যুক্তরাষ্ট্রে তুষারঝড়ের কারণে সাতটি অঙ্গরাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। সবমিলিয়ে দেশটির ৩০টি অঙ্গরাজ্যের ছয় কোটির বেশি মানুষ দুর্যোগে পড়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।অনেক স্থানে তাপমাত্রা রেকর্ড মাত্রায় কমে গেছে। উড়োজাহাজ চলাচলও ব্যাহত হয়েছে। ২ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে এবং আরও কমপক্ষে দেড় হাজার ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। সোমবার পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি ও সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
এদিকে কয়েক দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে এটা সবচেয়ে ভয়াবহ তুষারঝড় হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে দেশটির আবহাওয়া বিভাগ। কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের স্কুল ও সরকারি অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তুষারঝড়টি আর্কটিক থেকে এখন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন কর্তৃপক্ষ এই ঝড় মোকাবিলায় জারি করেছে "উচ্চ সতর্কতা"। লাখো মার্কিনি এই শক্তিশালী ঝড় মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে এই ঝড় সবচেয়ে বেশি তুষারপাত এবং হিম শীতল তাপমাত্রাসহ "তুষার ঝড়ের পরিস্থিতি" বয়ে আনতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের উদ্ধৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে, ঝড়টি যুক্তরাষ্ট্রের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়েছে এবং আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে। ঝড়ের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সোমবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের অর্ধেক এলাকাকে আর্কটিক বাতাসের গভীর বরফের মধ্যে নিমজ্জিত করবে বিশাল এই ঝড়। এই ঝড়ে ৬ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। কেন্দ্রীয় সমভূমি থেকে মধ্য-আটলান্টিক পর্যন্ত অঙ্গরাজ্যগুলোতে বরফ, তুষার এবং ঝড়-বৃষ্টির সতর্কবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া সংস্থা। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পশ্চিম কানসাস থেকে উপকূলীয় অঙ্গরাজ্য মেরিল্যান্ড, ডেলাওয়্যার এবং ভার্জিনিয়া পর্যন্ত শীতকালীন ঝড়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর সতর্ক করে বলেছে, উত্তর-পূর্ব কানসাস থেকে উত্তর-মধ্য মিসৌরি পর্যন্ত অঞ্চলগুলো গত "এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভারী তুষারপাতের" মুখোমুখি হতে পারে।
এদিকে একটি ট্র্যাকিং ওয়েবসাইটের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ঝড়ের প্রভাবে এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ২ হাজারেরও বেশি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে এবং অন্তত দেড় হাজার ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে বহির্গামী ফ্লাইটের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কানসাস সিটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সেখানে ৮৬ শতাংশ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। আর্কটিক থেকে হিমশীতল আবহাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে নেমে আসছে আর তাতে চরম আবহাওয়া পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।।
যুক্তরাষ্ট্রের ৩০টিরও বেশি অঙ্গরাজ্যের অন্তত ছয় কোটি মানুষ বিশাল একটি তুষার ঝড়ের কবলে পড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় কানসাস, কেন্টাকি, আরকনস, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, ভার্জিনিয়া, মিজৌরিতে পুরোপুরি এবং নিউ জার্সির কিছু অংশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। রোববার এসব অঙ্গরাজ্যসহ তুষার ঝড় যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল অংশে তুষার, বরফ ও জমে যাওয়ার মতো তাপমাত্রা নিয়ে হাজির হয়। এই তুষার ঝড়ের কারণে এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভারি তুষারপাত ও নিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই চরম আবহাওয়া তৈরি হয়েছে উত্তর মেরু অঞ্চলের ঘূর্ণিবাত্যার কারণে। এই ঘূর্ণিবাত্যা চরম শীতল বাতাসের একটি এলাকা যেটি আর্কটিক মহাসাগরের চারপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে। সেখান থেকেই হিমশীতল আবহাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে নেমে আসছে আর তাতে চরম আবহাওয়া পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। হাজার হাজার ফ্লাইট ছাড়তে বিলম্ব হচ্ছে অথবা সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রায় ২০০০ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে বলে ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটঅ্যাওয়ারের তথ্যের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি। তুষার ঝড়ের কারণে বহু সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। স্কুলও বন্ধ রাখা হয়েছে। ওয়াইওমিংয়ের একটি পর্বতে হিমবাহের মধ্য এক স্কি চালকের মৃত্যু হয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, ঝড়টি যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টিক উপকূলের মাঝ বরাবর এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির পাশাপাশি বাল্টিমোর ও ফিলাডেলফিয়ার মতো শহরগুলো ভারি তুষার ও প্রবল ঠান্ডা মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সোমবার মার্কিন কংগ্রেসের অধিবেশন বসার কথা রয়েছে। এই অধিবেশনে রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া কথা। কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার রিপাবলিকান মাইক জনসন রোববার ফক্স নিউজকে বলেছেন, আইনপ্রণেতাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আবহাওয়া বাধা হতে পারবে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সিভিল সার্ভিস পরিচালনাকারী সরকারি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস অফিস অব পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট (ওপিএম) ঘোষণা করেছে, ওই দিন রাজধানীর ফেডারেল দপ্তরগুলো বন্ধ থাকবে।
এই তুষার ঝড়ের সবচেয়ে বড় ঝাপটা যে অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে যাবে তার মধ্যে কানসান ও মিজৌরিও আছে। রোববার বিকালের মধ্যে এই দুই অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন এলাকা ২৫ সেন্টিমিটার (১০ ইঞ্চি) তুষারের নিচে চাপা পড়েছিল। কানসাস নগরীর কর্মকর্তা ব্রায়ান প্ল্যাট এই ঝড়টিকে শহরটির দেখা 'অন্যতম প্রবল ঐতিহাসিক ঝড়' বলে মন্তব্য করেছেন। এনবিসি নিউজকে তিনি বলেন, "আমরা ৩২ বছরেও ১০ ইঞ্চির বেশি তুষার পড়তে দেখিনি।" এদিকে যুক্তরাজ্যে তুষারঝড়ে ব্যাহত হচ্ছে জনজীবন। একের পর এক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে।