পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় ইসলামপন্থিগোষ্ঠীর হামলায় সেনাবাহিনীর অন্তত ২৭ সৈন্য নিহত হয়েছেন। দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলের বোর্নো রাজ্যের একটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলার এই ঘটনা ঘটেছে। রোববার নাইজেরিয়ার সেনাবাহিনীর দু'টি সূত্রের বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সেনা ঘাঁটিতে আত্মঘাতী হামলায় একজন কমান্ডার-সহ অন্তত ২৭ সৈন্য নিহত হয়েছেন। এই হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন।
স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠী বোকো হারাম ও পশ্চিম আফ্রিকা প্রদেশে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সহযোগী আইএসডবিস্নউএপির যোদ্ধারা বোর্নো রাজ্য থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। অতীতে বিভিন্ন সময়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও বেসামরিক লোকজনের ওপর এই জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যরা হামলা চালিয়েছেন। আইএসডবিস্নউএপির যোদ্ধাদের হামলায় শত শত মানুষ নিহত ও আরও হাজার হাজার মানুষ বাস্তু্যচুত হয়েছেন। শুক্রবার আইএসডবিস্নউএপির যোদ্ধারা ট্রাকে করে এসে বোর্নো রাজ্যের ম্যালাম-ফাতোরি শহরে সেনাবাহিনীর ১৪৯ ব্যাটালিয়নে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালান। দুই সৈন্যও সেখানকার বাসিন্দারা বলেছেন, নাইজার সীমান্তের প্রবেশদ্বারের এই ঘাঁটিতে আত্মঘাতী বিস্ফোরণের পাশাপাশি বন্দুক থেকে গুলিও চালিয়েছেন আইএসডবিস্নউএপির যোদ্ধারা। হামলায় বেঁচে যাওয়া একজন সৈন্য টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, জঙ্গিরা সর্বত্র বুলেট বর্ষণ করেছে। ঘাঁটিতে অবস্থানরত সৈন্যরা আকস্মিক এই হামলার ঘটনায় বিস্মিত হয়ে যান। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে ওই সৈন্য বলেন, আমরা হামলা প্রতিরোধের অনেক চেষ্টা করেছি এবং তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা বন্দুকযুদ্ধের পর আমরা পিছু হটেছি। আমাদের কমান্ডিং অফিসারকেও হত্যা করা হয়েছে। তবে হামলার বিষয়ে মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলেও নাইজেরিয়ার সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। শহর ছেড়ে যাওয়া বাসিন্দারা বলেছেন, শনিবার গভীর রাতে মালাম-ফাতোরিতে কয়েকজন জঙ্গিকে দেখা গেছে। সেনাবাহিনীকে সহায়তার জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত স্থানীয় একটি মিলিশিয়া গোষ্ঠীর সদস্য মালাকাকা বুকার বলেছেন, ''জঙ্গিরা ভবনগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে। কিছু বাসিন্দা শহর থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন।'' বোকো হারাম ২০০৯ সালে পশ্চিমা শিক্ষার বিরুদ্ধে লড়াই এবং তাদের ইসলামিক আইনের সংস্করণ চাপিয়ে দেওয়ার জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল। জাতিসংঘের মতে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রায় ৩৫ হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন এবং ২০ লাখেরও বেশি বাস্তুচু্যত হয়েছেন। নাইজেরিয়ায় বছরের পর বছর ধরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে লড়াই ও অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে বোকো হারাম ও আইএসডবিস্নউএপি দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে চলতি বছরের শুরু থেকেই বোর্নো রাজ্যে এই দুই গোষ্ঠীর হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কয়েক ডজন কৃষক ও জেলে নিহত হয়েছেন।