বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে বারবার হুমকি দিয়ে আসছেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি দ্বীপটির দখল নিতে সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি প্রয়োগের হুমকিও দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। এর প্রতিক্রিয়ায় বুধবার ইউরোপের দেশ ফ্রান্স বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) অন্য দেশগুলোকে তার সার্বভৌম সীমান্ত আক্রমণ করার অনুমতি দেবে না।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-নোয়েল ব্যারট বলেছেন, এতে স্পষ্টতই কোনো প্রশ্ন নেই যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোকে তার সার্বভৌম সীমান্তে আক্রমণ করতে দেবে না, তারা যেই হোক না কেন। আমি বিশ্বাস করি না যে যুক্তরাষ্ট্র সুবিশাল আর্কটিক দ্বীপে আক্রমণ করতে চলেছে। তবে যাই-ই হোক ই ইউয়ের ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের ডেনমার্ক বারবার স্পষ্ট করেছে, গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়। এটি শুধু তার বাসিন্দাদের। এমনকি, গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতার জন্য চাপ দেওয়া দ্বীপটির প্রধানমন্ত্রী মুট এগেডেও স্পষ্ট করে বলেছেন, অঞ্চলটি কোনোভাবেই বিক্রির জন্য নয়। এর আগে মঙ্গলবার ফ্লোরিডায় নিজের রিসোর্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, পানামা খাল ও গ্রিনল্যান্ড দখলে তিনি সামরিক বা অর্থনৈতিক শক্তি প্রয়োগ করবেন না, তার নিশ্চয়তা কি দিতে পারবেন? জবাবে ট্রাম্প বলেন, না, আমি এখনই আপনাকে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছি না। তবে আমি বলতে পারি, আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য তাদের প্রয়োজন। গ্রিনল্যান্ড ও পানামা খাল উভয়কেই যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ডেনমার্ককে যদি গ্রিনল্যান্ড বিক্রি করতে রাজি না হয়, তাহলে তাদের ওপর শুল্ক আরোপ করা হবে।
গ্রিনল্যান্ডের জনসংখ্যা মাত্র ৫৭ হাজার। তবে এটি বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ ও আর্কটিক অঞ্চলে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় স্পেস ফ্যাসিলিটি রয়েছে এবং সেখানে পৃথিবীর বিরল কিছু পদার্থ ও উপাদানের বৃহত্তম মজুত রয়েছে, যা ব্যাটারি ও হাই-টেক ডিভাইস তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বল প্রয়োগ করে হলেও ডেনমার্কের স্বশাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ড নিয়ন্ত্রণে নিতে চাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোক্কে রাসমুসেন। বুধবার তিনি বলেন, অধিবাসীরা চাইলে গ্রিনল্যান্ড স্বাধীন হতে পারে, কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্য হবে না। ট্রাম্পের মন্তব্যের পর এরই মধ্যে কোপেনহেগেনে ডেনমার্কের রাজার সঙ্গে গ্রিনল্যান্ডের নেতার বৈঠকও হয়েছে। ট্রাম্প আগামী ২০ জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেবেন। তার আগে থেকেই গ্রিনল্যান্ড দখলে নিতে কড়া হুমকি-ধামকি দেওয়া শুরু করেছেন তিনি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড। ৬০০ বছর ধরে এটি ডেনমার্কের অংশ হয়ে আছে। ৫৭,০০০ জনসংখ্যার দেশ গ্রিনল্যান্ডে আছে স্বায়ত্তশাসন। দ্বীপদেশটির প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য ডেনর্মার্ক থেকে স্বাধীনতা পাওয়া। ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাসমুসেন বলেন, "আমরা পুরোপুরি স্বীকার করি যে, গ্রিনল্যান্ডের নিজস্ব উচ্চাকাঙ্খা আছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হলে গ্রিনল্যান্ড স্বাধীন হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল স্টেট হওয়ার উচ্চাকাঙ্খা আদৌ নেই।"
রাসমুসেন অবশ্য সাংবাদিকদেরকে এও বলেছেন যে, 'চীন ও রাশিয়ার তৎপরতার কারণে আর্কটিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়ে যাওয়াটা বাস্তব। আমি মনে করি না যে আমরা পররাষ্ট্রনীতির সংকটে আছি। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ নিশ্চিত করতে আমরা কীভাবে আরও সহযোগিতা করতে পারি তা নিয়ে তাদের সঙ্গে সংলাপের জন্য আমরা প্রস্তুত।