বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২
কাতারে গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা অব্যাহত

নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ হাজার

নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগে চুক্তি সম্পন্ন করার তাগিদ বাড়ছে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ হাজার
ফিলিস্তিনি শিশুকে কোলে নিয়ে বিষণ্ন এক স্বজন

ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান হামাস-ইসরাইল সংঘাতে যুদ্ধবিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও আরব মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তবে এখনও চুক্তি স্বাক্ষর সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার এই আলোচনায় যুক্ত ফিলিস্তিনি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বিষয়টি জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসর গাজায় ১৫ মাসের সংঘাত থামানো এবং হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে একটি চুক্তি অর্জনে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগে এই চুক্তি সম্পন্ন করার তাগিদ বাড়ছে। ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ২০ জানুয়ারির অভিষেকের আগে যদি জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া হয়, তবে এর 'মারাত্মক পরিণতি' হবে। একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, আলোচনা চলমান, থমকে যায়নি। বরং এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুতর প্রচেষ্টা। মধ্যস্থতাকারীরা প্রতিটি শব্দ ও বিশদ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে।

পুরোনো বিভেদগুলো কমানোর ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে, তবে চুক্তি এখনও হয়নি। ইসরাইল মঙ্গলবার জানিয়েছে, তারা জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার চুক্তি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে হামাসের বাধা এতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। কাতারে আলোচনার মাঝেই ইসরাইলি সামরিক বাহিনী গাজার বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায়। বৃহস্পতিবারের এই হামলায় ১৭ জন নিহত হন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭০-এ দাঁড়িয়েছে। গাজার সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির জাবালিয়ায় একটি বাড়িতে ইসরাইলি হামলায় আটজন নিহত হন। কেন্দ্রীয় গাজায় আরও দুইটি বাড়িতে বিমান হামলায় এক বাবা ও তার তিন সন্তানসহ নয়জনের মৃতু্য হয়। অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৪৬ হাজার ছাড়িয়েছে। তাছাড়া আহত হয়েছেন এক লাখ নয় হাজার ৩৭৮ জন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। নতুন বছরে অর্থাৎ ২০২৫ সালের প্রথম নয় দিনে ইসরায়েলের হামলায় অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে অন্তত ৪৯০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। প্রতিদিনিই সেখানে প্রাণঘাতী হামলা চালাচ্ছে দখলদার বাহিনী। এতে লাফিয়ে বাড়ছে নিহতের সংখ্যা। হতাহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। গাজার পাশাপাশি পশ্চিমতীরেও নিয়মিত বিরতিতে অভিযান পরিচালানা করছে ইসরাইলি বাহিনী। অব্যাহত রয়েছে ধরপাকড়।

ইসরাইল ও লেবাননের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ইয়েমেনের সঙ্গে উত্তেজনা থামেনি। কারণ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরাইলের ভূখন্ডে হামলা চালাচ্ছে হুথি বিদ্রোহীরা। অন্যদিকের হুথিদের লাগাম টেনে ধরতে ইয়েমেনে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এদিকে পোপ ফ্রান্সিস গাজার মানবিক পরিস্থিতিকে অত্যন্ত গুরুতর ও লজ্জাজনক বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, শিশুরা যখন ঠান্ডায় মারা যাচ্ছে কারণ হাসপাতাল ধ্বংস করা হয়েছে বা বিদু্যৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে, আমরা তা মেনে নিতে পারি না। ইসরাইল দাবি করেছে, তারা গাজায় মানবিক ত্রাণ সরবরাহে কোনও বাধা দিচ্ছে না। বরং গত সপ্তাহে শত শত ট্রাক খাদ্য, পানি, ওষুধ ও আশ্রয়ের সামগ্রী সরবরাহ করেছে। গাজায় ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী গোষ্ঠী হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ও আরব মধ্যস্থতাকারীরা কিছুটা অগ্রগতি অর্জন অর্জন করলেও তা একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। আলোচনা সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা একথা জানিয়েছেন। কাতারে আলোচনা চলছে। এর মধ্যেই গাজাজুড়ে ইসরাইলী সেনাবাহিনীর হামলায় বৃহস্পতিবার ১৭ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের চিকিৎসাকর্মীরা।

এই মৃতু্য নিয়ে গাজায় গত ২৪ ঘন্টায় ইসরায়েলের হামলায় মোট ৭০ ফিলিস্তিনির মৃতু্য হয়েছে বলে জানিয়েছে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা এই প্রাণহানি আর ধ্বংসযজ্ঞ থামাতে এবং হামাসের হাতে বন্দি বাদবাকী জিম্মিদের মুক্ত করতে কাতার, যুক্তরাষ্ট্র এবং মিশর একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছার চেষ্টা করছে।

গত মঙ্গলবার ইসরাইল জানাং, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছতে পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে এক্ষেত্রে তারা হামাসের কাছ থেকে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে