বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৭ বাংলাদেশির মৃতু্য উদ্বেগজনক ও মর্মান্তিক

নতুনধারা
  ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে শরীরের তাপমাত্রা কমে ভূমধ্যসাগরে নৌকায় ৭ বাংলাদেশি মারা গেছেন। ২৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার ইতালির অ্যাগ্রিজেনটো শহরের প্রসিকিউটর লুইগি প্যাট্রোনাজ্জিও এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিবেদনে প্রকাশ, জনবসতিহীন দ্বীপ ল্যাম্পিওনের উপকূল থেকে প্রায় ২৯ কিলোমিটার দূরে ল্যাম্পেডুসার কাছে সারা রাত নৌকাটিকে ভাসতে দেখেন কোস্ট গার্ডের সদস্যরা। এরপর তারা উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। নৌকাটিতে ২৮০ জন অভিবাসী ছিল। যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশ ও মিশরের নাগরিক। হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাছে ইউরোপে প্রবেশের জন্য ইতালি হচ্ছে প্রধান রুট। আফ্রিকার দেশ লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে তারা ইতালির বিভিন্ন দ্বীপে প্রবেশের চেষ্টা করেন। গত কয়েক মাস ধরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ইউরোপ যাওয়ার প্রবণতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এ বিপজ্জনক পথে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত এক হাজার ৭৫১ জন অভিবাসী নৌকার মাধ্যমে ইতালির বিভিন্ন বন্দরে পৌঁছেছেন। ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কয়েক দিনে সাতশজনের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয়েছে। লিবিয়ার উপকূল থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে এসব অভিবাসনপ্রত্যাশী ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন। অনেক দিন থেকেই সাগরপথে মানব পাচার হচ্ছে। মানব পাচার হচ্ছে নানাভাবে। এখন মানব পাচারের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে দেশের সাধারণ মানুষ। প্রায়ই তারা ট্রলারে করে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছে। এর একাংশ সাগরে ডুবে প্রাণও হারাচ্ছে অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার মানব পাচারের বিরুদ্ধে জিরো-টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। এরপরও যে মানব পাচার থেমে নেই।

যারা মানব পাচারের শিকার, তারা মনে করেন, কোনোভাবে একবার ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়ায় যেতে পারলেই সব সমস্যার সমাধান। মাসে কমপক্ষে লাখ টাকা উপার্জন করা যাবে এমন মরীচিকার পেছনে ছুটতে গিয়ে সাগর পথে বিদেশে পাড়ি জামাতে প্রাণান্ত হয়ে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারাচ্ছেন লোকজন। এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আর এই মানব পাচারকারীদের মূল লক্ষ্য এখন দেশের বেকার তরুণরা। দেশের সাধারণ মানুষ এর ভয়াবহ শিকার। উন্নত জীবনের আশায় সাগর পাড়ি দেওয়ার মতো ঝুঁকি নিচ্ছেন তারা। দালালরা তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ফাঁদে ফেলছে। মানব পাচার রোধ করা না গেলে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।

জল-স্থল ও আকাশপথে প্রতিদিন মানব পাচার চলছে। মূলত জীবন ও জীবিকার কারণে, দেশে কর্মসংস্থানের অভাবে, দারিদ্র্যের পীড়নে মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। এসব মানুষের বেশির ভাগই প্রতারিত হচ্ছে, হচ্ছে সর্বস্বান্ত। পাশাপাশি নারী ও শিশু পাচারও বাড়ছে। অবৈধভাবে দেশের বাইরে যাওয়ায় বাংলাদেশের অনেক অভিবাসী মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছেন। চলাচলে সীমাবদ্ধতা, ঋণের চক্রে পড়া, জোরপূর্বক শ্রম, যৌন নির্যাতন, জোরপূর্বক বিবাহ এবং দাসত্বের মতো শোষণমূলক আচরণের শিকার হচ্ছেন অভিবাসীরা। দরিদ্র ও প্রান্তিক নারী ও পুরুষ এবং শিশুরাই মানব পাচারকারীদের লক্ষ্যে পরিণত হচ্ছেন। কাজেই কোস্ট গার্ড, পুলিশ ও বিজিবিসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও নজরদারি বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনে সীমান্তের সক্ষমতা বাড়িয়ে, মানব পাচার বন্ধ করতে হবে। এমন মৃতু্য অত্যন্ত মর্মান্তিক ও উদ্বেগজনক। এর পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে