বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খেলাপি ঋণ কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি

নতুনধারা
  ৩০ মে ২০২৩, ০০:০০

খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত উদ্বেগ যেন কিছুতেই নিরসন হচ্ছে না। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে যে, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ আবারও বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে উলেস্নখ্য, গত জানুয়ারি-মার্চ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। ফলে গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হালনাগাদ বিবরণীতে এ তথ্য উঠে এসেছে। আমরা বলতে চাই, সংশ্লিষ্টদের এটা আমলে নেওয়া দরকার, এর আগেও এমন বিষয় আলোচনায় এসেছে, বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো হু হু করে বাড়ছে খেলাপি ঋণ! এছাড়া নানা পদক্ষেপ গ্রহণ ও খেলাপিদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও কোনো ইতিবাচক ফল আসছে না এর আগে এমন খবরও উঠে এসেছিল। আমরা মনে করি, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ আবারও যখন বেড়েছে তখন তা অত্যন্ত উদ্বেগের। সঙ্গত কারণেই সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।

লক্ষণীয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশে আইনের কঠোর বাস্তবায়ন, নজরদারি বৃদ্ধি, শাস্তি প্রদান, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা না দেওয়া, প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিতে খেলাপি ঋণ আদায় এবং দুর্বল ব্যাংক বন্ধ বা অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করাসহ নানা উদ্যোগ নিয়ে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনলেও দেশে তা কেন বাড়ছে, এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি ভাবনার অবকাশ রাখে। এছাড়া আমলে নেওয়া দরকার, অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যারা খেলাপি হচ্ছে, তাদের কোনো শাস্তি এই দেশে হচ্ছে না। যেসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেশি, সেই ব্যাংকও কোনো শাস্তির আওতায় আসছে না। এ কারণে খেলাপির ঋণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। যা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা বলতে চাই, অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য আমলে নিন। এছাড়া এটাও বিবেচনায় নেওয়ার বিকল্প নেই যে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে- তা কোনোভাবেই এড়ানো যাবে না।

উলেস্নখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের যে তথ্য দিয়েছিল, তা নিরীক্ষিত ছিল না। তাই পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে কয়েকটি ব্যাংকের ঋণখেলাপি করে দেওয়া হয়। আবার কিছু ব্যাংকের ঋণখেলাপি করার উপযুক্ত হলেও তা নিয়মিত দেখানোর সুযোগ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে তাই মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়। জানা গেছে, গত বছরের মার্চে ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। গত মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে, খেলাপি ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে রয়েছে ৫৭ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা বা ১৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ ছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ৬৫ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ ঋণখেলাপি হয়েছে। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর তিন হাজার ৪২ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ ঋণখেলাপি। আর সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত তিনটি ব্যাংকের মোট ঋণের ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ বা ৪ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা বর্তমানে খেলাপি।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ব্যাংক খাতকে যে কোনো ধরনের অনিয়মের হাত থেকে রক্ষা করার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। আর ঋণখেলাপি নিয়ে যে কোনো সংকট সৃষ্টি হলে তার নিরসন অপরিহার্য। এমন আলোচনা সামনে এসেছে যে, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ বিষয়ে কোনো সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি নেই। বেসরকারি খাতে কিছু ঋণ আদায়কারী প্রতিষ্ঠান থাকলেও তা খুব একটা কার্যকর নয়। আর খেলাপি ঋণ কেনাবেচার ব্যবস্থা চালু থাকলেও তার নেতিবাচক প্রভাবই বেশি। আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি বিচার বিশ্লেষণ করে সুষ্ঠু পরিচালনা এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দেশের ব্যাংকিং খাতের উন্নয়ন জরুরি। বর্তমান বিশ্বে ব্যাংকিং খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, ফলে এই বিষয়টিকে সামনে রেখে এ খাতে যেন কোনো ধরনের অব্যবস্থাপনা বা অনিয়ম না হয় সেটিও রোধ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে