শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শহর থেকে গ্রাম-গঞ্জ সবখানে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া

বতর্মান সরকারের সময়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদু্যৎ, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, ক্রীড়া, পরিবেশ, কৃষি, খাদ্য, টেলিযোগাযোগ, সংস্কৃতি, সামাজিক নিরাপত্তা, মানবসম্পদ উন্নয়ন এমন কোনো খাত নেই, যে খাতে অগ্রগতি সাধিত হয়নি।
মো. খসরু চৌধুরী
  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

পাতালরেলের যুগে পা দিয়েছে বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপস্নব সৃষ্টি করবে এ ব্যবস্থা। স্মার্ট বাংলাদেশের গণপরিবহণও হচ্ছে স্মার্ট। যোগাযোগ ব্যবস্থায় গোটা পৃথিবীর সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

বাঙালি আত্মপরিচয় অন্বেষণের মাস ফেব্রম্নয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম পাতালরেল নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করেছেন। এর মাধ্যমে পাতালরেলের যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ ঘটল। ২ ফেব্রম্নয়ারি বৃহস্পতিবার রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জে আয়োজিত এক সুধীসমাবেশ থেকে দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের উদ্বোধনে উৎসবী পরিবেশ সৃষ্টি হয় এলাকাজুড়ে। পাতালরেল নির্মাণকাজ ২০২৬ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দৈনিক ৮ লাখ যাত্রী এ পাতালরেল পথে যাতায়াতের সুযোগ পাবে। ৫২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার উড়াল ও পাতালরেল পথ। এর মধ্যে জাপানি ঋণ থাকবে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। দুটি রুটে ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-১ নির্মাণ হবে। এর মধ্যে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এ রুটে মাটির নিচ দিয়ে চলবে রেল। এটি ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রুট। এ রুটে স্টেশন হবে মোট ১২টি। এগুলো হচ্ছে- বিমানবন্দর, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩, খিলক্ষেত, যমুনা ফিউচার পার্ক, নতুনবাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, হাতিরঝিল, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ ও কমলাপুর। আর পূর্বাচল রুটে নতুনবাজার স্টেশনটি হবে পাতালে। এরপর নতুনবাজার থেকে পূর্বাচলের নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জ পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার হবে উড়ালপথে। এ রুটে আবার স্টেশন হবে ৯টি। এগুলো হচ্ছে- নতুনবাজার, যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা, পুলিশ অফিসার্স হাউসিং সোসাইটি, মাস্তুল, পূর্বাচল পশ্চিম, পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল পূর্ব, পূর্বাচল টার্মিনাল ও পিতলগঞ্জ ডিপো। পাতাল ও উড়াল মেট্রোরেল পরিবেশ দূষণ ছাড়াই যাত্রীদের যাতায়াত নিশ্চিত করবে। ঢাকার যানজট নিরসনেও অবদান রাখবে এ রেলপথ। ২০৩০ সালের মধ্যে আরও তিন রুটে মেট্রোরেল তৈরির কাজ সম্পন্ন হবে। ঢাকাকে বসবাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অবদান রাখবে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের কার্যক্রম।

জানা গেছে, এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের দুটো লাইন থাকবে। হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দর থেকে মাটির নিচ দিয়ে কমলাপুর পর্যন্ত এই পাতাল পথে রেলের স্টেশন থাকবে ১২টি। স্টেশনগুলোর নির্ধারিত জায়গাগুলোর মধ্যে রয়েছে- কমলাপুর, রাজারবাগ, মালিবাগ, রামপুরা, আফতাবনগর, বাড্ডা, উত্তর বাড্ডা, নতুনবাজার, নর্দা, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩ এবং বিমানবন্দর। আর এমআরটি লাইন-১ এর অপর অংশ নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত উড়ালপথে। স্টেশন থাকবে ৭টি। সেগুলোর নির্ধারিত জায়গা হলো- জোয়ার সাহারা, বোয়ালিয়া, মস্তুল, শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, পূর্বাচল সেন্ট্রাল, পূর্বাচল পূর্ব এবং পূর্বাচল টার্মিনাল। এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের দৈর্ঘ্য হবে ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বাকি ১২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা খরচ করবে বাংলাদেশ সরকার। ২০২৬ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আরও জানা গেছে, এমআরটি লাইন-১ চালু হলে এই রুটে প্রতিদিন ৮ লাখ যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর যেতে সময় লাগবে ২৪ দশমিক ৩০ মিনিট। আর নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল যেতে সময় লাগবে ২০ দশমিক ৩৫ মিনিট। এমআরটি লাইন-১ এর প্রতিটি পাতাল স্টেশন হবে তিনতলা। টিকিট কাউন্টার ও অন্যান্য সুবিধা থাকবে প্রথম বেজমেন্টে। পস্ন্যাটফরম থাকবে দ্বিতীয় বেজমেন্টে। আর উড়াল স্টেশনের টিকিট কাউন্টার এবং পস্ন্যাটফরম থাকবে তিনতলায়। যাত্রীদের চলাচলের জন্য উড়াল ও পাতাল- দুই পথের স্টেশনেই থাকবে লিফট, সিঁড়ি ও এস্কেলেটর সুবিধা। স্টেশনগুলোয় পর্যাপ্ত বাতাস ও অক্সিজেনের প্রবাহ ঠিক রাখতে থাকবে অতিরিক্ত ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা।

এদিকে, দেশের প্রথম মেট্রোরেল বা এমআরটি লাইন-৬ এর একাংশ ২৮ ডিসেম্বর চালু হয়েছে। উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলাচল করছে। এমআরটি-৬ দেশের প্রথম মেট্রোরেল এবং এমআরটি-১ দেশের প্রথম পাতাল রেল। ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ৬টি মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকায় ১৩০ কিলোমিটার শক্তিশালী মেট্রো নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চায় সরকার। তখন মেট্রো নেটওয়ার্কে প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখ যাত্রী চলাচল করতে পারবে।

পাতালরেল দেশবাসীকে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির নতুন যুগের সঙ্গে যুক্ত করবে। মানুষ কম খরচে শহরের বাইরে থাকতে পারবে এবং অফিস ও অন্যান্য কাজে সহজে ঢাকায় আসতে পারবে। প্রকল্প এলাকার বাণিজ্যিক উন্নয়ন ঘটবে এবং রুটের চারপাশের সুবিধাগুলো বাড়বে। ওইসব এলাকায় বসবাসকারী স্বল্প আয়ের লোকজন কম ভাড়ার জায়গায় চলে যাওয়ার গরজ অনুভব করবে এবং এতে মানুষ রাজধানীর শহরতলিতে বিকেন্দ্রীভূত হবে। ঢাকা এ মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম মেগা সিটি। বিশ্বের বৃহৎ নগরীগুলোর মধ্যে ঢাকা সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিসম্পন্ন। জনসংখ্যার তুলনায় সড়কের সংখ্যা কম হওয়ায় যানজট অনিবার্য হয়ে ওঠে। মেট্রোরেল, পাতালরেল সেই দুর্বিষহ অবস্থা সহনশীল পর্যায়ে আনতে সহায়তা করবে।

বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি এবং গণতন্ত্র বিকাশে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অবদান অপরিসীম ও অতুলনীয়। বাংলাদেশ, পৃথিবীর মানচিত্রে সত্যিই এক উদাহরণ। এই উদাহরণ অগ্রগতির উদাহরণ। অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক বেশির ভাগ সূচকে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেছে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশকে। বাংলাদেশ আজ বড় সম্ভাবনার দেশ। বাংলাদেশের উন্নয়নের এই অগ্রগতিকে একটি 'উন্নয়ন বিস্ময়' বলে আখ্যায়িত করা হয়।

আওয়ামী লীগ ব্যবসা ও উন্নয়নবান্ধব সরকার। ব্যবসা-বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। মানুষের মাথাপিছু আয়, উৎপাদন, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। দেশের শহর থেকে গ্রাম-গঞ্জ সবখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অথর্নীতি আজ চাঙ্গা হয়েছে। তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে আজ মডেল ইকোনমিক কান্ট্রি।

বতর্মান সরকারের সময়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদু্যৎ, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, ক্রীড়া, পরিবেশ, কৃষি, খাদ্য, টেলিযোগাযোগ, সংস্কৃতি, সামাজিক নিরাপত্তা, মানবসম্পদ উন্নয়ন এমন কোনো খাত নেই, যে খাতে অগ্রগতি সাধিত হয়নি।

\হশেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গত কয়েক বছরে দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, পুষ্টি, মাতৃত্ব এবং শিশু স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে- যা দেশের গন্ডি পেরিয়ে প্রশংসিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলেও।

মো. খসরু চৌধুরী :পরিচালক, বিজিএমইএ; শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে