প্রাকৃতিক দুর্যোগকে রোধ করার কোনো উপায় নেই, কিন্তু এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না- যথাযথ প্রস্তুতি ও পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। প্রসঙ্গত বলা দরকার, ভূমিকম্প এমনই এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ- সুনির্দিষ্টভাবে দিনক্ষণ জানিয়ে এটা বলা যায় না, কখন হবে। আবার এই দুর্যোগকে ঠেকানোরও কোনো উপায় নেই। কিন্তু সতর্কতা বা প্রস্তুতি বলতে যা বোঝায়, তা হলো ক্ষয়ক্ষতি কতটা কমানো যায়। আর এই লক্ষ্যে কার্যকরী উদ্যোগ নিশ্চিত করার বিকল্প থাকতে পারে না।
বলা দরকার, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘন ঘন ছোট মাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে। আর ছোট এসব কম্পন স্বাভাবিকভাবেই শক্তি সঞ্চয় করছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে যে, এর ফলে সামনে বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা আছে। এতে জনমনে আতঙ্কেরও সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকার অদূরে মধুপুর ও সিলেটের ফাটল খুব বিপজ্জনক। এসব জায়গায় ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। প্রতি ১০০ বছর পর বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে। ১৮২২ এবং ১৯১৮ সালে মধুপুর ফল্টে বড় ভূমিকম্প হয়। এ হিসেবে আরেকটি বড় ভূমিকম্পের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ, হতে পারে তুরস্কের চেয়ে ভয়াবহ- এমনটি খবরে উঠে এসেছে।
আমলে নেওয়া দরকার, ভূতত্ত্ববিদরা বলছেন, চলতি মাসে তিন দফায় ভূমিকম্প নতুন উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বড় মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল সিলেট বা ময়মনসিংহ হলেও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাজধানী ঢাকা- যা সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। এছাড়া লক্ষণীয়, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আর্থ অবজারভেটরি সেন্টার বলছে, ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান এবং বার্মা তিনটি গতিশীল পেস্নটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। এ কারণে দেশে ভূ-গর্ভে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি সঞ্চয় করছে। ধারণা করা হচ্ছে, জমানো শক্তি সাড়ে ৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে রূপ নিতে পারে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি।
এটাও সংশ্লিষ্টদের এড়ানো যাবে না, বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে কী পরিণাম হবে ঢাকার। তুরস্কে যে ভূমিকম্প হয়েছে, এর চেয়ে ছোট অর্থাৎ রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলেও শুধু ভবন ধস নয়, ঢাকার অপরিকল্পিত বিদু্যৎ সঞ্চালন ও গ্যাসলাইন রাজধানীকে একটি অগ্নিকূপে পরিণত করতে পারে। হাজার হাজার ভবন ধসে পড়বে। এতে আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষের মৃতু্য হতে পারে। এছাড়া, তুরস্কের মতো বড় ধরনের ভূমিকম্প বাংলাদেশেও চোখ রাঙাচ্ছে। বুয়েটের বিভিন্ন সময়ে করা জরিপে দেখা যায়, ঢাকায় ১৩ লাখ, চট্টগ্রামে ৩ লাখ ও সিলেটে ১ লাখ বহুতল ভবন রয়েছে। এসব ভবনের ৭৫ শতাংশ হচ্ছে ছয়তলা বা তার চেয়েও উঁচু। ফলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে এই ভবনগুলো ও এর বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। স্মর্তব্য যে, সরকারের সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির সমীক্ষাতেই বলা হয়েছে, ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলে রাজধানীতে প্রায় ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়তে পারে। ফলে ভূমিকম্পের ঝুঁকি সংক্রান্ত আলোচনা এবং যেসব শঙ্কার বিষয়টি উঠে আসছে তা এড়ানোর যেমন সুযোগ নেই, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে উদ্যোগী হতে হবে। উলেস্নখ্য, রোববার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফের ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ৪ দশমিক ২ বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দুপুর ১২টা ৪৯ মিনিটে এই ভূমিকম্প হয়। আর এ নিয়ে এ মাসে তিনবার দেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বড় ভূমিকম্পের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ- এমন আশঙ্কা এর আগেও উঠে এসেছে। আর আবার যখন এটা আলোচনায় আসছে যে, বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ- তখন সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ এবং ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় সামগ্রিক প্রস্তুতির কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। এছাড়া ভূমিকম্পের আশঙ্কাকে মাথায় রেখে ভূমিকম্পের ব্যাপারে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করাও জরুরি। জনসচেতনতা বাড়ানো এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসহ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।