শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ও বঙ্গবন্ধু

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নেতাজির কিছু কিছু রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মিল রয়েছে। সেজন্য বাংলা ও বাঙালির স্বাধীনতার জন্য যেমন জনপ্রিয় স্স্নোগান ছিল জয়বাংলা। ঠিক তেমনি ভারতের স্বাধীনতার জন্য নেতাজি সৃষ্ট জনপ্রিয় স্স্নোগান জয়হিন্দ। এখনো স্বাধীন বাংলাদেশে যেভাবে জয়বাংলা জয়ধ্বনি স্স্নোগান বাজে। ঠিক তেমনি সর্বভারতের যেখানেই নেতাজির নাম বা কথা উচ্চারিত হয় সেখানেই জয়হিন্দ ততটাই জনপ্রিয়।
ড. মো. হুমায়ুন কবীর
  ৩০ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

২৩ জানুয়ারি, ২০২১ ছিল নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মদিন। ১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি তিনি ওড়িশা রাজ্যের কটক শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আইনজীবী বাবা জানকীনাথ বসু এবং মা প্রভাবতী দেবীর চৌদ্দ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন নবম। তিনি খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তার মেধার সাক্ষর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রেখেছেন। ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে একটি স্বাধীনচেতা মানসিকতা বিরাজ করত। তাইতো তিনি বিপস্নবী হয়েছিলেন। জন্ম থেকে অন্তর্ধান পর্যন্ত পুরো সময়টাই ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন তিনি। এজন্য রাজনীতিতে জড়ানোর শেষ ২০ বছরে কমপক্ষে এগারো বার কারাবরণ করতে হয়েছে তাকে।

তার জীবনী পাঠ করলে জানা যায়, তিনি ছিলেন অন্যরকম বিপস্নবী নেতা। তিনি মনে করতেন সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সম্ভব নয়। সেজন্য তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সে রকম বিপস্নব সংগঠিত করার জন্য সর্বদা কাজ করে গেছেন। তার জীবন ও কর্ম নিয়ে যতই জানা যায়, ততই আশ্চর্য হতে হয়। কারণ তিনি ব্রিটেনে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে তাদের কাছ থেকেই স্বাধীকার আদায়ের জন্য চেষ্টা করে গেছেন সর্বদা। তিনি ভারতীয় কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন এবং বিপস্নবী মনোভাবের কারণে গান্ধীজীর সঙ্গে তার মতবিরোধ দেখা দিলে তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করে সর্বভারতীয় ফরোয়ার্ড বস্নক গঠন করেন।

\হনেতাজীর এসব রাজনৈতিক সংগ্রামের কাহিনি কমবেশি সবারই জানা। এসব নিয়ে সর্বদাই চর্চা হয়ে থাকে। কিন্তু এবার যেহেতু তার জন্মদিনটি ভারতে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হতে যাচ্ছে সেটিকে স্বাগত, অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতাস্বরূপ উৎসর্গীকৃত আমার এ লেখা। এবারের ২৩ জানুয়ারি তার জন্মের ১২৪তম বর্ষ এবং ১২৫তম জন্মদিন। উপমহাদেশ তথা বাংলার মানুষের মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী এ স্বরাজ নেতাকে তার জন্মদিনের শুভেচ্ছা। অভিনন্দন ভারত সরকারকে সব ভেদাভেদ ভুলে সঠিক সময়ে সঠিক নেতৃত্বকে যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। তার নেতৃত্ব গুণাবলির কারণে তাকে নেতাজি উপাধি দেওয়া হয়েছিল।

\হমিডিয়ায় জানা গেছে, ২৩ জানুয়ারি, ২০২১ থেকে ২৩ জানুয়ারি, ২০২২ পর্যন্ত পুরো বছরজুড়ে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মের ১২৫তম বার্ষিকী পালন করার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ভারত সরকার। তারই অংশ হিসেবে নেতাজির সম্মানে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তা পালন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বর্তমান নরেন্দ্র মোদির সরকার। সেজন্য দেশটির খোদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে সদস্য রেখে এবং দেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রী, ক্রিকেটার, চলচ্চিত্রকার, শিল্পী প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে ৮৫ সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক কমিটি গঠন করেছে।

\হগত ৯ জানুয়ারি, ২০২১ তারিখে অখন্ড ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মের ১২৫ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে গঠিত এ কমিটিতে আরো রয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য, রাজ্যপাল, সাবেক ও বর্তমান অনেক মুখ্যমন্ত্রীরা। আমাদের জন্য বিষয়টি অত্যন্ত আনন্দ ও গর্বের এইজন্য যে, আন্তর্জাতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ কমিটিতে রয়েছেন একমাত্র বাংলাদেশের অন্যতম নেতাজি গবেষক, সংগঠক ও সাংবাদিক মো. আশরাফুল ইসলাম। তিনি দীর্ঘদিন যাবত দেশে-বিদেশে নেতাজিকে নিয়ে গবেষণা করে আজকের দিনে তার প্রয়োজনীয়তা থাকার সপক্ষে জনমত গঠনে কাজ করে যাচ্ছেন। মো. আশরাফুল ইসলাম ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর নেতাজি সুভাষ আইডিওলজি (আইসিএনএসআই) এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও ঢাকা থেকে প্রকাশিত জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বহুমাত্রিক.কম-এর প্রধান সম্পাদক।

\হতিনি এ সংস্থার হয়ে ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ থেকে বিগত তিন বছর যাবত নিজ উদ্যোগেই আন্তর্জাতিকভাবে বিশিষ্ট ব্যক্তিগণের উপস্থিতিতে ঢাকায় নেতাজির জন্মবার্ষিকী পালন করে যাচ্ছেন। তারই সূত্রধরে তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক গঠিত কমিটিতে স্থান করে নেওয়ায় এবার ২০২১ সালে তা আরো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল। এখানে প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা দরকার যে, মো. আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে নেতাজি গবেষক হিসেবে আরেকজন মানুষের নাম না বললেই নয়। তিনিও একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও শিক্ষক। তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন পশ্চিমবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা আলিপুর বার্তার প্রধান সম্পাদক ও বহুমাত্রিক.কম-এর উপদেষ্টা সম্পাদক ড. জয়ন্ত চৌধুরী।

\হবাংলাদেশের মো. আশরাফুল ইসলাম এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ড. জয়ন্ত চৌধুরী- এ দুজনে মিলে দীর্ঘদিন যাবত একত্রে নেতাজির বিভিন্ন অনাবিষ্কৃত বিষয় জনসমক্ষে আনার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন। এটিই আমাদের জন্য গর্বের। কারণ কোনো আগ্রহ ও কাজ কখনো বৃথা যায় না। তারা নেতাজিকে নিয়ে এমনভাবে নিরলস কাজ করেছেন বলেই হয়তো আজ এমন একটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কমিটিতে স্থান করে নিয়েছেন। এখন তাদের সাফল্য অর্জনের পালা। এবারো ২৩ জানুয়ারি দিলিস্নতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নেতাজির জন্মদিনের শুভ অনুষ্ঠান। আমরা এর সাফল্য কামনা করি। তার পরদিন অর্থাৎ ২৪ জানুয়ারি, ২০২১ তারিখে বাংলাদেশের ঢাকাতে সিরডাপ মিলনায়তনে আশরাফুল ইসলামের আয়োজনে বাংলাদেশের মাননীয় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মুহমুদসহ আরো অনেক সম্মানিত ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নেতাজির জন্মদিনের অনুষ্ঠান।

\হনেতাজির সঙ্গে অদ্ভুতভাবে বাংলাদেশের জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের অনেক মিল লক্ষণীয়। দুজনেই সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে কাজ করেছেন। দুজনেরই জীবন সংগ্রাম শুধু দেশের জনগণের কল্যাণ নিয়ে। বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ আর নেতাজি ১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি। বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনের অনেকটা সময় কারাগারে কাটিয়েছেন, নেতাজিও অনেকাংশে তাই। পার্থক্য শুধু বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে তার নেতৃত্বে স্বাধীন করে সেখানে কিছুদিন স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করে তারপর সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হয়েছিলেন। কিন্তু নেতাজি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখলেও তিনি ভারতবর্ষের পূর্ণ স্বাধীনতা দেখে যেতে পারেননি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যেই অর্থাৎ স্বাধীনতার আগেই তার অন্তর্ধান ঘটেছে।

\হজন্মবার্ষিকী পালনের ক্ষেত্রেও এ দুনেতার মধ্যে কিছুটা মিল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কারণ ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ হিসেবে পালনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারিকালে যথাযোগ্য মর্যাদায় আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালিত হতে পারেনি বিধায় তা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে এসে মহান বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর এ বছরেই আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হচ্ছে অখন্ড বাংলার অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীনতার মহানায়ক নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী পদার্পণের অনুষ্ঠানমালা।

\হএ অনুষ্ঠানটি আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালনের মধ্য দিয়ে আরো একটি বিষয় খুব স্পষ্ট হয়ে গেল যে সত্যিকার অর্থেই কীর্তিমানের মৃতু্য নেই। কারণ নেতাজি অনুসারি কিংবা নেতাজি গবেষকরা মনে করেন, যেহেতু নেতাজির শারীরিকভাবে মৃতু্যর বিষয়টি এখনো প্রমাণিত নয়, কাজেই তিনি এখনো মরেণনি। তিনি জীবিত রয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে যদিওবা এটি বাস্তব সম্মত নয়, তবু এটিই তাদের বিশ্বাস। কারণ নেতাজির মৃতু্যর বিষয়টি এখানো ঘোর রহস্যাবৃত।

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নেতাজির কিছু কিছু রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মিল রয়েছে। সেজন্য বাংলা ও বাঙালির স্বাধীনতার জন্য যেমন জনপ্রিয় স্স্নোগান ছিল জয়বাংলা। ঠিক তেমনি ভারতের স্বাধীনতার জন্য নেতাজি সৃষ্ট জনপ্রিয় স্স্নোগান জয়হিন্দ। এখনো স্বাধীন বাংলাদেশে যেভাবে জয়বাংলা জয়ধ্বনি স্স্নোগান বাজে। ঠিক তেমনি সর্বভারতের যেখানেই নেতাজির নাম বা কথা উচ্চারিত হয় সেখানেই জয়হিন্দ ততটাই জনপ্রিয়।

কাজেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর মুজিববর্ষে কোটি কণ্ঠে উচ্চারিত জয়বাংলা যেমন সুমধুর ধ্বনিতে বেজে উঠে। তেমনিভাবে নেতাজির ১২৫তম জন্মদিনে জয়হিন্দ ধ্বনিতে মুখরিত হোক কোটি কোটি মানুষের প্রাণস্পন্দন। শুভ জন্মদিন। জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

ড. মো. হুমায়ুন কবীর : ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে