যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ছড়ানো দাবানল তৃতীয় দিনেও নিয়ন্ত্রণহীন। দাবানলে প্রায় ১০ হাজার বাড়িঘর ও অন্যান্য স্থাপনা পুড়ে ছাই হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তথা বিশ্বের অন্যতম অভিজাত শহর লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রাসাদোপম বাড়িগুলো এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সবচেয়ে বড় দাবানলটি জ্বলছে প্যালিসেডস অঞ্চলে। দ্বিতীয় বৃহত্তম দাবানলটি জ্বলছে ইটন অঞ্চলে। সানসেট, হার্স্ট ও লিডিয়া এলাকাতেও এখনো আগুন জ্বলছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পরিস্থিতিকে 'যুদ্ধের দৃশ্য'র সঙ্গে তুলনা করে মৃতু্যর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের সর্বগ্রাসী দাবানলে অন্তত ১১ জনের মৃতু্য হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজন পালিসেইডস এলাকায় আর বাকী ছয় জন ইটনের আগুনের মারা গেছেন।এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আরও জোরালো বাতাসের বয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে, ফলে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় দাবানলের পরিস্থিতি সঙ্কটজনক, এমন ইঙ্গিতবাহী 'রেড ফ্ল্যাগ' সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, দাবানলে যাদের মৃতু্য হয়েছে প্রচলিত পদ্ধতিতে তাদের শনাক্ত করা সম্ভব না হলে এ প্রক্রিয়ায় কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। যাদের মৃতু্য হয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন গণমাধ্যমকে প্রিয়জন হারানোর পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন। সবথেকে ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে প্যাসিফিক পেলিসেডস এলাকা। ৫ হাজার ৩০০ এরও বেশি ভবন পুড়ে ছাই হয়েছে। পরিস্থিতি খুব দ্রম্নত পাল্টাচ্ছে। সর্বগ্রাসী দাবানলের আগুনে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস যেন নরককুন্ড। শুষ্ক আবহাওয়ার সঙ্গে তীব্র বাতাসের বেগের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। হাজার হাজার একর এলাকা জুড়ে পুড়ছে ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। তাদের সঙ্গে অন্যান্য কাউন্টিগুলো থেকেও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা যোগ দিচ্ছেন। কিন্তু এখনও দাবানলগুলো দ্রম্নত ছড়াচ্ছে। সবচেয়ে বেশি পুড়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসের প্যাসিফিক পেলিসেডস এলাকা। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক তারকা সেখানে থাকেন। তারাও কোনোমতে এক কাপড়ে ঘরবাড়ি ছেড়েছেন। ৫ হাজার ৩০০ এরও বেশি ভবন সেখানে পুড়ে ছাই হয়েছে। পরিস্থিতি খুব দ্রম্নত পাল্টাচ্ছে।
এদিকে ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলের নিয়ন্ত্রণে পানির সমস্যার বিষয়টির স্বাধীন তদন্ত চেয়েছেন সেখানকার গভর্নর। দাবানল আক্রান্ত প্যাসিফিক প্যালিসেইড ও ইটন এলাকায় রাত্রিকালীন কারফিউ দেওয়া হয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসে পুলিশ প্রধান ম্যাকডনেল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, শুধু অগ্নিনির্বাপণ ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলোকেই অনুমতি দেওয়া হবে। এছাড়া যেসব অধিবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছেড়ে গেছেন বিপজ্জনক পরিস্থিতির কারণে এখনই তাদের না ফেরার অনুরোধ করেছেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, পুলিশ ওইসব এলাকা থেকে কিছু ব্যক্তিকে আটক করলেও লুটপাটের জন্য কাউকে আটক করা হয়নি। ওদিকে বাতাস আরও তীব্র হওয়ার পূর্বাভাস থাকায় আগুন আবারও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অনেকে। লস অ্যাঞ্জেলস সিটি মেয়র কারেস ব্যস শহরের অধিবাসীদের তার কর্মকর্তাদের ওপর আস্থা রাখার অনুরোধ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা যতটা সম্ভব পরিদর্শন করবেন ও অধিবাসীদের সঙ্গে কথা বলবেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্যালিফোর্নিয়া সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি দাবানলের ঘটনা রাজনীতিকরণ না করার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। নিউসন বলেন, আমাদের অবশ্যই কোনো মানবিক বিপর্যয়কে রাজনীতিকরণ করা উচিত নয়। কিংবা ভুল তথ্য ছড়ানোও উচিত না। তিনি বলেন, হাজার হাজার আমেরিকান তাদের ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তুচু্যত হয়েছেন ও তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। পরিস্থিতির দ্রম্নত উত্তরণ ও পুনর্গঠনে আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টাই তারা ডিজার্ভ করে। লস অ্যাঞ্জেলেস ফায়ার ডিপার্টমেন্টের একজন ক্যাপ্টেন অ্যাডাম ভ্যান গার্পেন বলেছেন, দমকল বাহিনীর কিছু কর্মীর কাছে পর্যাপ্ত পানি নেই।
লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলকে যুদ্ধ পরিস্থিতি হিসেবে আখ্যায়িত করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন এই দাবানলের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের ভূমিকার কথাও উলেস্নখ করেছেন তিনি। বাইডেন বলেন, আসন্ন প্রেসিডেন্টের টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রত্যেক বিষয়ে আমরা কাজ করছি এবং আশা করছি তারাও একইভাবে কাজ চালিয়ে যাবেন। হতাহতের বিষয়ে জো বাইডেন বলেন, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তাছাড়া সেখানের বাড়িঘরে লুটপাটের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাইডেন। লস অ্যাঞ্জেলেসের পাঁচটি কাউন্টিতে জ্বলতে থাকা এ দাবানল নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। দমকা বাতাসে আগুন নেভানোর চেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে। বুধবার হলিউড হিলসে শুরু হওয়া এই দাবানলের শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে হলিউডের নামী-দামী তারকারাও।
সূত্র: সিএনএন, বিবিসি