের সদস্যসহ তিনি এখন মস্কোয় অবস্থান করছেন। এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার উদ্দেশ্য নেই তাদের, কিন্তু নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা করা দরকার, তাই করছেন তারা। তিনি বলেন, 'সিরিয়ার সেনাবাহিনীর রেখে যাওয়া কৌশলগত সামরিক সামর্থে বোমাবর্ষণ করতে বিমান বাহিনীকে অনুমোদন দিয়েছি আমি, যেন সেগুলো জিহাদিদের হাতে গিয়ে না পড়ে।' গত ৮ ডিসেম্বর আসাদ বিমানযোগে পালিয়ে যাওয়ার পর ইসরায়েলি সেনারা ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর সিরিয়ার ভেতরে তৈরি করা অসামরিক এলাকায় ঢুকে পড়ে। তারা সিরিয়ার কৌশলগভাবে গুরুত্বপূর্ণ পর্বত মাউন্ট হেরমনে সিরিয়ার একটি সামরিক পোস্ট দখল করে নেয়। মাউন্ট হেরমন থেকে পুরো দামেস্ক দেখা যায়। ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাদভ শোশানি দাবি করেছেন, তাদের সেনারা ইসরায়েল-সিরিয়ার মধ্যবর্তী বাফার জোনেই আছে, তবে তারা এর কাছাকাছি 'কয়েকটি অতিরিক্ত পয়েন্টেও' অবস্থান নিয়েছে। সিরিয়ার এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন, ইসরায়েলি বাহিনী বাফার জোন ছেড়ে সিরিয়ার আরও ভেতরে ঢুকে পড়ে কাতানা শহরে উপস্থিত হয়েছে, যা বাফার জোন থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার ভেতরে এবং দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে অল্প গাড়ি দূরত্বে অবস্থিত। কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনী বাফার জোন ছেড়ে সিরিয়ার অনেকটা ভেতরে ঢুকে পড়েছে বলে যে অভিযোগ এসেছে, শোশানি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইসরায়েলি সেনারা দামেস্কের দিকে অগ্রসর হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে