সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২
লস অ্যাঞ্জেলেসে জরুরি অবস্থা

যুক্তরাষ্ট্রে একপ্রান্তে তুষার ঝড় অন্যদিকে ভয়ঙ্কর দাবানল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
যুক্তরাষ্ট্রে একপ্রান্তে তুষার ঝড় অন্যদিকে ভয়ঙ্কর দাবানল
যুক্তরাষ্ট্রে একপ্রান্তে তুষার ঝড় অন্যদিকে ভয়ঙ্কর দাবানল

যুক্তরাষ্ট্রের একপ্রান্তে যখন শীতকালীন তুষারঝড়ে বিপর্যস্ত জনজীবন, তখন অন্যপ্রান্তে তান্ডব চালাচ্ছে ভয়ংকর দাবানল। কোথাও মানুষকে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে। আবার কোথাও বলা হচ্ছে, প্রাণ বাঁচাতে হলে দ্রম্নত ঘর ছাড়ুন। এমন বিপর্যয়কর পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন এলাকায় ঘোষণা করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। যুক্তরাষ্ট্রে এই তুষারপাত ও দাবানলের প্রভাব জনজীবনে ব্যাপক বিপর্যয় ডেকে এনেছে। এ অবস্থায় জনগণকে সতর্ক থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প, বাণিজ্য ও আর্থিক কর্মকান্ডের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র লস অ্যাঞ্জেলেস। বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই দাবানলে ইতোমধ্যেই ১২০০ একরের কেশি এলাকা পুড়ে গেছে। এছাড়া আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে বহু বাড়িঘর ও গাড়িও। পরিস্থিতি বিবেচনায় ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ১৩ হাজার ভবন আগুনের হুমকির মুখে রয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ১০ একর থেকে শুরু হয়ে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ১২০০ একরের বেশি এলাকায় দাবানল ছড়িয়ে পড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। ফায়ার চিফ ক্রিস্টিন ক্রাউলি বলেছেন, ৩০ হাজারেরও বেশি লোককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং ১৩ হাজার ভবন আগুনে পুড়ে যাওয়ার হুমকির মধ্যে রয়েছে। দাবানলের ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, প্যাসিফিক প্যালিসেডেস এলাকায় আগুন জ্বলছে এবং বাসিন্দারা আগুন থেকে বাঁচতে তাদের গাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলে পুড়ে গেছে সিঙ্গাপুরের আয়তনের সমান এলাকা ভয়াবহ দাবানলের জেরে বলিভিয়ায় জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল প্রায় সাড়ে ১০টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং ঘণ্টায় ৫০ মাইল (৮০ কিলোমিটার) গতির দমকা বাতাস এবং অবিশ্বাস্যভাবে শুষ্ক অবস্থার কারণে আগুন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি ফায়ার চিফ অ্যান্থনি মারোন বলেছেন, প্যাসিফিক প্যালিসেডস এখনও "বিপদমুক্ত নয়"। ক্যালিফোর্নিয়ায় লাখ লাখ মানুষ রেড অ্যালার্টের অধীনে রয়েছে, যার অর্থ সেখানে আগুন ছড়িয়ে পড়ার চরম বিপদ রয়েছে। এমন অবস্থায় দাবানল আরও বিস্তৃত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাতে এই আগুন আরও তীব্র হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা।

এদিকে ওয়াশিংটন পোস্টের খবর অনুসারে, বুধবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে একটি নতুন তুষারঝড় শুরু হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে, যা শনিবার পর্যন্ত ২০টিরও বেশি রাজ্যে শীতল আবহাওয়া বয়ে আনতে পারে। এসময় এমন কিছু এলাকায় তুষারপাত হতে পারে, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি। আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবারের মধ্যে টেক্সাস, নিউ মেক্সিকো, ওকলাহোমা, কানসাস, কলোরাডো, নর্থ লুইজিয়ানা, আরকানসাস এবং মিসৌরিতে কয়েক ইঞ্চি তুষারপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এতে যাতায়াত ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি পেস্নন চলাচলে বিলম্ব ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের আশঙ্কা রয়েছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শুক্রবার থেকে মিসিসিপি, আলাবামা, জর্জিয়া, টেনেসি, কেন্টাকি এবং ক্যারোলিনাসে তুষারপাত আরও বাড়তে পারে। সপ্তাহান্তে তুষারঝড় আঘাত হানতে পারে মধ্য-অ্যাটলান্টিক ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও। এই ঝড় শেষ হলেও তীব্র ঠান্ডা অব্যাহত থাকবে, যার ফলে দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে তাপমাত্রা এক অংকে নেমে আসতে পারে।

\হএদিকে, বিবিসির খবরে জানা যায়, লস অ্যাঞ্জেলেসের প্যাসিফিক পালিসেডস এলাকায় দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়ছে ভয়ংকর দাবানল। স্থানীয় সময় সোমবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই আগুন ইেেতামমধ্যে ১ হাজার ২৬০ একর এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম জানিয়েছেন, আগুনে বহু বাড়ি এবং স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে ১০ হাজার বাড়ি ও ১৩ হাজার ভবন ঝুঁকির মুখে রয়েছে। দাবানলের হাত থেকে বাঁচতে প্রায় ৩০ হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেস ফায়ার ডিপার্টমেন্ট এরই মধ্যে তাদের সব সদস্যকে ডিউটিতে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতি ঘণ্টায় ৪০ মাইল বেগে প্রবাহিত হওয়া বাতাস এবং শুষ্ক আবহাওয়া দাবানল নিয়ন্ত্রণকে আরও কঠিন করে তুলছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (এনডবিস্নউএস) জানিয়েছে, বাতাস আরও তীব্র হওয়ার কারণে রাতভর আগুনের বিস্তার অব্যাহত থাকতে পারে। এই সময়ে বিদু্যৎ বিপর্যয়, গাছ পড়ে যাওয়া এবং সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়বে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে