দক্ষিণ কোরিয়ায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে অভিশংসনের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির বিরোধী দলীয় নেতা লি জায়ে-মিউং। পার্লামেন্টে ইউনের অভিশংসন ভোট আরেকবার অনুষ্ঠিত হওয়ার আগের দিন শুক্রবার তিনি এ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সর্বোত্তম উপায় হলো প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলকে অভিশংসন করা। তথ্যসূত্র : রয়টার্স

ইউনের স্বল্পকালীন সামরিক আইন জারিকে কেন্দ্র করে শনিবার পার্লামেন্টে অভিশংসন প্রস্তাবে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগেরদিন শুক্রবার প্রেসিডেন্টের দলের সদস্যদের এই প্রস্তাব সমর্থন করার আহ্বান জানিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা মিউং ওই কথা বলেন।

গত ৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে 'রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিকে' সমূলে উৎপাটনের কথা বলে হঠাৎ করেই সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেন ইউন। তার এ ঘোষণায় পুরো দক্ষিণ কোরিয়া স্তম্ভিত হয়ে যায়। কিন্তু পার্লামেন্ট তার জারি করা ডিক্রির বিরুদ্ধে সর্বসম্মতিক্রমে ভোট দেওয়ার জন্য সামরিক বাহিনী ও পুলিশের বেষ্টনি উপেক্ষা করার পর আদেশ বাতিল করেন তিনি, তার মধ্যেই প্রায় ছয় ঘণ্টা পার হয়ে যায়।

কিন্তু তার এই পদক্ষেপে দক্ষিণ এশিয়া কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর রাজনৈতিক সংকটে পড়ে। গণতান্ত্রিক সাফল্যের গাথা রচনাকারী দক্ষিণ কোরিয়ার অর্জিত সুনাম নষ্ট হওয়ার হুমকি তৈরি হয়। বিরোধী দলের অভিশংসন প্রস্তাবের মুখে পড়েন ইউন।

গত শনিবার ইউন বিরোধী দল নিয়ন্ত্রিত পার্লামেন্টে অভিশংসন উদ্যোগ থেকে রক্ষা পান। তার ক্ষমতাসীন দল পিপল পাওয়ার পার্টির (পিপিপি) আইনপ্রণেতারা পার্লামেন্টের ওই অধিবেশন বয়কট করাতে বেঁচে যান। কিন্তু আ কের (শনিবার) অভিশংসন উদ্যোগ থেকে ইউন রক্ষা নাও পেতে পারেন। কারণ প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাসীন পিপিপি'র অন্তত সাতজন সদস্য শনিবারের অভিশংসন ভোটে তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পার্লামেন্টে প্রস্তাবটি পাস হতে হলে পিপিপি'র কমপক্ষে আটজন সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন। আপাতত সেই সংখ্যার প্রায় কাছাকাছিই সমর্থন দেখা যাচ্ছে।

ইউন বৃহস্পতিবারেই দ্বিতীয় অভিশংসন প্রচেষ্টার মুখে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। সরকারকে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য তিনি বিরোধী দলকে দোষারোপ করেন। এমনকি নির্বাচন কমিশনে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকিং এপ্রিলের পার্লামেন্ট নির্বাচনে তার দলের শোচনীয় পরাজয় ডেকে এনেছে বলে ইউন দাবি করেন।

ওদিকে, বিরোধীদল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা লি জায়ে-মিউং প্রেসিডেন্ট ইউনের মন্তব্যকে 'জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা' আখ্যা দেন। তিনি বলেন, 'ইউনের এমন কথাই প্রমাণ করেছে, এই বিভ্রান্তি সবচেয়ে দ্রম্নত দূর করার সর্বোত্তম পন্থা হলো অভিশংসন।'

ইউনের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর আনা দ্বিতীয় অভিশংসন প্রস্তাবটি শনিবার বিকালে পার্লামেন্টে উত্থাপন করা হবে ভোটের জন্য। বিরোধী দলীয় নেতা মিউং ক্ষমতাসীন দল পিপিপি সদস্যদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, অভিশংসনের পক্ষে 'হঁ্যা' ভোটে অংশ নিন। ইতিহাস আপনাদের মনে রাখবে এবং আপনার সিদ্ধান্তের রেকর্ড থাকবে।