সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২
কয়েকটি মার্কিন রাজ্যে জরুরি অবস্থা

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে তুষার ঝড়

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মেরু ঘূর্ণির কারণে আবহাওয়ায় এমন বিরূপ পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাসাগর ও বায়ুমন্ডলীয় প্রশাসন বলেছে, কিছু কিছু জায়গায় গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ তুষারপাত হতে পারে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে তুষার ঝড়
যুক্তরাষ্ট্রে তুষার ঝড়ের আশঙ্কায় জনশূন্য এলাকা ফাইল ছবি

তুষার ঝড়ের কবলে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে। ফলে সেখানকার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হচ্ছে। আবহাওয়া দপ্তর জানায়, শক্তিশালী শীতকালীন ঝড়ের কবলে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ মানুষ। ঝড়ের প্রভাবে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে সর্বোচ্চ তুষারপাত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সঙ্গে গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও রেকর্ড হতে পারে। ঝড়টি দেশটির মধ্য অঞ্চলে শুরু হয়েছে। যা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পূর্ব দিকে যাবে বলে জানিয়েছে জাতীয় আবহাওয়া সার্ভিস (এনডবিস্নউএস)। সংবাদমাধ্যম বিবিসি রোববার জানিয়েছে, ঝড়ের কারণে কেন্টাকি এবং ভার্জিনিয়ায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। এছাড়া মিসিসিপি এবং ফ্লোরিডার মতো রাজ্য্ত যেগুলোর বাসিন্দারা তীব্র ঠান্ডার সঙ্গে পরিচত নয়, তাদের এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে সতর্ক থাকার আহ্‌বান জানানো হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, মেরু ঘূর্ণির কারণে আবহাওয়ায় এমন বিরূপ পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। মেরু ঘূর্ণি একটি ঠান্ডা বায়ুময় এলাকা। যেটি আর্কটিক অঞ্চলে চলাচল করে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাসাগর ও বায়ুমন্ডলীয় প্রশাসন বলেছে, কিছু কিছু জায়গায় গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ তুষারপাত হতে পারে। অ্যাকুওয়েদারের আবহাওয়াবিদ ড্যান ডেপোডিন বলেছেন, ঝড়টির কারণে ২০১১ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ সবচেয়ে ঠান্ডা জানুয়ারি প্রত্যক্ষ করতে পারে। ভয়ঙ্কর এ ঝড়টির প্রভাবে সাধারণ মানুষের প্রতিদিনকার কর্মকান্ড বাধাগ্রস্ত হবে। এছাড়া সড়কপথ বন্ধও হয়ে যেতে পারে। কানসাস এবং ইন্ডিয়ানাতে প্রায় ৮ ইঞ্চি পরিমাণ তুষারপাত হতে পারে। অপরদিকে মধ্যপশ্চিমাঞ্চলে তুষারঝড় হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আবহাওয়াবিদ রায়ান মাও বলেছেন, "ঝড়ের কারণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। বলা যায় বিপর্যয় ঘটবে। এটি এমন ঝড় যা আমরা গত কয়েক বছর দেখিনি।" এটি এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভারি তুষারপাত ও শীতলতম তাপমাত্রা বয়ে নিয়ে আসতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। মিসিসিপি ও ফ্লোরিডাসহ যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশ তীব্র ঠান্ডায় অভ্যস্থ না হওয়ায় সেখানে মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে; জানিয়েছে বিবিসি। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এই চরম আবহাওয়া তৈরি হচ্ছে মেরু অঞ্চলের ঘূর্ণিবাত্যার কারণে। এটি ঠান্ডা বাতাসের একটি এলাকা যেটি আর্কটিকের চারপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক এন্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলেছে, "কিছু অংশের জন্য এটি এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভারি তুষারপাত হতে পারে।" অ্যাকুওয়েদারের পূর্বাভাষকারী ড্যান ডেপডউইন বলেন, "এটি ২০১১ এর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে শীতল জানুয়ারি বয়ে আনতে পারে। তাপমাত্রা ঐতিহাসিক গড়ের নীচে নেমে গিয়ে সপ্তাহ ধরে বজায় থাকতে পারে।" এই নিম্ন তাপমাত্রা পূর্ব উপকূলেও থাকবে, যেখানে রোববার সন্ধ্যার মধ্যে ঝড়টি পৌঁছে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এনডবিস্নউএসের তথ্য অনুযায়ী, "রোববারের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে প্রাত্যহিক জীবনে উলেস্নখযোগ্য বিঘ্ন ঘটবে আর পরিস্থিতি গাড়ি চালানোর জন্য অসম্ভব ও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এবং সবকিছু বন্ধ হয়ে যেতে পারে।" কানসাস ও ইন্ডিয়ানার কিছু অংশে অন্তত আট ইঞ্চি (২০ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার) তুষার দেখা যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপশ্চিমাঞ্চলে প্রবল তুষারঝড় হতে পারে। মিজৌরি, ইলিনয় এবং কেন্টাকি ও ভার্জিনিয়ার বিশাল এলাকাজুড়ে একইসঙ্গে তুষার ও বৃষ্টিপাত এবং জমাট বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, ঝড়টি পূর্ব দিকে এগিয়ে যাওয়ার পর লাখ লাখ আমেরিকান রেকর্ড নিম্ন তাপমাত্রা দেখবে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির পাশপাশি বাল্টিমোর ও ফিলাডেলফিয়ার মতো শহরগুলো রোববার থেকে সোমবার পর্যন্ত তুষার ও বরফময় পরিস্থিতি থাকবে ধরে নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে। রোববার আরকানস, লুইজিয়ানা ও মিসিসিপিসহ যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের কিছু অংশ মারাত্মক বজ্রঝড়ের মুখোমুখি হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। সৌখিন আবহাওয়াবিদ রায়ান মাউয়ি বলেছেন, "ব্যাপক বিশৃঙ্খলা হতে যাচ্ছে, সম্ভাব্য বিপর্যয়। এমন কিছু যা আমরা অনেকদিন দেখিনি।"

এদিকে তুষারপাতে ঢেকে গেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর। বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিভিন্ন মাত্রার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। স্কটল্যান্ডের বিশাল অংশ, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, ওয়েলস এবং পূর্ব ইংল্যান্ডে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জাতীয় রেল সংস্থা আজকের আবহাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে জানিয়েছে, এমন আবহাওয়ায় অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে ভুলবেন না। ভ্রমণের আগে আবহাওয়ার পরিস্থিতি যাচাই করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। তুষারপাতের কারণে সাধারণ জীবন-যাপন বিপর্যস্ত হচ্ছে।

বার্মিংহাম বিমানবন্দরে তুষার পরিষ্কার এবং নিরাপত্তার কারণে সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আজও বিমানবন্দরের পরিষেবা বন্ধ থাকতে পারে। তুষারপাতের কারণে বেশ কিছু বিমানবন্দর তাদের রানওয়ে বন্ধ রেখেছে। ম্যানচেষ্টার বিমানবন্দর জানিয়েছে, ভারী তুষারপাতের কারণে তাদের রানওয়ে সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ থাকবে। এদিকে লিভারপুল জন লেনন বিমানবন্দর সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে জানিয়েছে, তুষারপাতের কারণে তাদের রানওয়ে সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ থাকবে। তবে বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু থাকবে। রানওয়ে পরিষ্কারের জন্য কাজ চলছে বলেও জানানো হয়।

উত্তরাঞ্চলে রাতভর ভারী তুষারপাত হয়েছে এবং ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের বেশিরভাগ অংশেই জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ ওয়েলসে তুষারপাতের পর বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। রোববার ভোরে উত্তর ওয়েলস, উত্তর মিডল্যান্ডস এবং সমগ্র উত্তর ইংল্যান্ডজুড়েই ভারী তুষারপাত হয়েছে। লিডস এবং ইয়র্কসহ অনেক শহরে বর্তমানে প্রায় ৫ সেন্টিমিটার তুষারপাত হয়েছে। শুক্রবার রাতে সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছে স্কটল্যান্ডের লোচ গস্নাসকারনচে। সেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে। অপরদিকে দক্ষিণ ইংল্যান্ডে তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

\হসূত্র: বিবিসি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে