শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার শঙ্কা

কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
নতুনধারা
  ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

করোনা পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত হয়েছে বিশ্ব, মানুষের জীবনযাপনের ক্ষেত্রে নেমে এসেছিল নেতিবাচক প্রভাব, সৃষ্টি হয়েছিল অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। কিন্তু বিশ্ব যখন করোনা পরিস্থিতি মোকবিলা করে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে প্রায়, তখন রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ নতুন করে ভাবিয়ে তোলে। কেননা, এই যুদ্ধের প্রভাব পড়ে সারা বিশ্বেই। আর সম্প্রতি আবারও বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার শঙ্কার বিষয়টি উঠে এলো। প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেছেন, 'নতুন সম্ভাবনাকে সামনে নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বছর। অতীতকে পেছনে ফেলে রেখে নতুন উদ্যমে নববর্ষকে বরণ করে নিচ্ছেন সবাই। তবে ২০২৩ সাল বিশ্ব অর্থনীতির জন্য কঠিন বছর হতে চলেছে এবং বিশ্ব অর্থনীতির এক-তৃতীয়াংশ মন্দার মধ্যে পড়বে।

এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে এটাও উঠে এসেছে যে, আইএমএফ প্রধান জানিয়েছেন, ২০২৩ সালটি গত বছরের তুলনায় 'কঠিন' হবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ এবং চীন তাদের অর্থনীতিতে ধীরগতি দেখছে। অন্যদিকে, এটা আমলে নেওয়া জরুরি, ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা সতর্ক করেছেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন, ২০২৩ সালে শুরুতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। তার ভাষায়, আগামী কয়েক মাস, চীনের জন্য বেশ কঠিন হবে। বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির ওপরও এর প্রভাব নেতিবাচক হবে। আমরা বলতে চাই, যখন এই ধরনের শঙ্কা উঠে আসছে তখন সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সতর্কতা ও যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করা। এটাও এড়ানো যাবে না যে, আইএমএফ প্রধানের দাবি, বিশ্বের বেশির ভাগ অর্থনীতির জন্য ২০২৩ সালটি কঠিন বছর হতে চলেছে- কারণ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং চীনের মতো বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির প্রধান ইঞ্জিনগুলো দুর্বল অর্থনৈতিক কার্যকলাপের মুখে রয়েছে।

লক্ষণীয়, মূলত ইউক্রেনের যুদ্ধ, পণ্য-দ্রব্যের ক্রমবর্ধমান দাম, সুদের উচ্চহার এবং চীনে কোভিডের বিস্তর বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান ডেভিড ম্যালপাস। তিনি তখন জানিয়েছিলেন, ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের কারণে খাদ্য, জ্বালানি ও সারের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কীভাবে মন্দা এড়ানো যায়- সেই পথ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। আমরা মনে করি, যখন আবারও মন্দার শঙ্কার বিষয়টি সামনে আসছে তখন- এমন আশঙ্কাকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সঙ্গত কারণেই পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং তা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে বিশ্ব নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার; করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে যথাযথ বাস্তবায়নে উদ্যোগী হওয়া।

বলা দরকার, এর আগে গত অক্টোবরে ২০২৩-এর জন্য বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছিল আইএমএফ। আমরা মনে করি, সামগ্রিক এ পরিস্থিতি বিশ্ব নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে। এছাড়া এমন আশঙ্কাকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদেরও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দেশের সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে যে, ইউক্রেনের যুদ্ধ, পণ্য-দ্রব্যের ক্রমবর্ধমান দাম, সুদের উচ্চহার এবং চীনে কোভিডের বিস্তর বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলার কারণে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা কীভাবে মোকাবিলা করা যায়।

সর্বোপরি বলতে চাই, কোন বছর মোট উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় কতটা বাড়ল, সেই পরিমাণকে অর্থনীতির ভাষায় বলা হয় জিডিপি প্রবৃদ্ধি- যা শতকরা হারে প্রকাশ করা হয়। আর যখন কোনো বছর মোট উৎপাদন না বেড়ে কমে যায়, তখন সেটাকে বলা হয় অর্থনীতি 'সঙ্কুচিত' হয়েছে। তখন জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নেমে আসে শূন্যের নিচে। অর্থনীতির ওই দশাকেই 'মন্দা' বলে। ফলে যখন এই আশঙ্কা উঠে আসছে যে, ২০২৩ সাল বিশ্ব অর্থনীতির জন্য কঠিন বছর হতে চলেছে এবং বিশ্ব অর্থনীতির এক-তৃতীয়াংশ মন্দার মধ্যে পড়বে। তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে বিশ্ব নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্টরা কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে এমনটি প্রত্যাশিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে