শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুদের স্মার্টফোনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার বন্ধ করুন

নতুনধারা
  ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেট ব্যবহারের যেমন উপকারিতা আছে তেমনি অপকারিতাও আছে। তবে এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার দিন দিন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে আপনার সন্তান কোনো মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়ছে না তো? বিনোদনের জন্য তারা সঠিক নাকি ভুল পদ্ধতি অনুসরণ করছে ভেবে দেখেছেন? ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ডিভাইস যেমন- স্মার্ট ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ইত্যাদি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জড়িত। এসব ডিভাইসের মধ্যে বর্তমানে আমরা স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার দেখতে পাচ্ছি। বর্তমান সময়ে শিশুদের পড়াশোনা ও বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে তাদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে একটি শিশু শারীরিক ও মানসিক উভয় দিকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। শুধু শিশুদেরই নয়, বর্তমানে স্মার্টফোনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের সবাইকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে। স্মার্টফোনের ব্যবহার এমন এক মানুষিক ব্যাধি যার কোনো চিকিৎসা নেই। যেটা তিলে তিলে আমাদের জীবনকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।

বর্তমানে শিশু থেকে শুরু করে সব ধরনের বয়সের মানুষই স্মার্টফোনের জগতে আসক্ত হয়ে পড়েছে। স্মার্টফোনের দিকে যখন আমরা অধিক সময় তাকিয়ে থাকি তখন আমাদের চোখব্যথা, ঘাড়ব্যথা, মাথাব্যথা ও নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। এভাবে প্রতিনিয়ত চলতে থাকলে অন্যান্য শারীরিক অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে। এভাবে অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে প্রতিটি মানুষের শারীরিক পরিশ্রম কম হয় যা শরীরের মধ্যে অবসাদ নিয়ে আসে। বিশেষ করে এসব শারীরিক সমস্যা শিশুদের জন্য অধিক মারাত্মক। শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি আমরা মানুষিক সমস্যার মধ্যেও ঝুঁকে পড়ি।

মানুষিক সমস্যার প্রধান কারণের মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া। স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে একজন মানুষের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে যা অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়া রোগের সৃষ্টি করে। গবেষণায় দেখা গেছে একজন স্মার্টফোন ব্যবহারকারী অন্যদের তুলনায় অধিক দুশ্চিন্তায় ভোগে। দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নানান ব্যাপারে সৃষ্টি হীনম্মন্যতা যা একপর্যায়ে আত্মহত্যার মতো করুণ পর্যায়ে রূপ নেয়। বর্তমানে কিশোর-কিশোরীরা সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে পড়ছে তাদের শিক্ষাক্ষেত্রে। বিজ্ঞান বলে, আমাদের মেমোরিতে যে কোনো কিছু গেঁথে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন অণ্যাধিক পরিমাণে বিশ্রাম ও ঘুম। কিন্তু শিশু ও কিশোর, কিশোরীরা অতিরিক্ত ফোন ব্যবহারের ফলে কোনো কিছু মনে রাখার প্রবণতা হারিয়ে ফেলছে। তারা কোনো বিষয়ে মনোযোগী হতে পারে না। এসব সমস্যার কারণে তারা তাদের মেধার বিকাশ ঘটাতে পারছে না এবং সৃজনশীলতা হারিয়ে ফেলছে। যার ফলে নতুন কিছু উদ্ভাবনে তারা পিছিয়ে পড়ছে।

শুধু এসব সমস্যায় নয়, স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে কিশোর-কিশোরীরা তাদের পারিবারিক বন্ধন থেকে বিচু্যত হয়ে পড়ছে। পারিবারিক সদস্যদের পর্যাপ্ত সময় না দিয়ে তারা স্মার্টফোন নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করার ফলে পারিবারিক সহানুভূতির পরিবর্তে পারিবারিক বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টি করছে। এ ধরনের সমস্যায় তাদের পরিবারের সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উন্নতি এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য স্মার্টফোনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার বন্ধ করতে হবে অন্যথায় আমরা সুস্থ স্বাভাবিক সমাজ পাব না।

হাবিবা সুলতানা তানিয়া

শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ

সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে