তিব্বতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজারেরও বেশি বাড়ি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির তিংরি প্রদেশ। ৭ দশমিক ১ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সেখানেই। আর উৎপত্তিস্থলের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে তিনটি শহর ও ২৭টি গ্রাম। আর জনসংখ্যা প্রায় সাত হাজার। ভূমিকম্পের ধাক্কা কাটাতে না কাটতেই এই অঞ্চলে নতুন উদ্বেগ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। উৎপত্তিস্থল থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার উত্তরে রয়েছে এভারেস্ট পর্বতমালা। তিংরিকে বলা হয় এভারেস্টের উত্তরের প্রবেশদ্বার। মঙ্গলবার রাতে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা মাইনাস ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ধ্বংসস্তূপে ভরা শহরে ঘরছাড়া মানুষজন কোথায় আশ্রয় নেবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে। শক্তিশালী এ ভূমিকম্পে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে তিব্বত।
নেপাল সীমান্তবর্তী এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের সময়েও তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে ছিল। সকালে মাইনাস ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল তাপমাত্রা। এই পরিস্থিতির মধ্যেই চীনা সেনাবাহিনী তিব্বতের ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। ভূমিকম্পের পর বেশ কিছুভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা একটি ভিডিও প্রকাশ করছে। তারা জানিয়েছে, ওই ভিডিওটি তিব্বতের লাৎসে শহরের কাছে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, রাস্তার ধারে দোকান ভেঙে পড়েছে। ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে রাস্তার ওপর। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ও তার আশেপাশের অঞ্চলে অসংখ্য বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। মাউন্ট এভারেস্টের পাদদেশে এই অঞ্চলটি পর্বতারোহীদের অন্যতম পছন্দের জায়গা। মঙ্গলবারের ভূমিকম্পে এই অঞ্চলে এখন পর্যন্ত ৯৫ জনের মৃতু্যর খবর মিলেছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১৩০ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় আট লাখ মানুষ। বার্তাসংস্থা এপি জানিয়েছে, প্রথম জোরালো ভূমিকম্পের পরের তিন ঘণ্টায় প্রায় ৫০ বার কম্পন (আফটারশক) অনুভূত হয়েছে এই অঞ্চলে। যার জেরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং মৃতু্যর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এভারেস্টের কাছে এই হিমশীতল পরিবেশে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ সরবরাহ শুরু করেছে চীনা প্রশাসন। কাপড়ের তাঁবু, কম্বল ও এই ধরনের শীতল জায়গায় বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিলি করা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায়। চীনের সরকারি বার্তাসংস্থা শিনহুয়া জানিয়েছে, স্থানীয় দমকলকর্মী ও উদ্ধারকারী মিলিয়ে দেড় হাজারেরও বেশিজনের একটি দলকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পাঠানো হয়েছে।
এদিকে চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তিব্বতের হিমালয়ের পাদদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে হয়েছে ১২৬ জন। এছাড়া ১৮৮ জন আহত হয়েছেন। চীনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ৪০০ জনের বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং ৩০ হাজারের বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বুধবার ভূমিকম্প-পরবর্তী দ্বিতীয় দিনে উদ্ধারকাজ অব্যাহত রয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। মঙ্গলবারের ৬.৮ মাত্রার এই ভূমিকম্পটি সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে তিব্বত অঞ্চলে সবচেয়ে শক্তিশালী। ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল তিব্বতের টিংরি এলাকায়, যা পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার উত্তরে। এই ভূমিকম্পে নেপাল, ভুটান ও ভারতের ভবনগুলোতেও কম্পন অনুভূত হয়। গত পাঁচ বছরে ভূমিকম্পকেন্দ্রের ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৩ বা তার বেশি মাত্রার ২৯টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা