রোববার, ০৪ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২
বাশারের পতন

দুই সপ্তাহে সিরিয়ায় ১১ লাখ মানুষ বাস্তুচু্যত

মানবিজ এবং পূর্ব সিরিয়ার মিশ্র আরব ও কুর্দি শহরে প্রাথমিকভাবে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে সিরিয়ায় সামরিক ঘাঁটির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ রাশিয়ার
যাযাদি ডেস্ক
  ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দুই সপ্তাহে সিরিয়ায় ১১ লাখ মানুষ বাস্তুচু্যত
অ্যান্টনি বিস্নংকেন ও রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ান

সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতন ঘটাতে গত ২৭ নভেম্বর বিদ্রোহীদের অভিযান শুরুর পর দুই সপ্তাহে অন্তত ১১ লাখ মানুষ বাস্তুচু্যত হয়েছেন। জাতিসংঘের ত্রাণ এবং মানবিক সহায়তা সংক্রান্ত সংস্থা (ওসিএইচএ) বলছে, নতুন করে যারা বাস্তুচু্যত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সিরিয়ার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটিরিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ)। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, এএফপি

জাতিসংঘ জানিয়েছে, বিদ্রোহীদের হামলা শুরুর পর অন্তত ছয় লাখ ৪০ হাজার মানুষ আলেপ্পো থেকে পালিয়েছেন। আর ইদলিব থেকে তিন লাখ ৩৪ হাজার ও হামা শহর থেকে এক লাখ ৩৬ হাজার মানুষ পালিয়েছেন। অন্যদিকে, অন্য এলাকা থেকে বাস্তুচু্যত চার লাখ ৩৮ হাজার মানুষ ইদলিবে এসেছেন। এছাড়া হামায় এক লাখ ৭০ হাজার ও দামেস্কের গ্রামীণ এলাকায় এক লাখ ২৩ হাজার মানুষ এসেছেন।

ওসিএইচএ বলছে, চার লাখের বেশি মানুষ সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব এলাকার ২৪০টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। সেখানে তারা মানবিক সহায়তা পাচ্ছেন। জাতিসংঘ বলছে, বিদ্রোহীদের অভিযান শুরুর পর সাত লাখের বেশি মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

আলেপ্পোর উত্তর-পূর্বে মানবিজ শহর এবং পূর্ব সিরিয়ার মিশ্র আরব ও কুর্দি শহর দেইর আজ-জৌরে প্রাথমিকভাবে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। গত সপ্তাহে বাশার বাহিনীর পতনের পর, আমেরিকা সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)-এর অধীনে কুর্দি ও আরব ইউনিটগুলো অগ্রসর হয়েছে। সিরিয়ার উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে বেশ কিছু এলাকা সুরক্ষিত করার প্রচেষ্টায় কিছু স্থানে 'সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি'র তুর্কি সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও সংঘর্ষ হয়েছে তাদের। উলেস্নখ্য, সিরিয়ার বিদ্রোহীরা দেশটির উত্তর-পশ্চিমের ইদলিবে তাদের ঘাঁটি থেকে সরকারবিরোধী বিস্ময়কর অভিযান শুরুর পর গত ৮ ডিসেম্বর বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন হয়। প্রেসিডেন্ট পালিয়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন।

সিরিয়া নিয়ে এরদোয়ান-বিস্নংকেন বৈঠক

সিরিয়া নিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে বলা হয়েছে, সিরিয়ার পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যাতে একযোগে কাজ করে সেই বিষয়ে জোর দিয়েছেন দুই নেতা। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আমেরিকা ও তুরস্ক যাতে সিরিয়ার রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করে, তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

দেশটিতে যখন তুরস্ক সমর্থিত বিদ্রোহীদের সঙ্গে মার্কিন মদদপুষ্ট বাহিনীর সংঘর্ষ হচ্ছে, তখন এই বৈঠক হলো। কুর্দিদের নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স মার্কিন জোটের সমর্থন পাচ্ছে। এই বাহিনীর নেতৃত্বে আছে পিপলস প্রোটেকশন গ্রম্নপ (ওয়াইপিজি)। তুরস্ক মনে করে, ওয়াইপিজি হলো কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সঙ্গে যুক্ত সংগঠন। তুরস্কে যাওয়ার আগে বিস্নংকেন বলেছেন, 'পিকেকে হলো তুরস্কের বিপদের কারণ। তবে একইসঙ্গে আমরা সিরিয়ার ভেতরে বিরোধ এড়াতে চাই। আমরা চাই, অন্তর্র্বর্তী সরকার মসৃণভাবে গঠিত হোক এবং তারা ভালোভাবে কাজ করুক।'

এদিকে, বৃহস্পতিবার জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুলস্নাহর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন বিস্নংকেন। সেখানে তারা সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছেন। দুজনেই সিরিয়াকে সুরক্ষিত রাখার ওপর জোর দিয়েছেন।

সামরিক ঘাঁটির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ রাশিয়ার

এদিকে, সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) রাজনৈতিক পরিষদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করেছে রাশিয়া। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বোগদানোভের বরাতে এই দাবি করেছে দেশটির বার্তা সংস্থা 'ইন্টারফ্যাক্স'।

ইন্টারফ্যাক্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ায় স্থাপিত রুশ সামরিক ঘাঁটিগুলো বজায় রাখাই তাদের লক্ষ্য বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বোগদানোভ। তিনি বলেছেন, এইচটিএসের সঙ্গে যোগাযোগের গঠনমূলক অগ্রগতি হচ্ছে। অতিরিক্ত সহিংসতা প্রতিরোধ, শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং কূটনীতিবিদ ও বিদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকারগুলো তারা রক্ষা করবে বলে ক্রেমলিন প্রত্যাশা করছে। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া তাদের দুটি সামরিক ঘাঁটি ধরে রাখতে চায়। এগুলো হলো তারতুসের নৌ-ঘাঁটি ও লাতাকিয়া শহরের নিকটবর্তী খেমেইমিম বিমানঘাঁটি। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাশিয়ার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই ঘাঁটিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বোগদানোভ বলেন, 'এখনো সিরিয়ার ভূখন্ডে এই ঘাঁটিগুলো বিদ্যমান। অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উদ্দেশ্যে এগুলো সিরীয় সরকারের অনুরোধে স্থাপন করা হয়েছিল।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে