সিরিয়ার বিদ্রোহী বাহিনীর প্রধান আহমাদ আল-শারা ওরফে আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন, তিনি বাশার আল-আসাদ আমলের নিরাপত্তা বাহিনী বিলুপ্ত ও কারাগার বন্ধ করে দেবেন এবং নির্যাতন ও হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনবেন। বুধবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা 'রয়টার্স'কে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'আমি পূর্ববর্তী শাসনের নিরাপত্তা বাহিনী বিলুপ্ত করব এবং কুখ্যাত কারাগারগুলো বন্ধ করব। এদিকে, বাশারের দল বাথ পার্টি দেশের অভ্যন্তরে তাদের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। দলের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই স্থগিতাদেশ সভা এবং অভ্যন্তরীণ কার্যাবলিসহ দলীয় কার্যক্রমকে প্রভাবিত করবে। বাথ পার্টি ১৯৬৩ সাল থেকে সিরিয়া শাসন করে আসছে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, এএফপি, রয়টার্স, আল-জাজিরা
আসাদ পরিবারের পাঁচ দশকের শাসনকালে সিরিয়া মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম নিপীড়ক পুলিশি রাষ্ট্র হিসেবে কাজ করেছে। জোলানির নেতৃত্বাধীন আল-কায়েদার সাবেক শাখা হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এখন সিরিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী বাহিনী। জোলানিকে গত পাঁচ দশকে নির্যাতনের শিকার লোকজনের বিচারের দাবি এবং সহিংস প্রতিশোধ স্পৃহা প্রতিরোধ করার প্রয়োজনীয়তার মধ্যে ভারসাম্য এনে আন্তর্জাতিক ত্রাণ নিশ্চিত করতে হবে।
সিরীয়রা স্বজনদের খোঁজে দেশটির কুখ্যাত কারাগারগুলোতে ভিড় জমিয়েছে। বাশার সরকার এসব কারগারে লাখ লাখ বন্দিকে বছরের পর বছর আটক করে রেখেছিল বলে বিভিন্ন হিসাব বলছে। এসব বন্দির অনেকে জীবিত মুক্তি পেয়েছেন, অন্যদের মৃত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে এবং আরও কয়েক হাজারের কোনো খোঁজই মেলেনি।
সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের 'টেলিগ্রাম' চ্যানেলকে দেওয়া পৃথক এক বিবৃতিতে জোলানি বলেছেন, বন্দিদের নির্যাতন বা হত্যার সঙ্গে যেসব লোকজন জড়িত তাদের খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করা হবে, তাদের ক্ষমা করার প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন, 'আমরা সিরিয়া থেকে তাদের খুঁজে বের করব, যারা পালিয়ে গেছে তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য দেশগুলোকে বলব, যেন আমরা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারি।'
দেশটির নতুন শাসকরা সহিংস প্রতিশোধ স্পৃহা ছড়িয়ে পড়া এড়িয়ে দেশটিকে স্থিতিশীল করতে পারেন কি-না, তার দিকে সতর্কভাবে নজর রাখছে বিশ্ব। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে, আল-শারা ও তার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ন্যায়বিচারের দাবি ও সহিংস প্রতিশোধ ঠেকানোর চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে চাইছে।
বিদ্রোহী বাহিনীর অন্তর্র্বর্তীকালীন প্রশাসনের প্রধান মোহাম্মদ আল-বশির জানিয়েছেন, 'শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনা, ঐক্য স্থাপন এবং মৌলিক সেবা নিশ্চিত করা তাদের লক্ষ্য। তবে অর্থনৈতিক সংকট বড় বাধা। আমাদের কাছে বৈদেশিক মুদ্রা নেই এবং ঋণ ও বন্ডের জন্য এখনো তথ্য সংগ্রহ করছি। আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ।'
বিদ্রোহী বাহিনীর সঙ্গে সাবধানী সম্পর্ক তৈরি করছে বিভিন্ন দেশ। তবে এইচটিএস এখনো আমেরিকা, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরও কয়েকটি দেশে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন বলেছেন, নতুন প্রশাসনকে অবশ্যই সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা, মানবিক সাহায্য প্রবাহ নিশ্চিত এবং প্রতিবেশীদের জন্য হুমকি সৃষ্টি না করার প্রতিশ্রম্নতি রাখতে হবে।
বাশারের দলের রাজনৈতিক
কার্যক্রম স্থগিত
এদিকে, সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের হাতে গত রোববার ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন হওয়ার পর ক্ষমতাচু্যত বাথ পার্টি তাদের কার্যক্রম দেশের অভ্যন্তরে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে। বাশারের বিরুদ্ধে গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বিদ্রোহ করে আসছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। এই সিদ্ধান্তটি অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক তদন্ত উভয়ের চাপের প্রতিক্রিয়ায় হতে পারে, বিশেষ করে সিরিয়ার চলমান অর্থনৈতিক সংগ্রাম এবং দশকব্যাপী গৃহযুদ্ধের প্রভাব সম্পর্কে। দলটির মুখপত্র হিসেবে পরিচিত সংবাদপত্রের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের দলীয় কাজ ও কার্যকলাপ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
১৯৬৬ সালে দেশটিতে সামরিক অভু্যত্থানে বাথ পার্টি ক্ষমতায় আসে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হন বাশার আল-আসাদের বাবা হাফিজ আল-আসাদ। রাজনৈতিকভাবে তিনি ছিলেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী। ১৯৭০ সালে নিজ রাজনৈতিক গুরু ও সিরীয় নেতা সালাহ আল-জাদিদকে সরাতে অভু্যত্থান ঘটান হাফিজ। পরের বছরই সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন তিনি।
সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের বাথ পার্টি, যেটি আরব দেশে ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে সক্রিয়। রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত করার পাশাপাশি, নতুন এবং অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে তাদের অস্ত্র হস্তান্তর করেছে বলেও ঘোষণা করেছে।
টানা পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে সিরিয়া শাসন করছে পরিবারটি। এর মধ্যে ১৯৭১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন হাফিজ আল-আসাদ। ২০০০ সালে তার মৃতু্য হয়। এরপর ওই বছরই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন তার ছেলে বাশার আল-আসাদ। রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত টানা দুই যুগ (২৪ বছর) ধরে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন।