১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর বাংলাদেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে প্রতি বছর ২১ অক্টোবর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করা হয়। যদিও এটা নামে দিবস, কাজে কোনো কিছুই নয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক, শিক্ষার্থীদেরও এই দিবসটি সম্পর্কে অবগত নন। এটা একদম অপ্রিয় একটি সত্য। বলতে দ্বিধা নেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ছোট করে দেখার মানসিকতা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে খোদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরই বেশি। এবার আসা- যাক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়? অনেকের অনেক ধরনের মতামত, অনেক ধরনের যুক্তি আছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়াশোনা করেন, তারা নিজেরাও জানেনা। অনেকেই আবার বলে বসে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নাকি প্রাইভেটের মতোই। আপনার যদি নূ্যনতম জ্ঞান থাকে তাহলে আপনি গুগলে উইকিপিডিয়া দেখলেই হবে। সেখানে আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সার্চ দিয়ে উইকিপিডিয়া দেখবেন, আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সার্চ দিয়ে উইকিপিডিয়া দেখবেন। তাহলেই এটা নিয়ে আর তর্ক করতে হবে না আপনার। আপনার আশপাশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদেরও সহজে বুঝিয়ে দিতে পারবেন আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ও একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। আপনারা যে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নামে জানেন সেগুলো এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অধিভুক্ত। সবার আরও একটা বিষয় জেনে রাখা উচিত এ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। আরও সহজভাবে আপনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উইকিপিডিয়ায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ধরন দেখলে বুঝবেন। সেখানে স্পষ্টভাবে উলেস্নখ আছে এটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। তবুও আমরা আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রমে, বিভিন্ন সময় দেখি দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে আলাদা করে ফেলার চেষ্টা করা হয়। আমি যতটুকু বুঝতে পারি, এই বিষয়টা অনেকেই জানেনা। এবার আসা-যাক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিস্টেম নিয়ে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটি কথা সবাই বলতে পারে সেটা হচ্ছে ক্যাম্পাস। এক ছাদের নিচে সব শিক্ষার্থীরা দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। নেই কোনো একাডেমিক ক্যাম্পাস। মূলত পুরো বাংলাদেশেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। যেহেতু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলনায় অনেক অনেক বেশি সুতরাং চাইলেও একসঙ্গে হওয়া অসম্ভব। তবে বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান অন্য যে কোনো সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় কোনো অংশে কম নয়। একটি দিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আরও বেশি স্বচ্ছ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার প্রশ্ন কে করে এটা কোনো ছাত্রছাত্রী জানেনা। তাদের খাতা কে দেখবে এটা কেউই জানেনা। কিন্তু অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যিনি ক্লাস নেন, তিনিই খাতা দেখেন, তিনিই হলের গার্ড দেন। অন্ততপক্ষে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলো তাদের নিজ ক্যাম্পাসেই হয়। এ ক্ষেত্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বচ্ছতা অনেকটাই প্রশংসিত। এক কলেজের পরীক্ষার হল পড়ে অন্য কলেজে। কোন কলেজে পড়বে এটাও পরীক্ষার আগে জানেনা শিক্ষার্থীরা। বোর্ড পরীক্ষার মতোই পরীক্ষা দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অথচ এরপরেও আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে চলে আমাদের কথিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যাজয়ীরা। সেই সঙ্গে যে কোনো প্রতিষ্ঠানেও মেধার বাইরেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম শুনে মূল্যায়ন করে আজকাল। আমাদের দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেমন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমকক্ষতার চোখে দেখে না, তেমনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজে অধ্যয়নরত দেশের বৃহৎ শিক্ষার্থীগোষ্ঠী নিজেরাও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমীহ করে চলে। তারা ভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাদের চেয়ে অনেক মেধাবী। ভর্তি-পরীক্ষায় হয়তো ০.০২৫ অথবা ০.৫ পয়েন্টে পিছিয়ে থাকার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে এক ধরনের হীনম্মন্যতায় ভোগে। অথচ এরা জানে না এরা কতটা মেধাবী। অন্যদিকে এই মেধাবীদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করছে না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অন্যতম দাবি হচ্ছে সমাবর্তন। যা অন্যসব বিশ্ববিদ্যালয় করলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারছে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ বছরে একটি মাত্র সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাও ২৫ বছর পর প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ সালে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ববিদ্যালয়টির আচার্য্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ খানের উপস্থিতিতে এই সমাবর্তনটি হয়েছিল। এরপর আবারও নিশ্চুপ বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষরা। তিন বছর সমাপ্ত হয়ে গেল এখনো দ্বিতীয় সমাবর্তনের দেখা পেল না শিক্ষার্থীরা।