শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন বছরের প্রত্যাশা

আশার কথা, এত সমস্যা সংকটের মধ্যেও দেশ এগিয়েছে অনেক। মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করতে প্রবৃদ্ধিসহ আন্তর্জাতিক নানান সূচকে এগিয়েছি আমরা। স্বাস্থ্য শিক্ষায় উন্নতি হয়েছে, দারিদ্র্য হ্রাসসহ নানা ক্ষেত্রে এশিয়ার বহু দেশের শীর্ষে অবস্থান আমাদের। এ ছাড়া মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সাফল্য এসেছে। এ বছরের দুটো বিরল ঘটনা পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু। এটা দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশের প্রতি মনোযোগ বাড়িয়েছে।
তারাপদ আচার্য্য
  ০১ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

আরও একটি নতুন বছর আমাদের দ্বারে এসেছে। স্বপ্ন ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রতি বছর পহেলা জানুয়ারি আমাদের মধ্যে আসে। আমরা আলোড়িত উদ্দীপিত হই। আনন্দ-উলস্নাসের পাশাপাশি আমরা অঙ্গীকার করি, নতুন বছরে নতুনভাবে চলতে। নতুনভাবে জীবনযাপন করতে, নতুন স্বপ্ন ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গীকার এর মধ্যে প্রধান হয়ে ওঠে। ব্যক্তিচরিত্র বদলেরও অঙ্গীকার করি আমরা। এসবই বিগত বছরের ভুলত্রম্নটি শুধরে নিয়ে নতুনভাবে, স্বচ্ছ ও সঠিকভাবে পথচলার অঙ্গীকার। পুরনোকে বিদায় দিয়ে নতুনকে বরণ করে নেওয়াই মানুষের সহজাত প্রবণতা। তবে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে বছরটি কেমন গেল তার হিসাব-নিকাশ সবাই করে থাকেন। করে থাকেন জাতীয়ভাবে ও ব্যক্তিগতভাবে। আমাদের জাতীয়জীবনে ২০২২ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। নানা ক্ষেত্রে উত্থান-পতনের মধ্যদিয়ে পার হয়েছে বছরটি।

বিদায়ী বছর বিশ্বজুড়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দামামা বাজিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে আমাদের জাতীয় জীবনে। ২০২২ সালেও ধারাবাহিকভাবে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, সহিংসতা, নৃশংসতা, নির্মমতা ও রক্তাক্ত ঘটনা কমবেশি প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে দেশবাসীকে। নানা ঘটন-অঘটন, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, চড়াই-উতরাই, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আনন্দ-বেদনার সাক্ষী হয়ে কালের গর্ভে সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেল গত বছরটি। বিদায়ী বছর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠনের বছর। উচ্চ পণ্যমূল্যের বছর। আর্থিক সংকটের বছর। বিশ্বকাপ ফুটবলের বছর। বছর শেষে সরকার বিরোধী আন্দোলন কিছুটা চাঙা হয়েছিল, আবার ঝিমিয়ে পড়েছে।

আশার কথা, এত সমস্যা সঙ্কটের মধ্যেও দেশ এগিয়েছে অনেক। মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করতে প্রবৃদ্ধিসহ আন্তর্জাতিক নানান সূচকে এগিয়েছি আমরা। স্বাস্থ্য শিক্ষায় উন্নতি হয়েছে, দারিদ্র্য হ্রাসসহ নানা ক্ষেত্রে এশিয়ার বহু দেশের শীর্ষে অবস্থান আমাদের। এ ছাড়া মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সাফল্য এসেছে। এ বছরের দুটো বিরল ঘটনা পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলের যাত্রা শুরু। এটা দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মহলের বাংলাদেশের প্রতি মনোযোগ বাড়িয়েছে।

প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা দেশের কয়েকজন গুণী ব্যক্তিকে হারিয়েছি, যা গভীর বেদনাবহ। তবে সব কিছু ছাপিয়ে উন্নয়নের মহাসোপানে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নববর্ষের এই সূচনালগ্নে সবার প্রত্যাশা জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে সফলতা আসুক। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সবার চেষ্টা ছিল এগিয়ে যাওয়ার। নতুনের মধ্যেই নিহিত থাকে অমিত সম্ভাবনা। আর সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে সুযোগ করে দেবে নতুন বছর। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা গর্বিত ও আশাবাদী। এই দেশ একদিন উন্নত দেশের কাতারে যাবে। এমন স্বপ্ন দেশদরদি জনগণ দেখে, দেখে সরকারও।

প্রত্যাশা করা, স্বপ্ন দেখা আর তা বাস্তবে রূপ দেওয়া এক কথা নয়। কঠিন সাধনার মাধ্যমে সত্যের মুখোমুখি হওয়া এবং তাকে সফল পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া সহজ ব্যাপার নয়। পরিকল্পনা পরিশ্রম, গঠনমূলক চিন্তা ছাড়া যেমন ব্যক্তি, পরিবার, সমাজের উন্নয়ন সম্ভব নয়, একইভাবে সম্ভব নয় রাষ্ট্রের উন্নয়নও। রাষ্ট্র তা যত ক্ষুদ্রই হোক তার চরিত্র হতে হয় গণমুখী তথা জনকল্যাণমূলক। বাংলাদেশ সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে।

তবে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, আইনের শাসন, উন্নত যোগাযোগ ও ট্রাফিকব্যবস্থা, নাগরিক সেবা ও জননিরাপত্তা, চিকিৎসাসেবা, শিক্ষা পরিস্থিতি, ভোটাধিকার বা নির্বাচনী ব্যবস্থা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নগরায়ণ, ব্যাংক ব্যবস্থাপনাসহ আর্থিক খাত, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও বাণিজ্য ঘাটতি, নিত্যপণ্যের বাজার, শেয়ারবাজার এমনিভাবে রাষ্ট্রের যে সেক্টরেই দৃষ্টি দেওয়া যাক না কেন, সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার। এ ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। আগামী দিনগুলো সমৃদ্ধি বয়ে আনুক জাতির জীবনে। নতুন বছরে দেশের প্রতিটি মানুষের জীবন সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক নতুনভাবে সরকারের কর্মোদ্দীপনায়, দেশ ও জাতির সুনাম আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আরও বিস্তার লাভ করুক এ প্রত্যাশা আমাদের। আমরা চাই সরকার জনগণের প্রত্যাশা, আবেগ ও অনুভূতিকে যথাযথ মূল্যায়ন করে দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে। দেশ ও জাতির মঙ্গলে সবার ভিতরে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত দেশপ্রেম জাগ্রত হোক, খুলে যাক সম্ভাবনার নতুন দুয়ার- নতুন বছরে এ প্রত্যাশাই করছি।

তারাপদ আচার্য্য : প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে